Home কৃষি বিজেপির চক্রান্ত না কৃষকদের স্বতস্ফূর্ত ক্ষোভপ্রকাশ, লালকেল্লা অভিযানের নেপথ্যে কী ছিল?
0

বিজেপির চক্রান্ত না কৃষকদের স্বতস্ফূর্ত ক্ষোভপ্রকাশ, লালকেল্লা অভিযানের নেপথ্যে কী ছিল?

বিজেপির চক্রান্ত না কৃষকদের স্বতস্ফূর্ত ক্ষোভপ্রকাশ, লালকেল্লা অভিযানের নেপথ্যে কী ছিল?
0

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: কৃষকদের ট্র্যাক্টর র‍্যালির কিছু দিন আগে দিল্লি পুলিশ ও কৃষক ইউনিয়নগুলির যুক্ত মোর্চা ‘সংযুক্ত কিষান মোর্চা’ মিলে মিছিলের তিনটি পথ ঠিক করে। যা কৃষকদের ঠিক করা পথের চেয়ে আলাদা ছিল। ৫০টি ইউনিয়নের মধ্যে বেশ কয়েকটি সংগঠন ওই পরিবর্তিত পথে রাজি ছিল না।

স্টুডেন্ট ফর সোসাইটি নামক একটি ছাত্র সংগঠনের (যারা পঞ্জাবের কয়েক হাজার ছাত্র যুবদের সংগঠিত করেছিল) বক্তব্য ছিল “যখন প্রথম দফায় কেউ আমাদের দিল্লি প্রবেশের অনুমতি দেয়নি, তখন ইউনিয়নগুলি এখন কেন দিল্লি প্রবেশের জন্য পুলিশের অনুমতি চাইছে?” একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এস এফ এস সংগঠনের প্রধান কৃষক সংগঠনগুলিকে আবেদন করছেন যেন তাঁরা আগে থেকে ঠিক করা আউটার রিং রোডের পথেই যায়।

একইভাবে , কিষান মজদুর সংঘর্ষ কমিটি(কেএমএসসি) পাঞ্জাবের মাঝা অঞ্চলের কৃষক ইউনিয়ন, যারা সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে পাঞ্জাবে প্রথম ‘রেল রোকো’ কর্মসূচি নেন, তারাও সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা ও দিল্লি পুলিশের ঠিক করে দেওয়া তিনটি পথের সিদ্ধন্তের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। ২৫ জানুয়ারি রাতেই সংগঠনের নেতা সারওয়ান সিং পান্ধের ও সাতনাম সিং পান্নু দলের বাকি সদস্য এবং সাংবাদিকদের স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে তাঁরা পুলিশ দ্বারা নির্ধারিত পথ অনুসরন করবেন না এবং তাঁরা মিছিল করবে আউটার রিং রোড দিয়েই।

সেই রাতেই অভিনেতা দীপ সিধু ও গ্যাংস্টার থেকে সমাজকর্মীতে পরিণত হওয়া লাখনা সিধানা সিংহু সীমান্তে উপস্থিত থেকে  প্রচার করে, যারা আউটার রিং রোড ধরে মিছিল করতে চায়, তারা কেএমএসসির মিছিল অনুসরণ করতে পারে।

২৬ তারিখ মিছিলের জন্য পলিশের ব্যারিকেড খোলার সময় ছিল সকাল ১০টা, কিন্তু কৃষকরা সকাল ৮টা নাগাদ ব্যারিকেড ভেঙ্গে মিছিল শুরু করে এবং দুপুরের দিকে আই টি ও চত্বরে কৃষক-পুলিশ সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়।

ঐ চত্বরেই উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড থেকে আগত কৃষকরা পুলিশের মুখমুখি হয় এবং এই কৃষকরাও বেঁধে দেওয়া পথ লঙ্খন করে আগাম ঘোষণা ছাড়াই। এ আই কে এস সি সি নেতা বলেন , বিভিন্ন ছোটো ছোটো কৃষক দল যখন লাল কেল্লায় পৌঁছয়, তখন সমস্ত কিছুই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

তবে লালকেল্লায় পতাকা তোলার ব্যাপারে কিছু কৃষকের আপত্তি ছিল।

বিকেলে এস কে এম প্রেস বিবৃতি দিয়ে বলে “ কিছু সংগঠন ও ব্যক্তি বেঁধে দেওয়া পথ লঙ্ঘন করেছে এবং নিন্দনীয় কাজ করেছে। সমাজবিরোধীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করেছিল।“

সর্বভারতীয় কৃষক মোর্চার এক নেতা বলেন, কৃষকরা যেভাবে বিনা বাধায় লালকেল্লা চলে গেল এবং পতাকা ওড়াল, তা সন্দেহজনক। তাঁর দাবি, পুলিশ, মিডিয়া ও দীপ সিধু চক্রান্ত করে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।

