স্বদেশ রায়
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআইএমের আসন সংখ্যা শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছে। যা অনেককেই অবাক করে দিয়েছে। বিভিন্ন মহলে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী অবধি দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিধানসভায় বামেদের আর দেখতে পাবেন না বলে।কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে সিপিএমের অন্দরমহলেও। তাদের পলিটব্যুরো বলেছে, গভীর আত্ম-অনুসন্ধানের কথা। কিন্তু সেই আত্মানুসন্ধান কিসের ভিত্তিতে হবে সেটাই বড়ো কথা। এই প্রসঙ্গে ঢোকার আগে যেটা বলা দরকার, তা হল ভোটের ব্যর্থতা যেভাবে গোটা নেতৃত্বকরে হতাশাগ্রস্থ করে তুলেছে এবং তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, ছোটো-বড়ো-মাঝারি নেতারা গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম চালানোর পদ্ধতিতে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খোলা বাজারে যেভাবে নিজেদের মতকে হাজির করেছে, তা কোনো কমিউনিস্টপার্টিতে চলে না। আসলে যদি একটা পার্টির এক এবং একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়ায় ভোট এবং যেনতেন প্রকারে বিধানসভা বা লোকসভায় আসন বৃদ্ধি, তখান তার পরিণত এই রকমই হয়। আসন বাড়লে গোটা দল উদ্বেলিত হয়ে পড়ে আবার আসন সংখ্যা শূন্য হয়ে পড়লে হতাশা গ্রাস করে।
যাই হোক, ফল প্রকাশের পর সিপিএম নেতাদের নিজস্ব বিতর্কের মধ্যে দিয়ে যে মতামত বেরিয়ে আসছে, সেগুলো মোটের ওপর এই রকম- ১) বিজেমূল থিয়োরি একদম সঠিক, ভরাডুবি যাই হোক না কেন, ভোটে একে আঁকড়ে ধরেই এগোতে হবে। ২) আইএসএফের সঙ্গে জোট একটা ভুল পদক্ষেপ, আব্বাস সিদ্দিকির মতো মৌলবাদীর সঙ্গে জোট বাম লিবারেল অংশকে দূরে ঠেলে দিয়েছে আবার মুসলিম ভোটও আসেনি। ৩) কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না করে শুধু আইএসএফের সঙ্গে জোট করা উচিত ছিল। যেহেতু কংগ্রেসের রাজ্যে কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, উল্টো দিকে আইএসএফের শ্রেণিভিত্তি মূলত গরিব-দলিত-সংখ্যালঘু অংশ, তাই এদের সাথে জোট, শক্তিবৃদ্ধিতে সহায়ক হত। ৪) বিজেপির সাথে দ্বন্দ্বকেই প্রধান দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখা উচিত ছিল অর্থাৎ বিজেমূল লাইনের প্রয়োগ এই ভরাডুবির প্রধান কারণ।
উঠে আসা এই সমস্ত মতামত থেকে একটা জিনিস আন্দাজ করা যেতে পারে, তা হল, পলিটব্যুরো আগামী লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে বিজেপির সাথে দ্বন্দ্বকেই প্রধান দ্বন্দ্ব হিসাবে সামনে হাজির করে সেই অনুযায়ী সিপিএম, তৃণমূলের সাথে জোটে যাবে কিনা- লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মেনে নেবে কিনা, তা আগামী দিনে বেশ নজরকাড়া বিষয় হতে চলেছে। এ তো গেল ভোটের রাজনীতির আত্মসমীক্ষা।
এখন প্রশ্ন হল, এই মুহূর্তে সিপিএম করছেন যে তরুণ অংশ, যারা অনেকেই দিনরাত এক করে শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালাচ্ছেন, এই কোভিড পরিস্থিতিতে বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তারা কি শুধু এই ভোটকেন্দ্রিক ঘুঁটি সাজানো, যার লক্ষ্য আবার কী করে ক্ষমতায় আসা যায়, এবং এনজিও টাইপ আর্তের সেবার মধ্যেই নিজেদের শক্তিকে নিঃশেষ করবেন? যারা এই মুহূর্তে শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালাচ্ছেন, রেড ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছেন, তাদের কাজের প্রতি পূর্ণ সম্মান দিয়েই বলছি, রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের প্রশ্নটাকে বাদ দিয়ে আর্তের সেবা যে কোনো শাসক দলই সবচেয়ে ভালো করতে পারে। