জিগনেশ মেভানি ও মিনা কান্দাসামি (দ্য ওয়ার ডট ইনে প্রকাশিত নিবন্ধের অনুবাদ)
গত আম্বেদকর জয়ন্তীতে প্রফেসর আনন্দ তেলতুম্বের গ্রেফতারের সমালোচনা করে আমরা যৌথ ভাবে একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। তারপর এক বছর কেটে গেছে।
আমরা এই সত্যটি তুলে ধরেছিলাম যে আনন্দকে ভীমা কোরেগাঁও মামলায় তাকে কোনো ষড়যন্ত্রের জন্য গ্রেফতার করা হয়নি নয় বরং তাঁকে বন্দি করা হয়েছে তাঁর দলিতকেন্দ্রিক মার্কসবাদী রাজনীতির জন্য যা সরাসরি মোদীর কর্পোরেট-মনুবাদী সরকারের সামনে একটি বিপদ হিসেবে দাঁড়িয়েছিল।
ভীমা কোরেগাঁও মামলায় প্রথম গ্রেফতারি অভিযান শুরু হয় ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল। তিন বছর হয়ে গেছে ১৬জন রাজনৈতিক কর্মী, বুদ্ধিজীবী, সমাজ কর্মী, আইনজীবী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা মিথ্যা মামলায় জেলে রয়েছেন।
যারা জেলে রয়েছেন তারা হলেন- শিক্ষাবিদ আনন্দ তেলতুম্বদে, সোমা সেন ও হ্যানি বাবু; আদিবাসী অধিকার কর্মী স্ট্যান স্বামি ও মহেশ রাউত; কবি ওয়ার ওয়ারা রাও(সম্প্রতি জামিনে মুক্ত) ও সুধীর ধাওয়ালে; আইনজীবী সুরেন্দ্র গাডলিং ও সুধা ভরদ্বাজ; লেখক-গবেষক গৌতম নাভলখা; সমাজ কর্মী রোনা উইলসন, অরুন ফেরেরা এবং ভারনন গনজালভেস এবং সাংস্কৃতিক কর্মী সাগর গোরখে, রমেশ ঘাইচর ও জ্যোতি জাগতাপ।
এই মুহূর্তে চারটি রাজ্যের নির্বাচন ও কোরোনা মহামারীর জন্য এই মামলাটি হয়তো কিছুদিন থেমে আছে। তবে আবার সব কিছু ‘স্বাভাবিক’হয়ে গেলে আরও কিছু গ্রেফতারি হতেই পারে। সারা দেশ জুড়ে যারা দলিতদের সংগঠিত করছে, তাদের ও দলিত আন্দোলনকে লক্ষবস্ত করে এই মামলাটির জাল বিস্তার করা হয়েছে এবং জাতীয় তদন্ত সংস্থা(এন আই এ) ৬টি রাজ্য থেকে প্রায় ৫০ জনকে তলব করেছে।
২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক স্বতন্ত্র ডিজিটাল ফরেনসিক সংস্থা আর্সেনাল দাবি করেছিল যে রোনা উইলসনের ল্যাপটপে থাকা চিঠি যেটাকে এই ভীমা কোরেগাঁও মামলার প্রমাণ বলে চালাচ্ছে পুলিশ, সেই চিঠিটা রোনার ল্যাপটপে হ্যাক কোরে ঢোকানো হয়েছিল।
বর্তমানে ওই ফরেনসিক সংস্থাটি আরেকটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে যে ওই চিঠি ছাড়াও আরও ২২টি ফাইল ঢোকানো হয়েছে রোনার ল্যাপটপে।
এই মিথ্যে নথিগুলি, অন্য়ান্য বাকি ইন্টারনেট হ্যাকিং এর মতো সমান ও সাধারণ ব্যাপার নয়। এগুলি ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে এনআইএ- মূল প্রমাণ। রোনা উইলসনের ল্যাপটপ থেকে পাওয়া এইসব নথির ভিত্তিতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর দাবি করা হয়েছিলো।
এই নথিগুলির ভিত্তিতে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী আইন UAPA-তে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তদের। কে ল্যাপটপ হ্যাক করেছে তাকে খুঁজে বের না করে, তাকে শাস্তি না দিয়ে এনআইএ আর্সেনালেরর রিপোর্টেরই বিরোধিতা কোরে।
এটি আমদের অনিবার্য প্রশ্নের দিকে নিয়ে যায়, কেন মোদী সরকারকে ভীমা কোরেগাঁও মামলার ১৬ জনকে চিহ্নিত কোরে বন্দি করা হল?
এই ১৬জনকে বন্দি কোরে মোদী সরকার কী পাওয়ার আশা করছে? মোদী সরকার গণতান্ত্রিক বিশ্বের জন্য এই সমাজ কর্মীদের দাবি ও লড়াইকে শেষ করতে চায় এবং এই মনুবাদী ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনোরকম আওয়াজ তোলাকে দমন করতে চায়।
ভীমা কোরেগাঁও মামলায় বন্দি ১৬জনের মুক্তির দাবিতে আমরা সকল গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও আম্বেদকরবাদী শক্তির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এই মহামারিটি শেষ হওয়ার পরে, বন্দিদের মুক্তির জন্য আমাদের সম্মিলিত শক্তিকে উৎসর্গ করতে হবে।