Home রাজনীতি ‘বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র’ থেকে ‘শীতলকুচির প্রিসাইডিং অফিসার’, গোয়েবেলসের তত্ত্বকে প্রয়োগ করেই চলেছে বিজেপি

‘বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র’ থেকে ‘শীতলকুচির প্রিসাইডিং অফিসার’, গোয়েবেলসের তত্ত্বকে প্রয়োগ করেই চলেছে বিজেপি

‘বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র’ থেকে ‘শীতলকুচির প্রিসাইডিং অফিসার’, গোয়েবেলসের তত্ত্বকে প্রয়োগ করেই চলেছে বিজেপি
1
শৌর্যদীপ্ত সেনগুপ্ত

“বারবার একটি মিথ্যাকে সত্যি বলে প্রচার করলে সেটি হঠাৎ সত্যি হয়ে ওঠে”, এই নীতি নিয়ে নাৎসিবাদী কার্যকলাপের প্রচার করতেন জোসেফ গোয়েবেলস। মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে এটি ‘ইলিউশন অফ ট্রুথ’ বলে পরিচিত।

এই যে ইলিউশন অফ ট্রুথ, এই ব্যাপারটা ভারতে আজকে থেকে নয় গত ত্রিশ, চল্লিশ বছর ধরে চলে আসছে। এই ইলিউশন অফ ট্রুথের মাধ্যমে বাবরি মসজিদ যে রাম মন্দির ভেঙ্গে তৈরি হয়ছে এই মিথ্যাটাও সত্যি হয়ে উঠলো মানুষের কাছে আর মসজিদও ভেঙ্গে দেওয়া হল। আর ঘুমোতে, জাগতে, খেতে, বসতে সর্বত্র আপনার সামনে ভারতের ফ্যাসিবাদীরা একটি ইলিউশন তৈরি করে রেখেছে বা রাখার চেষ্টা করছে, কখনও রামজন্মভুমির নামে কখনও কৃষক আন্দোলনের বিরোধিতা করে ইন্টারনেট দুনিয়ায় “আমি ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে, তাই আমি এই কৃষি বিলকে নৈতিক ভাবে সমর্থন করছি” বলে।

আপনারা জানেন যে ২০১৯ সালে অমিত শাহ-এর কলকাতায় রোড শোর সময় বিদ্যাসাগর কলেজে ভাঙচুর চালায় বিজেপি ফ্যাসিস্ত বাহিনী, এবং তার পর থেকেই শুরু হয় বিজেপি আইটি সেলের ঐ ‘ইলিউশন অফ ট্রুথ’- এর খেলা, তারা সকলেই নিজের নিজের প্রোফাইল থেকে বিভিন্ন পেজ থেকে একই কথা লিখে শেয়ার করতে থাকে, যখন গোটা বাংলা বলছে যে এই কাজ করেছে বিজেপির বাহিনী, তখন অন্য দিকে এরা পোস্ট করে চলেছে যে “আমি বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র আমি সেই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলাম আমরা দেখেছি বিজেপির তরফ থেকে কিছু হয়নি”। ওই কিছু দিন নেটদুনিয়ায় লাগাতার এ ধরনের প্রচার চালিয়ে গেছেন তারা।

তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে বাংলায় জনমত সৃষ্টি করতে তারা প্রচার করতে লাগলো “আমি এক ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে, পুরনো কৃষি আইনেও আমরা কোথায় ভালো আছি? আমরা এম এস পি ঠিকঠাক পাচ্ছি না, নতুন কৃষি আইন আমাদের ক্ষুদ্র চাষিদের ভালো করবে, আমরা এতো দিন কৃষি কাজ করে ট্র্যাক্টর তো দূর ৫০০০০ টাকাও জমাতে পারেনি, যারা ট্র্যাক্টর নিয়ে আন্দোলন করছে তারা সকলেই ধনী কৃষক ও ফরে, তবে আমি এই আইনকে নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছি”। এই প্রচার লাগাতার এখনও তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই প্রচার বিফল হচ্ছে কিন্তু তারা হাল ছাড়ছেন না চালিয়ে যাচ্ছেন। তার পরে তাদের বড়োসড়ো বিফলতা হল কৃষক আন্দোলনের বিরুদ্ধে দেশের নামিদামি তারকাদের দিয়ে একই টুইট করিয়েও কৃষক আন্দোলনকে দমানো যায়নি।

শনিবার বাংলায় বিধানসভার চতুর্থ দফার ভোটে শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয় চারজনের। অবশেষে বিজেপির আইতি সেল  এটা নিয়েও তাদের প্রচার শুরু করে, বিভিন্ন প্রোফাইল থেকে একই লেখা লাগাতার পোস্ট হতে থাকে যেখানে লেখা ছিল “শীতলকুচি থেকে এখন ভোটের ডিউটি করে ডিসিআরসি ফিরছি। শুনলাম পাশের বুথে সিআইএসএফ জওয়ানদের গুলিতে নিহত হয়েছে চার জন। এখানে কাদের দোষ আমি জানি না, আমি প্রত্যক্ষদর্শী না। তবে গতকাল সারারাত বোমার আওয়াজে আমার ঘুম হয়নি, ভেবেছিলাম সকালে পঞ্চায়েত ভোটের মতো প্রাণ হাতে নিয়ে বেরোতে হবে।“ মানে কেন্দ্রীয় বাহিনী কত ভালো সেটা প্রচার করতেই এই পোস্ট করা হচ্ছে তা খুবই স্পষ্ট আমাদের কাছে।

মুশকিলটা হচ্ছে এরা সমস্ত জায়গায় গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করতে বদ্ধপরিকর হয়েছে, যেন তেন ভাবে এরা ক্ষমতা দখল করতে চায়, অদের নজর এখন বাংলায়।  বাহিনী পাঠিয়ে মানুষ মেরে সেটাকে কোথাও প্রকাশ্যে সমর্থন করে বা কোথাও এই ধরনের প্রচার করে মানুষের মধ্যে নিজেদের প্রভাব সৃষ্টি করছে ফ্যাসিস্তরা। এদের এই ধরনের মিথ্যে প্রচারকে মানুষের সামনে উন্মোচন করে মানুষকে আরও সচেতন করে তোলা আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভোটের লড়াইয়ে তাদের হারাতে পারলেও এ ধরনের প্রচার বন্ধ হবে না। এর বিরুদ্ধে মানুষকে নিয়মিত সচেতন করে যেতে হবে।

Share Now:

Comment(1)

  1. আমি যানতে চাই প্রতিবেদকের কাছে বিদ্যাসাগরের মুর্তি ভাঙার তদন্ত রিপোর্ট কোথায়? এবং কৃষি আন্দোলন ও কৃষি বিলের সম্পর্কে যে সব ভাট বকা হোলো তার আইনি ভিত্তি কি?

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *