পিপলস ম্যাগাডিন ডেস্ক: ২০২০ সালে ভারতে মোট ১১৫ বার ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইয়েমেন। তারা গত বছর ইন্টারনেট বন্ধ করেছে মাত্র ৫ বার।
তবে মজা হল, গোটা ভারত জুড়ে একই রকম হারে ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা ঘটেনি।
এই ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। সংখ্যাটা অন্য রাজ্যগুলির থেকে ২৫০ শতাংশ বেশি। এবং এই প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আমস্টারডার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্রিস রুইগর্ক ২০১২ থেকে ২০২০ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এ কথা জানিয়েছেন।
গোটা দুনিয়ায় ইন্টারনেট স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করে এমন একটি মার্কিন অলাভজনক সংস্থার হয়ে এই গবেষণাটি করেছেন রুইগর্ক।
ওই বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে বিজেপি শাসিত কোনো জেলায় কোনো একটি মাসে ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ৩%, সেখানে অবিজেপি শাসিত জেলাগুলির ক্ষেত্রে তা ০.৮ শতাংশ।
ঘনঘন ইন্টারনেট বন্ধ হওয়া যেখানে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে, সেই জম্মু ও কাশ্মীরকে যদি বাদ দেওয়া যায়, তাহলেও পরিস্থিতি খুব একটা বদলাচ্ছে না. সেক্ষেত্রে বিজেপি শাসিত জেলাগুলোয় ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কমে দাঁড়াচ্ছে ১.৭ শতাংশ আর অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে তা হচ্ছে ০.৪ শতাংশ।
দক্ষিণ ভারতে বিজেপির শক্তি কম। দেখা গেছে ভারতের দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার ঘটনাও খুব কম। এটা কাকতালীয় কিনা, বলা মুশকিল।
অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে মাসে গড়ে ২.৭টি জেলায় ইন্টারনেট বন্ধ হয়। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সেই গড় সাড়ে তিন গুন বেড়ে দাঁড়ায় ৯.৬।
জম্মু-কাশ্মীরকে বাদ দিলে এক্ষেত্রেও পরিস্থিতি পালায় না। সংখ্যাগুলো কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১.৩৭ ও ৫.০৬।
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলৱিতে ইন্টারনেট বন্ধ করার তীব্রতাও বিএপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বেশি।
একই সঙ্গে অনেকগুলি জেলায় ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ঘটনাতেও এগিয়ে বিজেপি। অবিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সর্বাধিক ২২টি জেলায় একসঙ্গে ইন্টারনেট বন্ধ থেকেছে। ২০১৩ থেকে এ পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটেছে তিন বার বা তিন মাস।
অন্যদিকে বিজেপি শাসিত রাজ্যে একসঙ্গে ৪০টি জেলায় ইন্টারনেট বন্ধ থেকেছে ৬ মাস।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এই ঘটনা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছয়। সে সময় দেশ জুড়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছিল। সে সময় একসঙ্গে ৭৬টি জেলায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যদিও তার মধ্যে জম্মুকাশ্মীরের ১০টি জেলাও ছিল। যেগুলিতে আগে থেকেই ইন্টারনেট বন্ধ ছিল।
এই গবেষণাপত্রে সিদ্ধান্ত টানা হয়েছে, “বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে গণতন্ত্র কীভাবে পিছু হঠছে, তা এই পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায়”।