২৬ তারিখের ঘটনার পর এস কে এম থেকে বলা হয় প্রতিদিন এস কে এমের তরফ থেকে প্রেস বিবৃতি দেওয়া হবে। কৃষক নেতা ডঃ দর্শন পাল বলেন, “আমাদের দেওয়া বিবৃতিই অফিসিয়াল অবস্থান হবে, অন্য কারুর মন্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়।“

দীপ সিধু এবং লাখা সিধানা সিংহু সীমান্তে উপস্থিত ছিল এবং ২৫ জানুয়ারি রাতে মঞ্চ থেকে একটি সমাবেশের উদ্দেশে ভাষণও দেন। কে এম এস সি সহ  স্টুডেন্ট ফর সোসাইটি আউটার রিং রোডের দিকে যাত্রা করেছিল। ছা৬ সংগঠনটির নেতা রমন বলেন, তিনি ২৫ তারিখ রাতেও উপস্থিত ছিলেন মঞ্চে যেখানে দীপ সিধু বক্তব্য রাখছিলে। কিন্তু সেদিন রাতে মঞ্চ থেকে লাল কেল্লা যাওয়ার বা পতাকা তলা নিয়ে কেউ কিছুই বলেনি।

রামান আরও বলেন যে “ প্রকাশ্যে, লাল কেল্লায় কী ঘটবে সে সম্পর্কে তাঁরা কিছুই বলেনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে এটা একটি কৃষক আন্দোলন, কোনো ধর্মীয় আন্দোলন নয়। কিন্তু মঞ্চ থেকে সেদিন রাতে তাঁরা কৃষক সংগঠনগুলিকে কেবল আউটার রিং রোডের পথ ধরে এগোবার অনুরোধ করেছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন যারা দিল্লি পলিশের নির্ধারিত পথে যেতে চায় না, তাঁরা কে এম এস সি এবং এস এফ এস কে অনুসরন করতে পারেন।“

২৬ তারিখ রাতে বি আইচ ইউ হরিয়ানা সংগঠনের নেতা গুরনাম সিং ছাদুনি বলেন “দীপ সিধু সরকারের হয়ে কাজ করছে কৃষকদের বিরুদ্ধে গিয়ে। আমরা এই ঘটনাকে ধিক্কার জানাচ্ছি। এটি কোন ধর্মীয় আন্দোলন নয়, এটি কৃষক আন্দোলন।“

এর মধ্যেই দীপ সিধুর সাথে নরেন্দ্র মোদীর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় যায়। দীপ সিধু নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করতে ২৬ জানুয়ারি ফেসবুক লাইভ করে বলেন যে পতাকা উত্তোলন একটি ‘স্বতঃস্ফূর্ত কাজ’।  তিনি আরও বলেন যে “নয়া কৃষি আইনের বিরোধিতা করে আমরা নিশান সাহেব আর কৃষক সংগঠনের পতাকা দিয়েছি এবং কিষান মজুর একতার স্লোগানও দিয়েছিলাম।“

আন্দোলনে থাকা ধর্মীয় সংগঠনের শিখরা, যারা লাল কেল্লায় শিখ পতাকা তুলেছিলেন ,পতাকা উত্তোলন নিয়ে তাঁদের কোন অনুতাপ নেই।

আমান বালি লেখক ও শিখ অ্যাক্টিভিস্ট।তিনি আন্দোলনে রয়েছেন সেপ্টেম্বর থেকে। তিনি বলেন, শিখ ধর্মের পতাকা অবশ্যই এই আন্দোলনের অংশ প্রথম দিন থেকেই। নিশান সাহেব আর কৃষক ঐক্যের পতাকা একসাথেই থাকে প্রতিবাদী শিবিরগুলিতে।

সিধুকে তার হিন্দু দক্ষিণপন্থী অবস্থান থেকে দক্ষিণপন্থী শিখ অবস্থানে পরিবর্তিত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, সিধু সেখানে বলেছিলেন , নকশাল থেকে খলিস্তানিতে পরিণত হওয়া নেতা আজমের সিং-এর শিখ ইতিহাস সম্পর্কিত বই পড়েই তার মনোভাব পালটেছে।

এদের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ সীমান্তে অবস্থানরত উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের কৃষকরাও লালকেল্লা অভিযানে অংশ নেন। তাদের নেতৃত্ব দেয় তেরাই কিষান ইউনিয়ন। অন্যদিকে পুলিশদের ঠিক করা রুটে মিছল করার পথে দিল্লির নাঙ্গলোই এলাকায় কৃষকদের সঙ্গে পুলিশের গোলমাল হয়, মিছিল অনেকক্ষণ আটকে পড়ে। তখন সেখান থেকেও বহু কৃষক লালকেল্লায় চলে যান। সব মিলিয়ে বলা চলে, কৃষক নেতারা অস্বীকার করলেও, প্রায় সব সংগঠনের যুব সদস্যরাই ২৬-এর লালকেল্লা অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন।

সৌজন্য: দ্য ওয়ার

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *