Home রাজনীতি যেই জিতুক, ভোটের পর আমাদের জীবন আরও দুর্বিষহ হতে চলেছে

যেই জিতুক, ভোটের পর আমাদের জীবন আরও দুর্বিষহ হতে চলেছে

যেই জিতুক, ভোটের পর আমাদের জীবন আরও দুর্বিষহ হতে চলেছে
0

নির্বাণ

রাজকুমারীর হঠাৎ হাসি বন্ধ হয়ে গেছে দেখে রাজপ্রাসাদের খাওয়া ঘুম বন্ধ- ছোটোবেলায় শোনা এই গল্পটি  বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের ভোটকে কেন্দ্র করে মাথায় আসছে বারংবার, রাজকুমারীকে কে হাসায় তার হাজার রকম চেষ্টার গল্প।

‘জঙ্গল হাসছে’, ‘পাহাড় হাসছে’, ‘সমুদ্র হাসছে’ ইত্যাদি বলতে বলতে বর্তমান শাসকদলের কর্ণধার মমতা ব্যানার্জি ভোটের আগে জনগণের হাসির পরিষেবা বজায় রাখতে  তার সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার অনুরোধ করছে। বিরোধীরা অর্থাৎ বাম-কংগ্রেস-সিদ্দিকি জোট এবং বিজেপি আসলে জণগন কাঁদছে সেটা দেখতে পেয়ে নিজেরা সেই হাসির পরিষেবা সবচেয়ে ভালো দিতে পারবে এরকম দাবি সর্বত্র করে বেড়াচ্ছে। প্রত্যেকেই জণগণকে হাসাতে কতটা বদ্ধপরিকর সেটা প্রমাণে একের পর এক যা সমস্ত বাংলা সিরিয়ালের কীর্তিকলাপ চালাচ্ছে সেগুলোই বা কি কম হাসির। কেউ ‘লাভলি’ প্যারোডি করছে, কেউ আবার স্ত্রী বিরোধী দলে যাওয়ায় প্রেস কনফারেন্স করে ফিরে আসতে বলছে, ইত্যাদি ঘটনায় এইবারের ২০২১-এর বিধানসভা ভোট নিয়ে রাজ্য  উথালপাথাল। শুধু কি হাসি? আমরা ‘(ভাইপো) পিসি’ সরকারের বিরুদ্ধে বিজেপিকে ম্যাজিক দেখাতেও দেখছি। তৃণমূলের যে বিধায়কদের চোর বলে এতোদিন বিজেপি চিৎকার করে এলো, চার্জশিটে   যাদের নাম রাখা হলো তারা রাতারাতি বিজেপিতে গিয়ে বিশুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে অথচ একজন ব্যাক্তিকেও নারদা কিংবা সারদার টাকা ফেরত দিতে দেখা যাচ্ছে না, একজনকেও জণগণের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে দেখা যাচ্ছে না। সবার মুখে একই সুর ‘দলে থেকে কাজ (?) করতে পারছিলাম না।’

এইসবের মাঝে আমরাও প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমের দ্বারা পাওয়া এইসমস্ত খবর নিয়ে হইচইয়ে মেতে আছি। চাকরির কথা বললেও (কীভাবে হবে তার ব্যাখ্যা এখনও পাওয়া যাইনি) বাম-কংগ্রেস-সিদ্দিকি জোট চিন্তায় পড়েছে যে, সেলিব্রিটিরা ভোটে দাঁড়িয়ে জনগণের কি উপকার হবে?

সব মিলিয়ে এই ভোটকে ঘিরে যেসমস্ত আলোচনা ক্রমাগত উঠে আসছে সেটা লজ্জা পাইয়ে দেবে স্কুলে পেছন বেঞ্চে বসা উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের আলোচনাকে!

বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় থেকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি , পেট্রোল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি , একের পর এক পাবলিক সেক্টর বিক্রি, এছাড়া জণগন বিরোধী এনআরসি-এনপিআর, কৃষি আইন, শ্রম কোড, জাতীয় শিক্ষা নীতি ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে দেশকে দেউলিয়া করে দিতে কোনো অংশেই পিছু পা নয়। এই বিলগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলনকে দমনের ক্ষেত্রে তারা একেবারেই ফ্যাসিবাদী কায়দায় আক্রমণ চালাচ্ছে জণগণের উপর। এদিকে তারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে স্লোগান তুলছে ‘আর নয় অন্যায়’! এইরকম হাস্যকর অবস্থার সাক্ষী থাকছে আমাদের এই প্রজন্ম। কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পার্টি অফিস বানিয়ে বিজেপি সমস্ত বিরোধীদের ভয় দেখাচ্ছে, ভোটের আগে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ভেঙে ‘সততার প্রশাসন’ ব্যানারে বিভিন্ন রাজ্যের আমলা এবং পুলিশের উপর বিচার বসানোর নামে তাদের নিজেদের পুতুল বানানোতে উদ্যত হয়েছে। বিচার যদি করারই থাকতো তাহলে কি মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীরা এখন জেলে না থাকে তাদের ছত্রছায়ায় ঘুরে বেড়াতো? ক্ষমতায় আসার জন্য তারা ধর্মীয়, জাতিগত যে কোনো প্রকার ভেদাভেদে, টাকা ছড়িয়ে ঘোড়া কেনাবেচা করে যেভাবেই হোক আসতে চাইছে। তাই জণগণের জন্য বিজেপির থেকে বড়ো বিপদ নিঃসন্দেহে এইমুহূর্তে কেউই নয়।

কিন্তু, ‘বিজেপি কেন করছেন? ‘ এই প্রশ্ন আমরা যে কোনো গ্রামে কিংবা শহরের শ্রমজীবী মানুষকে যদি জিজ্ঞাসা করি তাহলে চ্যালেঞ্জ করে লিখছি প্রায় সকলেই একটাই কথা বলবে, ‘তৃণমূলের নেতানেত্রীদের অত্যাচারে’। চাল চুরি, বেকার কার্ড না করে দেওয়া, দিলেও সেই কার্ড অনুযায়ী কাজ না দেওয়া, দিলেও টাকা না দেওয়া কিংবা টাকার একটা অংশ নেতার পকেটে চলে যাওয়া, ইন্দিরা গান্ধী আবাস যোজনার টাকা লুট করা, এমনকি নির্লজ্জের মতো বার্ধক্যজনিত ভাতার যে সামান্য টাকা সেটাও ঘুষ খাওয়া, চাষিদের মান্ডির নামে লোকসানে চাষ করানো, কৃষক ভাতায় টাকা দেওয়ার নাম করে তাদেরকেই টাকা দেওয়া, যাদের নামে জমি হলেও তারা চাষ করে না। অথচ সিংহভাগ কৃষক এবং ক্ষেত মজুর যাদের হাতে জমি নেই, তাদের উপর ঠিক সিপিএমের কায়দাতেই এলাকার তৃণমূলের মহাজন নেতাদের অত্যাচার।

সিপিএম যে কায়দায় কারখানাগুলো বন্ধ করে সেখানে প্রোমোটিং করে প্রোমোটার মাফিয়া চক্র দিয়ে এলাকাকে নিয়ন্ত্রণ করতো একই কায়দায় তারাও এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ রেখেছে এই যাবৎ। এমনকি আমফানের পরে জণগণের প্রাপ্য টাকাতেও ভাগ বসাতে লজ্জা করেনি তাদের।

এই সকলই আমাদের জানা কথা, এবং এইসমস্ত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই মানুষ তার দৈনন্দিন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সামান্য কোনো মতে বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু, সেই বেঁচে থাকা আরও দুর্বিষহ হতে চলেছে এই ভোটের পর এবং সেটি বোঝার জন্য এই ভোটে যে সমস্ত বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে না সেইগুলো নিয়ে কথা বলা দরকার।

পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক বাজেট যদি আমরা মন দিয়ে দেখি তাহলে একটি বিষয় আমরা কেউই এড়িয়ে যেতে পারবো না, তা হল বিপুল পরিমাণ দেনা পশ্চিমবঙ্গকে নাস্তানাবুদ করে রেখেছে। এই দেনার পরিমান ৪ লক্ষ কোটি টাকা। প্রতিবছর রাজ্যের আয়ের একটি বিপুল অংশ এই দেনা শোধ করতে চলে যাচ্ছে। এছাড়াও এই দেনা এবং তার সুদ দিতে আরও দেনা করতে হচ্ছে।

১৯৭০-এ সাম্রাজ্যবাদ সঙ্কটে পরার পরে বিশ্বায়নের মাধ্যমে মূলত যে দুটি কাজ করে, তার একটি হল  নিজেদের দেশে ‘পুনর্গঠন’ -এর নামে আরও মনোপলি তৈরি করে যার ফলে শ্রমজীবী মানুষের উপর তাদের অকথ্য অত্যাচার আরও তীব্র হয়। এইসময়েই দুনিয়া জুড়ে শ্রম শোষণ বাড়াতে টেকনোলজিকাল কর্পোরেটদের উত্থান আরও ত্বরান্বিত হতে থাকে। এবং অন্যটি হল অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলিতে ‘সাহায্য’ (aid) -এর নাম করে তাদের ঋণের জালে জড়িয়ে তাদের ব্যাঙ্ক, ইন্সুরেন্স, ফিনান্স, পাবলিক সেক্টর, প্রাইভেট সেক্টর, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা সর্বত্র লুট আরও তীব্র করে।

যার পরিণামে যতই ঝা চকচকে রাস্তা হোক আর হাতে স্মার্ট ফোন আসুক  মানুষের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে উঠেছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা সমগ্র পৃথিবীকে আরও গ্রাস করেছে। মানুষ তার জবাবে কী করেছে সেটি বুঝতে আমাদের খুব বেশি পিছিয়ে যেতে হবে না। আমরা যদি ২০১৯-এই দেখতে যাই, দেখতে পাবো ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, আমেরিকা প্রভৃতি সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলিতে শ্রমজীবী মানুষ কি ব্যাপক আকারে আন্দোলনে নেমে এসেছে এবং অন্যদিকে লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্য-পূর্ব এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতেও লাগাতার আন্দোলনে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ জেরবার হয়ে লক ডাউনের নামে নিজেদের কোনোরকমে রক্ষা করে চলেছে।

সুতরাং পশ্চিমবঙ্গের এই ঋণের বোঝা আদপে কাদের ‘উন্নয়ন’-এর জন্য বাড়ছে সেই প্রশ্ন এই ভোটে উঠে আসছে না। যে কোনো মানুষ যার বিন্দুমাত্র নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসা আছে, লজ্জায় মাথা কাটা যাবে যদি দেখে একের পর এক সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে চুক্তিতে আমাদের দেশের কোনো দলই পিছিয়ে নেই। বরং কে কত বেশি বিদেশি প্রভু ভক্ত সেই প্রমাণে তারা সদা ব্যস্ত। জনগন নয়, এদের কাছে রাজকুমারী হল বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী প্রভুরা,তাদের মুখেই এরা হাসি ফোটাতে চায়, ।

পশ্চিমবঙ্গে যদি আমরা বিনিয়োগ দেখি তাহলেই আমরা আন্দাজ করতে পারবো যে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-লালগড় আন্দোলনে সজাগ জনগণের চেতনাকে আবার ভোঁতা করে দেওয়ার চেষ্টায় কোনো দলই পিছিয়ে নেই।

অশোকনগরে খনিজ তেল পাওয়া যেতেই সিপিএম সেখানে মিছিলে নামে ‘তেল উত্তোলন’ আটকানো যাবে না এই দাবিতে। অথচ ভারতে এই ধরনের প্রজেক্টে পুনর্বাসন এবং চাকরির অবস্থা কী হয় তার রিপোর্ট তারা দেখাবে কি? হলদিয়ায় যে বিপুল পরিমাণ জমি নিয়ে বন্দর গড়ে তোলা হল সেখানে সিংহভাগ মানুষ পুনর্বাসন কিংবা চাকরি পায়নি। সেই ক্ষোভ এখনও মানুষ ভোলেনি। এরকম অজস্র উদাহরণ তুলে আনা যায়। তাই পুনর্বাসন কিংবা পরিবেশ কোনোটাই নয় বরং কর্পোরেট হাঙরদের স্বার্থে মিছিল করে তারা এখনও কতটা তাদের বিশ্বস্ত সেটা প্রমাণের তারা সুযোগ একেবারেই হাতছাড়া করেনি।