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মডেল বিপ্লবকে ঠেকাতেই হাজির করা হয়েছে। তাই দিনরাত এক করে শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালালেও অনেক বেশি জনপ্রিয় হয় পাঁচ টাকার ডিমভাত। আগামী দিন দুয়ারে রেশন, স্বাস্থ্যসাথী আরও বেশি জনপ্রিয় হবে। তাই আজ সিপিএমের তরুণ ব্রিগেডকে আত্মসমীক্ষায় নামতে হলে, নির্মোহ হতে হবে। ভোটকেন্দ্রিক ভাবনাকে ছুঁড়ে ফেলে মার্কস-এঙ্গেলস-লেনিন-স্টালিন-মাওয়ের শিক্ষাকে পাথেয় করেই নিজেদেরকে কাটাছেঁড়া করতে হবে। শুরু করতে হবে, তাদের দলের গঠনতন্ত্র থেকে, যেখানে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি(মার্কসবাদী)আইন অনুসারে প্রবর্তিত ভারতবর্ষের সংবিধানের প্রতি এবং সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্রের নীতির প্রতি প্রকৃত আস্থা-আনুগত্য অবশ্য পোষণ করবে এবং ভারতের সার্বভৌমত্ব, ঐক্য ও অখণ্ডতাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরবে’।প্রথম কথা হল, বর্তমান ভারতের সংবিধান, যা তৈরি হয়েছিল পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সেই সংবিধানের প্রতি অনুগত থেকে বিপ্লব করা তথা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা কি সম্ভব? ভারতের সংবিধান কি শ্রেণি নিরপেক্ষ কোনো জিনিস? সিপিএম তার কর্মসূচিতে বলছে, ভারতবর্ষ একটি বুর্জোয়া-জমিদার রাষ্ট্র, সেই রাষ্ট্রের সংবিধানের প্রতি আনুগত্য-আস্থা পোষণ করছে কমিউনিস্ট নামধারী একটি দল, এটা কি দ্বিচারিতা নয়? ২০২১-এর নির্বাচনের সময় যখন তৃণমূল-বিজেপির দ্বন্দ্ব চরম আকার নেয়, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নাড্ডার গাড়ি ভাঙচুরের মধ্যে দিয়ে, তখন বেশ কিছু সিপিএম কর্মীকে বলতে শুনেছি, ‘এটা ঠিক হয়নি, যদি ৩৫৬ ধারা জারি করে’- আসলে এই যে নীতিগত ভাবেই রাষ্ট্রের প্রতি ভয়, তার উৎস রয়েছে সিপিএমের গঠনতন্ত্রেই। এবার আসা যাক সংবিধান সংক্রান্ত আর একটি বিষয়ে। যে সংবিধানের প্রতি এই দলের অগাধ আস্থা, সেই সংবিধান অনুযায়ী ভারত একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র যেখানে নেই জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতি। মৌলিক মার্কসীয়-লেনিনীয় নীতি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে কী বলছে, তা যদি আজ চর্চায় না আসে, ৩৭০ রদ হোক বা না হোক, কাশ্মীর সহ সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের জনতার কাছে এই দল ভারত রাষ্ট্রের এজেন্ট হিসেবেই থেকে যাবে এবং আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হয়ে দাঁড়াবে।
এবার ভারতের ‘বুর্জোয়া গণতন্ত্রে’ স্বরূপ নিয়ে আলোচনায় আসা যাক। সিপিএম তার জন্মলগ্ন থেকেই তার কর্মী বাহিনীকে ধোঁকা দেবার জন্য সব থেকে বেশি ধোঁয়াশাপূর্ণ এবং শঠতাপূর্ণ লাইন হাজির করেছে। তা হল, ভারতের বুর্জোয়া গণতন্ত্রের স্বরূপ সম্পর্কে এবং এর সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ভারতের বৃহৎ বুর্জোয়াদের চরিত্র ঠিক কী ধরনের, তা নিয়ে।
সিপিএম তার কর্মসূচিতে বলছে, ভারতে বুর্জোয়া গণতন্ত্র বিরাজ করছে, ভারতের বৃহৎ বুর্জোয়া শ্রেণি স্বাধীন। এর ভিত্তি কী? ভারতে কি সত্যিই বুর্জোয়া গণতন্ত্র বিরাজ করছে? বহু পুরনো প্রশ্ন কিন্তু তা আবার নতুন করে চর্চায় আনা এই তরুণ ব্রিগেডের অবশ্য কর্তব্য। আমরা দেখেছি, পাশ্চাত্যে যে বুর্জোয়া গণতন্ত্র-সংসদীয় ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তা ছিল সামন্ততন্ত্রকে উৎখাত করার যে লড়াই, সেই দীর্ঘ লড়াইয়ের ফসল। কতগুলি আইনের উল্লেখ করলে খুব সহজেই বোঝা যাবে, ভারতের বুর্জোয়া গণতন্ত্রের স্বরূপ ঠিক কীরকম। আইপিসি, সিআরপিসি, পুলিশ অ্যাক্ট ১৮৬১ ইত্যাদি দমনমূলক আইন যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের তৈরি করা, সেগুলো আজও বহাল তবিয়তে রয়েছে আর এগুলোকে ভিত্তি করে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর দ্য আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট ১৯৫৮, পোটা, ইউএপিএ প্রভৃতি আইন তৈরি হয়েছে। পাশ্চাত্যের কোনো দেশে এই ধরনের আইনের উপস্থিতি দেখতে পাব না আমরা। