পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: ফ্যাসিবাদ এগোচ্ছে। এবার থেকে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করলে মিলবে না সরকারি চাকরি, সরকারি অনুদান অথবা ব্যাঙ্ক ঋণ। গত ১ ফেব্রুয়ারি এই নির্দেশ জারি করেছে বিহারের বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার।
অন্যদিকে আরও একধাপ এগিয়ে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার ঘোষনা করেছে যে এবার থেকে ফেসবুক, টুইটার প্রভৃতি সামাজিক মাধ্যমে যদি কেউ ‘দেশ বিরোধী’ পোস্ট করেন, তবে তার বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য যে এর আগে গত ২২ জানুয়ারি বিহারের নীতীশ কুমার সরকারের আর্থিক ও সাইবার অপরাধ শাখা নির্দেশ জারি করে বলেছিল যে এবার থেকে সোশাল মিডিয়াতে রাজ্য সরকারের কোনো সমালোচনা করা চলবে না। এমনকি বিহার সরকারের মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ অথবা কোনো সরকারি অফিসারের সমালোচনা করলেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করবেন, তাদের প্রসঙ্গে হিন্দিতে লেখা দুই পাতার নির্দেশনামাতে বিহার পুলিশের ডিজি এস কে সিংহল বলেছেন, ” এই ধরনের লোকেরা এবার থেকে কঠিন ফলাফলের জন্য প্রস্তুত থাকুন”। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে সিংহল বলেছেন, সরকারি চাকরি, সরকারি অনুদান, ব্যাঙ্ক ঋণ, সরকারি কাজের বরাত, পাসপোর্ট প্রভৃতি পেতে গেলে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্টের প্রয়োজন হয়। এবার থেকে এই রিপোর্টে লিখে দেওয়া হবে যে আবেদনকারী প্রতিবাদ, আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। রিপোর্টে এই কথা লেখা থাকলে আবেদনকারী এমনকি কোনো চুক্তি ভিত্তিক চাকরিও পাবেন না। সরকারি অনুদান, ব্যাঙ্ক ঋণ প্রভৃতিও পাবেন না।
অন্যদিকে উত্তরাখণ্ডের ডিজি তার অধস্থন পুলিশ অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন যে এবার থেকে ফেসবুক, টুইটার প্রভৃতি সামাজিক মাধ্যমগুলির ওপর কড়া নজরদারি চালাতে হবে। কেউ যদি ‘দেশ বিরোধী’ বা সমাজ বিরোধী পোস্ট করেন, তাহলে প্রথমে তাকে সতর্ক করা হবে। তাতে কাজ না হলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেক্ষ্য, ভারতের আইনে ‘রাষ্ট্র’ বিরোধিতার সংজ্ঞা দেওয়া থাকলেও, ‘দেশ’ বিরোধিতার কোনো সংজ্ঞা নেই। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা এবিষয়ে জানতে চাইলে ডিজি বলেন, “যারাই দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতা বিরোধী লেখা লিখবে, তাদেরই দেশ বিরোধী বলে ধরে নেওয়া হবে”।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শুর বলেন, “মত প্রকাশ ও মিছিল-মিটিং করার অধিকার সংবিধানের মৌলিক অধিকার। আর সরকারি চাকরির জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতা প্রয়োজন হয়। যদি সেই যোগ্যতা কারও থাকে, তবে কখনওই প্রতিবাদ করা বা মিছিল করার জন্য কারও চাকরির সুযোগ কেড়ে নেওয়া যায় না। এ সব নির্দেশ আদালতে ধোঁপে টিকবে না। এগুলি বেআইনি, অসাংবিধানিক ও স্বৈরতান্ত্রিক”।
এ প্রসঙ্গে রেজিস্ট ফ্যাসিজম-এর যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, “গণতন্ত্রের কন্ঠ রোধ করতে প্রথমে বিহার আর উত্তরাখণ্ডে এই নির্দেশিকা জারি হল। এর পর একে একে অন্য রাজ্যগুলিতেও এই নির্দেশ জারি করা হবে। দেশের মানুষ যতই প্রতিবাদে পথে নামছেন, ততই বিজেপি ভয় পেয়ে এই ধরনের পদক্ষেপ করছে”।