দেউচা পাচামিতে কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে কিংবা তাজপুরে সাত কিলোমিটার লম্বা বন্দর বানানোর ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী বারংবার ঘোষণা করছে যে, ‘জমি অধিগ্রহণ হবে না’, ‘মৎস্যজীবীদের সুযোগ বাড়বে’ ইত্যাদি। এই প্রতিশ্রুতির বন্যা এবং ২০১১-এ ক্ষমতায় আসার পরে নোনাডাঙা, ভাঙর প্রভৃতি জায়গায় তৃণমূলের ভূমিকা কি যথেষ্ট নয় এটি বুঝতে যে তারা এই আন্তর্জাতিক কর্পোরেট হাঙরদের কাছে নিজেদের প্রমাণ করতে একটুও কসুর করবে না? ক্ষমতায় এসে এই প্রজেক্টগুলো করার সময় প্রতিশ্রুতি মানা দূরের কথা, আন্দোলন করতে গেলে রাজনৈতিক বন্দি করে রেখে  জেলে মেরে দেওয়ার যে ব্লু প্রিন্ট ওয়াল স্ট্রিটে তৈরি, সেটি পালনে তারা কোনোরকম কসুর করবে?

একটি স্বাধীন দেশের জণগণের কাছে আরও লজ্জাজনক বিষয় হল ‘মউ(MoU- memorandum of understanding) চুক্তি’। দেশের সম্পদকে নির্লজ্জভাবে বিক্রি করার ক্ষেত্রে আর একটি নির্লজ্জ উদাহরণ হল এই চুক্তি, যেটি অত্যন্ত বৈষম্যমূলক। ২০২০-তে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ব্রিটেনের সাথে একটি মউ চুক্তি করে বসে আছে।

বিশ্ব ব্যাংক যারা লোনের মাধ্যমে একের পর এক পিছিয়ে থাকা অর্থনীতির দেশগুলোকে গ্রাস করেছে তাদের থেকে পশ্চিমবঙ্গের ১২টি নদীপথে পরিবহনের স্বার্থে, ধারে ডুবে থাকা এই সরকার আরও ১০৫ মিলিয়ন ডলার ( প্রায় ৭৬৩ কোটি টাকার কিছু বেশি) ধার করতে চলেছে। আদানি সহ অন্যান্য কর্পোরেট হাঙরদের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বড়ো বড়ো হাইওয়ে তৈরি করার। যে হাইওয়েগুলো মানুষের স্বার্থে তৈরি হচ্ছে বলে দেখানো হলেও জনগণকে উচ্ছেদ করে, তাদের উপর শোষণ আরও তীব্র করতে এবং তাদের আন্দোলন রুখতেই শাসক সবসময় এইসব রাস্তাঘাট  করে এসেছে। এইখানেও তাই হচ্ছে।

এবং মানুষের টাকা, যেগুলো সরকার বৃহৎ পুঁজিপতিদের সাবসিডি আর ধার দিয়ে (ফেরত না দিলেও চলে) তাদের বাঁচিয়ে রাখে এবং এগুলোতে সাহায্য করে উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক ব্যাক্তিত্বরা, সামান্য টাকার জন্য দেশকে বিক্রি করতে যারা লজ্জা পায় না। সেই সকল টাকা আবার এই দলগুলোকে ভোটের আগে জেতার জন্য দেওয়া হয় যাতে ক্ষমতায় এসে তারা প্রভু ব্যতীত অন্য কারও স্বার্থ নিয়ে না ভাবে। সেই টাকার খোলাখুলি নৃত্য আমরা এখন দেখছি এই নেতা কেনাবেচার দৌড়ে।

 

