পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: হিরের জন্য বিখ্যাত পান্না অঞ্চলের কেন্দ্রস্থল মধ্য প্রদেশের ছত্তরপুর জেলা। জেলার বক্সা অরণ্যে ৩৭৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে হিরে খনির প্রকল্প শুরু করতে চলেছে কর্পোরেট দৈত্য – আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠী। প্রকল্পের অর্থমূল্য প্রায় ৫৫,০০০ কোটি টাকা।
২০১৯ সালে, আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর,এসেল মাইনিং দেশের বৃহত্তম হিরে অনুসন্ধান এবং খনন ইউনিটের জন্য নিলামে জেতে। খনি মন্ত্রক সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প অনুযায়ী ৩৭৪ হেক্টর বনভূমির খননের জন্য ৫০ বছরের ইজারা নিয়েছে আদিত্য় বিড়লা গোষ্ঠী। যার জন্য সরকার ইতিমধ্যে ক্ষতিপূরণ বনায়নের জন্য জমি নির্ধারণ করেছে। প্রকল্পের জন্য যে পরিমাণ অরণ্য ধ্বংস হবে, তার ক্ষতিপূরণের জন্য সরকার নতুন করে অরণ্যায়নের জমিও নির্ধারণ করে দিয়েছে।
অতীতে কয়লা খনি নিলামের পর, সাম্প্রতিক কালে নতুন করে দেশের জল-জঙ্গল-জমির নিলাম শুরু হয়েছে। এই পর্যায়ে এটাই সবচেয়ে বড়ো পরিমাণ জমির লেনদেন। যদিও স্থানীয়দের আশঙ্কা প্রকল্প এগোলে প্রচুর গাছ ধ্বংস হবে, ধ্বংস হবে এলাকার বাস্তুতন্ত্র।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশ কর্মীরা অরণ্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। যেমন তেঁতুল, কেন, বাঁক, বট, জামান, তেন্ডু, অর্জুন এবং আরও অন্যান্য ঔষধি গাছ, যা ২ লক্ষেরও বেশি আছে ওই এলাকায়, সেগুলি এই প্রকল্পরে ফলে কাটা পড়বে।
বিগত কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চলে খনির বিষয়ে উল্লেখযোগ্য আগ্রহ দেখা গেছে। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি ২০১৪ সালে এই অঞ্চলে খনির বিরোধিতা করে বলেছিল যে এটি বনজ উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল মানুষদের জীবিকাকে বিপদের মুখে ফেলেছে এবং এটি পরিবেশগত মূল্যায়ন নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে।
বক্সায় খনির বিরুদ্ধে আন্দোলনের সাথে জড়িত তেজপুরের এক কর্মী বীরেন্দ্র বলেন যে “বন এবং বন্যজীবন রক্ষার জন্য জনগণের লড়াই সবেমাত্র শুরু হয়েছে। মানুষ বলেছেন যে পান্না অঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে খনির কার্যক্রম সত্ত্বেও তাদের কোনও উন্নয়ন হয়নি, অপুষ্টি ও দারিদ্র্য এই অঞ্চলের গায়ে লেগে রয়েছে। বনভূমিগুলির আশেপাশে যারা বাস করেন তারা এর উপর নির্ভরশীল, তদুপরি, এই অঞ্চলে খনির কার্যক্রম এলাকায় জলের সমস্যা এবং পরিবেশের অবনতিকে আরও খারাপ করতে পারে।”
বুন্দেলখণ্ডের খরা-কবলিত এই অঞ্চলে প্রকৃতিকে ধ্বংস করলে মানুষের জীবনজীবিকার ওপর আরও বড়ো আক্রমণ নেমে আসবে। ইতিমধ্যেই এই এলাকায় কেন-বেতওয়া নদী সংযোগ প্রকল্প হওয়ার কথা। তাতে প্রায় ২০ লক্ষ গাছ কাটা পড়বে বলে মনে করছেন পরিবেশকর্মীরা। ওই প্রকল্পের বিরুদ্ধেও এলাকায় নীরব প্রতিবাদ জারি রয়েছে।
প্রাথমিকভাবে, এই অঞ্চলে খনির প্রকল্পটি ব্রিটিশ-অস্ট্রেলিয়ান খনি সংস্থা রিও-টিন্টো দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল। তারা ২০১০ সালে জমির জন্য আবেদন করেছিল। তবে,পরে তারা আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেয়। ২০১৯ সালে মধ্যপ্রদেশ সরকার অরণ্য নিলামের জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বান করে, যা এসেল মাইনিং অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড জিতে নেয়।
রিও-টিন্টো যখন প্রকল্পের কাজ শুরু করে, তখন গোটা অঞ্চল জুড়ে প্রতিবাদ হয়। স্থানীয় মানুষ অরণ্য ও জমির ওপর তাদের মালিকানা ছাড়াতে রাজি ছিল না। ফলে প্রকল্প ছেড়ে যেতে বাধ্য হয় রিও-টিন্টো। এবারও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন গ্রাম মিলে বৈঠক চলছে। এই অতিমারির সময় সরকার প্রকল্প শুরু করার চেষ্টা করছে। তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ মুনাফার জন্য কর্পোরেট সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকার সাধারণ মানুষ।
জলের অভাব, অপুশষ্টি, অভিবাসী শ্রমিক- সব মিলিয়ে নানা সমস্যা জেরবার উত্তরপ্রদেশ সীমান্তবর্তী এই পান্না অঞ্চল। তেন্ডু পাতা এবং মহুয়ার মতো বনজ সম্পদে এলাকাটি সমৃদ্ধ। বাঘ, চিতা, শিয়াল, ভালুক এবং আরও অনেক বন্য়প্রাণীর আবাসস্থল এই অরণ্য।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অধিকার রক্ষার জন্য পরিবেশ মন্ত্রক কর্তৃক গঠিত কমিটির সদস্য সত্যম শ্রীবাস্তব বলেন, “সুশীল সমাজ, সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে প্রবল উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। যদিও জমিটি পুরোপুরি আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল নয়, তবে অনেকে বনজ উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। মহামারির মধ্যে এই আন্দোলন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ছাপ ফেলেছে।বিড়লারা বলেছে, তারা আগামী বছর থেকে কাজ শুরু করবে। তবে এই প্রকল্পে কতজন মানুষ উচ্ছেদ হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়, কারণ হিরের খনির জন্য সরকার য়ে জমি দিয়েছে, তা পুরোটাই সংরক্ষিত বনাঞ্চল।”
ছবি: ২০১৫ সালে রিও-টিন্টোর প্রকল্পের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষের প্রতিবাদ