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, সামন্ততন্ত্র বিরোধী কোন কোন লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে ভারত স্বাধীন হয়েছে এবং দেশে বুর্জোয়া গণতন্ত্র ও তার হাত ধরে বুর্জোয়া সংসদীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার কোনো সদুত্তর সিপিএম জন্মলগ্ন থেকে দিয়ে উঠতে পারেনি। যে সংবিধান সভা আমাদের দেশের সংবিধান প্রস্তুত করে, তা তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ মদতে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখানে কোনো ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণির সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ভারতের সংবিধান তৈরি হয়নি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে, আজাদ হিন্দ বাহিনী এবং নৌ বিদ্রোহের বিদ্রোহীদের ক্ষমতা হস্তান্তরের পর ভারতীয় সেনাতে নিয়োগ করা হয়নি শুধুমাত্র তাদের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মনোভাবের কারণে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট প্রথমে তোলা হয় ইউনিয়ন জ্যাক, তারপর তেরঙ্গা পতাকা। আগে গাওয়া হয়, ব্রিটিশদের জাতীয় সঙ্গীত তারপর জনগণমন। এই সবই উল্লেখ করতে হল একটাই কারণে, সেটা হল এই ঘটনাগুলো কখনওই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণির লড়াইকে প্রতিফলিত করে না। এ প্রসঙ্গে সমগ্র ইউরোপ মূলত পশ্চিম ইউরোপে সামন্তবাদ বিরোধী বুর্জোয়াদের দীর্ঘস্থায়ী রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বুর্জোয়া গণতন্ত্র ও তার সংসদ প্রতিষ্ঠার লড়াইকে স্মরণ করা যেতে পারে। এঙ্গেলস এই সংগ্রামরত উদীয়মান এই সংগ্রামরত উদীয়মান বুর্জোয়াদের বলেছিলেন প্রকৃত বিপ্লবী-মানবদরদী। তাই ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্যে দিয়ে যে শ্রেণি ভারতে ক্ষমতা লাভ করল, তা কখনওই জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণি নয়। তা অবশ্যই মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া- যার জন্ম সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির সেবা করার মধ্যে দিয়েই। সাম্রাজ্যবাদের দালালি করেই সে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করে। বাণিজ্য বা শিল্প- যাই তার কর্মক্ষেত্র হোক, সম্পদের পরিমাণ তার যতই হোক, সে স্বাধীন নয়- মুৎসুদ্দি। এটা নির্ভর করে একমাত্র সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির সঙ্গে তার সম্পর্কের উপর। এখানে কোনো শিল্প বিপ্লব হয়নি, ভারতের বৃহৎ বুর্জোয়ারা নিজেদের উদ্যোগে আধুনিক যন্ত্রপাতি, কারিগরি জ্ঞান ইত্যাদি উদ্ভাবন করার চেষ্টা না করে, সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি ও প্রযুক্তিবিদ্যা চড়া মূল্যে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে আসে। আর এটাকেই শিল্পায়ন বলে চালানো হয়। যে কোনো কমিউনিস্ট পার্টি, সেই দেশের রাষ্ট্রের চরিত্র ঠিক কী ধরনের তা ঠিক করার মধ্যে দিয়েই সেই দেশের বিপ্লবের স্তর, পথ ঠিক করে। অভ্যুত্থানের পথ না দীর্ঘস্থায়ী জনযুদ্ধের পথ, এই সবই ঠিক হতে হবে বিপ্লবের স্তরকে কেন্দ্র করে। সিপিএমের কর্মসূচি অনুযায়ী ভারতে বুর্জোয়া গণতন্ত্র বিরাজমান, ভারতের বুর্জোয়া শ্রেণি মুৎসুদ্দি নয় স্বাধীন, খুব স্বাভাবিক নিয়মে তাই ভারতের পার্লামেন্ট ব্যবস্থা স্বাধীন বুর্জোয়া পার্লামেন্ট ব্যবস্থা- এর সাথে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব কি সাযূজ্যপূর্ণ? এর থেকে এই একই বক্তব্য সামনে হাজির করে এসইউসিআই(কমিউনিস্ট)দল ভারতের বিপ্লবের স্তর যা নির্ধারণ করেছে, সেটাকে মেনে নিয়ে এই দলের সাথেই এক হয়ে যাওয়াই বাঞ্ছনীয় নয় কি?
এবার আসা যাক, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রম প্রসঙ্গে। অতীতে এই নিয়ে বহু লেখা হয়েছে, আগামী দিনেও হবে কারণ, বিশ্বায়ন বিরোধী, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ের মাইলফলক হয়ে থাকবে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম। অতীতে যেমন সিপিএম নেতৃত্ব তার কর্মীদের কাছে শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের ক্রুশ্চেভীয় তত্ত্ব নামিয়েছিল কথা ধূম্রজাল সৃষ্টি করে, ঠিক তেমনই সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে বিশঅবায়নী সাম্রাজ্যবাদের প্রজেক্ট নামিয়েছিল শিল্পায়ন-চাকরি প্রভৃতি কথা জাগলারি সৃষ্টি করে। হাজির করেছিল, উৎপাদন সম্পর্ক তথা বিপ্লবের প্রশ্নকে উপেক্ষা করে উৎপাদিকা শক্তি বাড়াবার চরম ঘৃণ্য সংশোধনবাদী তত্ত্ব। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় থাকাকালীন এই দল এই তত্ত্ব হাজির করে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নী প্রজেক্ট লাগু করারস্বার্থে। সাম্রাজ্যবাদের লুণ্ঠনের মৃগয়াক্ষেত্র বানাতে চেয়েছিল তারা রাজ্যের জনগণকে শিল্প বিকাশের মিথ্য স্বপ্ন দেখিয়ে আর যারাই এর বিরোধিতা করেছে, সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাদের ইউএপিএ-র মতো কালা কানুনে গ্রেফতার করেছে গণতান্ত্রিক স্বরকে রূদ্ধ করার জন্য। আজও পশ্চিমবঙ্গের জেলগুলিতে যে সব রাজনৈতিক বন্দি রয়েছেন, তারা প্রায় সকলেই বন্দি হয়েছেন ‘বাম’ জমানায়।
এই বিষয়গুলোকে আত্মসমী৭আয় না এনে এক পা-ও কি এগনো যাবে কমরেড? নাকি আগামী ২৪-এ বিজেপিই প্রধান বিপদ-এই লাইনকে সামনে এনে কংগ্রেসের লেজুরবৃত্তি করে, মমতা ব্যানার্জি বা রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী করার শপথ নিয়ে দু-একটা আসন জোগাড়ের চেষ্টায়, ভোটের ময়দানেই আপনাদের তারুণ্য সীমিত থাকবে কিনা, এখন সেটাই দেখার। কারণ, ভারতের সংসদীয় রাজনীতি যে পর্যায়ে রয়েছে, তাতে বিজেপি এবং বিজেপি-বিরোধী- এই দুই অক্ষের বাইরে কোনো পরিসর আজ নেই। আর বিজেপি বিরোধী অক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করার শক্তিও আর আপনাদের নেই।
গ্রন্থসূত্র- ১)ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি(মার্কসবাদী) একটি মূল্যায়ন- সুনীতিকুমার ঘোষ
২) মাওবাদের নামে নৈরাজ্যবাদ- অনিল বিশ্বাস