একদিকে মানুষকে রোজগারের রাস্তা কেন্দ্র রাজ্য কেউই করে দিতে পারছে না। অন্যদিকে প্রকল্পের নামে যে ভিক্ষাগুলো দিচ্ছে, সেগুলোর জন্যেও তাদের দেনা আরও বাড়ছে এবং মানুষকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর বদলে এই ভিক্ষার রাজনীতিতে অভ্যস্ত হতে শেখানো হচ্ছে। কেরালায় সিপিএম সরকারও কি ‘অল্টারনেটিভ’ কিছু করছে? ‘উন্নয়ন’-এর মডেলে তাদের কি কোনো পার্থক্য থাকছে? কংগ্রেস, যাদের হাত ধরে এই লুট, প্রকল্পের মাধ্যমে জণগণের সমস্যা সমাধান না করেই সেগুলিকে ধামাচাপা দিয়ে রাখার চল ভারতে শুরু হল, তারাও কি অন্যরকম কিছু বলছে? তাদের মুখে এখনও একই কথা।

ভারতবর্ষে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলন তীব্র হলে ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে হলেও তাদের তৈরি সাগরেদরা এখনও দেশে ব্রিটিশসহ অন্যান্য বিদেশিদের ঔপনিবেশিক লুট চালাতে সাহায্য করে নিজেদের বিশ্বস্ত প্রমাণে ব্যাপক ভাবেই সফল।  প্রাথমিক ভাবে মানুষকে বোকা বানাতে একটি মিশ্র অর্থনীতির কথা বললেও এই কংগ্রেস, জন্মলগ্ন থেকেই মিশ্র অর্থনীতির বিরোধী এবং ভারতের বাজার খুলে দেওয়ার জন্য ওকালতি করা বিজেপি, লাল পতাকা হাতে IMF-WB এর সেবাদাস সিপিএম কিংবা বর্তমানে ক্ষমতায় থেকে প্রভুদের দাসত্বে যথেষ্ট সফল তৃণমূল যে কেউ আগামী ভোটে জিতে এলে ফ্যাসিবাদকে রুখে দেওয়া যাবে এরকম আকাশকুসুম চিন্তা প্রেসার কম রাখতে কিংবা সুগার ব্যালেন্স রাখতে সাহায্য করতে পারে কিন্তু শেষ রক্ষা করবে না।

তাই এইসময় দাঁড়িয়ে যখন গণআন্দোলনের চেহারা আরও তীব্রতর করার সুযোগ ছিল, যেটাতে নবাগত সরকার চাপে থাকতো, সেইসব উপেক্ষা করে শুধুমাত্র বিজেপির মধ্যে ফ্যাসিবাদের ভুত দেখতে পেয়ে বাকিদের সচেতন কিংবা অসচেতনভাবে বিন্দুমাত্র সহযোগিতা আসলে ফ্যাসিবাদকেই সহযোগিতা করে দেওয়া। এই সাম্রাজ্যবাদীদের ছত্রছায়ায় ভারতের বৃহৎ পুঁজিপতি-সরকার-প্রশাসনের যে জোট এই লুটকে পরিচালনা করে, তাদের  স্তাবক লিবারালদের একাংশ যারা ক্ষমতায় আসার ৩৬ দিনের মধ্যে সিরিয়ায় এয়ার স্ট্রাইক করা বাইডেনকে মুক্তির পথিক হিসাবে দেখে তাদের থেকেও সাবধান হওয়ার প্রয়োজন আছে।

ব্যাপক ভূমিসংস্কার, ক্ষুদ্র – মাঝারি – বৃহৎ শিল্প গড়ে তোলা এবং সেই সকলের জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের সৃষ্ট এই পরগাছা জোটকে শেষ করা ব্যতীত এই চক্রবূহ্যের সমাধান নেই। এবং  পুঁজিবাদের বাড়তে থাকা সঙ্কটের পাশাপাশি নকশালবাড়িই একমাত্র পথ এই চক্রবূহ্য খতম করার সেটি আরও বেশি প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে । তাই ভোট দিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত মনে করা এবং দিলীপ ঘোষের গরুর দুধ থেকে সোনা বের করা একই ব্যাপার।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *