পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: আগেও হয়েছে। আবারও খাস জমিতে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগিয়ে দিচ্ছে সরকার। প্রতিবাদে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল কৃষকরা। গত সপ্তাহে ঘটনাটি ঘটেছে ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রার টোবা জেলায়।
নিরাপত্তা বাহিনী ও কৃষকদের মধ্যে এই সংঘর্ষ আজকের কথা নয়। এই সংগ্রাম চলছে ১৯৯০-এর শেষ থেকে। ইন্দোনেশিয়ার সরকার একটি কাগজ উৎপাদক সংস্থা একের পর এক জমি দখল করছে। অরণ্য ধ্বংস করছে। টোবা জেলা জুড়ে প্রচুর কাগজের কল রয়েছে। তাদের কাঁচামাল জোগান দেওয়াই এই জমি দখলের লক্ষ্য। টোবা হ্রদ অঞ্চলের চিরহরিৎ অরণ্যকে কাজে লাগিয়ে গোটা দুনিয়ার সবচেয়ে সস্তা দরে কাগজ রফতানি করে ইন্দোনেশিয়া। প্রথম থেকেই এই জমি দখল ও অরণ্য ধ্বংসের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই চালাচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার কৃষকরা। তাদের প্রতিরোধের কারণে বিশাল পুলিশবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ চালাচ্ছে ওই বেসরকারি সংস্থাটি(টিপিএল গ্রুপ)।
স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর এই সরকারি জমি দখল কর্মসূচির প্রভাব পড়েছে মারাত্মক। জলে মাছ কমে গেছে, বাতাস ও বৃষ্টির জল দূষিত হয়েছে, পর্যটক কমে গেছে, টোবা হ্রদের জলস্তর নেমে গেছে। সঙ্গে অরণ্যের ধারে প্রজনেমর পর প্রজন্ম ধরে বাস করা মানুষ বনাঞ্চল ব্যবহারের অধিকার হারিয়েছে।
উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বনের পাইন গাছ কেটে ইউক্যালিপটাস বসানো হয়। ১৯৯০ সালে ১০ জন মহিলা গাছগুলি কেটে দেয়। তারা জমি ডাকাতও অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। তাদের ৬ মাসের জেল হয়। জনগণের ব্যাপক প্রতিবাদে তাদের ছাড়তে বাধ্য হয় রাষ্ট্র।
প্রতিবাদ শুধু এতেই থামেনি। প্রতিরোধের ভয়ে সরকার কারখানা তৈরির গতি বাড়িয়ে দেয়। তাতে বহু শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ধারাবাহিক প্রতিরোধ ও দুর্নীতির জন্য শেষ অবধি কারখানাটি বন্ধ হয়।
এরপর টিপিএল গ্রুপ বিক্রি হয়ে যায়। সেটি কেনে একটি আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং গোষ্ঠী। যার মালিকানার প্রায় ৯৭ শতাংশ রয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন, জেপান, নেদারল্যান্ড ও ফ্রান্সের হাতে। তারপর নতুন করে কাজ শুরু হয়। বর্তমানে ওই সংস্থা ২,০০,০০০ হেক্টর জমি জুড়ে বাগান চালাচ্ছে। কাগজ বিক্রি হচ্ছে চিনে। এই অঞ্চলটি এখন সে দেশের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা। ২০০৩ সাল থেকে ওই বাগানের আশপাশ দিয়ে যাতায়াত করলে পুলিশ গ্রামবাসীদের ভয় দেখায়। রাতে পুলিশ গ্রামবাসীদের তুলে এনে গুলি করে মেরে দেয়। কৃষকদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিবাদ বেড়েই চলেছে। কৃষক, গ্রামবাসী ও ছাত্র বারবার বি৭ওভ দেখাচ্ছেন। চলছে গ্রেফতারি, মারধর। যেহেতু পুরুষরা বিক্ষোভ দেখালেই গ্রেফতার হয়ে যাচ্ছেন, তাই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন মহিলারা। প্রতিদিন তারা বিক্ষোভ দেখান ও রাস্তা অবরোধ করেন।
২০১৩ সালে, টিপিএল তাদের বাগানের এলাকা সম্প্রসারণ করে এবং কৃষক ও গ্রামবাসীদের আরও জমি কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইউক্যালিপটাস বাগান তৈরির জন্য জন্য আরও ৪,০০০ হেক্টর জমি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করে। তবে গ্রামবাসী ও কৃষকরা প্রতিরোধ করেছিলেন এই সিদ্ধান্তের, তারা কারখানার একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পরের দিন, পুলিশ গ্রামে ঢুকে ৩১ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। ওই গ্রেফতারের বিরুদ্ধে থানার সামনে প্রায় ১০০০ মানুষ বিক্ষোভ দেখান।
২০১৭ সালে কৃষকরা একটি রাস্তা তৈরির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। সেটি বাগানে পৌঁছনোর জন্য তৈরি হচ্ছিল। ওই রাস্তা তৈরিতে প্রচুর জল লাগছিল। তার ফলে ধান খেতে জল দেওয়া যাচ্ছিল না। কৃষকরা পথ অবরোধ করে রাস্তা তৈরি বন্ধ করতে সফল হন।
এছাড়াও গত সপ্তাহে, টিপিএলের কর্মীদের আরও ইউক্যালিপটাস গাছ লাগায় কৃষকদের জমিতে। তাদের সঙ্গে পুলিশ বাহিনী ছিল। কিন্তু এবারও কৃষকরা সফল হয়েছেন। তারা টিপিএল গোষ্ঠী ও পুলিশকে পিছু হঠতে বাধ্য করেছেন।