শুধু শাসক দল নয়, নির্বাচনে বিজেপিকে ঠেকাতে জোট বাঁধছেন গণ আন্দোলনকর্মী ও বুদ্ধিজীবীরাও
নিজস্ব সংবাদদাতা: আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের শাসক তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্র ও রাজ্যের এই দুই শাসক দলের তরজা মূল ধারার গণ মাধ্যমের সিংহভাগ দখল করে রাখছে। অন্যদিকে ময়দানে রয়েছে বাম-কংগ্রেস জোটও। তারা দুই শাসক দলকে আক্রমণ করলেও ময়দানি রাজনীতিতে রাজ্যে তাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে তৃণমূলেরই। এর ফলাফল আমরা দেখেছি গত লোকসভা নির্বাচনে। সেখানে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রদর্শন করতে অধিকাংশ বাম ভোটার বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। যদিও বিজেপির সাম্প্রদায়িক ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজনীতিকে কমবেশি ফ্যাসিবাদী বলে মনে করে প্রায় সবকটি বামপন্থী দলই। পৃথিবীর ইতিহাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বামপন্থীদের বহু গৌরবজনক লড়াইয়ের ইতিহাসও রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানিকে হারিয়ে মিত্রশক্তির জয় নিশ্চিত করেছিল দুনিয়ার প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন।
এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে বিজেপির ফ্যাসিবাদী রাজনীতিকে প্রধান বিপদ বলে মনে করছেন সবচেয়ে বড়ো সংসদীয় বাম দল সিপিএমের বাইরে থাকা বিভিন্ন বামপন্থী গণ আন্দোলন কর্মী ও বুদ্ধিজীবীরা। এই মর্মে আগামী কয়েক মাস সংগঠিত ভাবে প্রচার করতে একটি মঞ্চ তৈরিরও উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। আগামী ৪ জানুয়ারি কলকাতার ভারত সভা হলে এই উদ্যোগের কনভেনশন। উদ্যোগের প্রাথমিক বিবৃতিতে সম্পর্কে লেখা হয়েছে, “ধর্মীয় বিভাজন, জাতপাতের রাজনীতি, ফ্যাসিস্ত উপাদানে ভরা শিক্ষানীতি, এনপিআর-এনআরসি লাগু, সিএএ দিয়ে একাধারে সাম্প্রদায়িক বৈষম্য এবং পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এমন উদ্বাস্তুদের উৎখাতের ষড়যন্ত্র, মিথ্যে দেশপ্রেম ইত্যাদিকে হাতিয়ার করে এরা বাংলার গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, প্রতিবাদী ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর। এরা মনে করে যে ভারতকে একটা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে গেলে দেশের সমস্ত প্রগতিশীল ও প্রতিবাদী ঐতিহ্যকে ধ্বংস করা দরকার। সেই লক্ষ্যপূরণে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করা এদের কাছে একটি আশু কর্তব্য হিসেবে গণ্য হচ্ছে। ফ্যাসিস্ত শক্তিটি তাই আজ সর্বশক্তি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ দখলের উদ্দেশ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে”।
তবে কি তারা তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার জন্য জনগণকে আহ্বান জানাবেন? তৃণমূল বিরোধী জনগণের কাছে তাদের বক্তব্য কী থাকবে? এই সমস্ত প্রশ্ন নিয়ে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম এই উদ্যওগের অন্যতম আহ্বায়ক, দীর্ঘ দিনের বাম আন্দোলনের কর্মী কুশল দেবনাথের সঙ্গে। তিনি বলেন, তারা বিজেপিকে এই মুহূর্তে সব চেয়ে বড় বিপদ হিসেবে দেখছেন, ফলে কর্মসূচির প্রচার হিসেবে ‘নো ভোট ফর বিজেপি’কে সাধারণ স্লোগান হিসেবে সামনে রেখে তারা একজোট হচ্ছেন। তার মতে কর্মসূচিটি জনগণকে প্রধানত বিজেপি কে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখতে উদ্যোগী এবং বিজেপিকে ভোট না দিয়ে জনগণ কাকে ভোট দেবে সেটা সম্পূর্ণ তাদের ইচ্ছে। তার মতে তৃণমূল আঞ্চলিক স্বৈরতান্ত্রিক দল, তাদের ক্ষমতা সীমিত। অন্যদিকে বিজেপি কেন্দ্রে আছে এবং তাদের ক্ষতি করার ক্ষমতা অনেক বেশি। সিপিএম, কংগ্রেসের মতো অন্যান্য সংসদীয় দলগুলিও বিজেপির থেকে কম বিপজ্জ্নক। এই পরিস্থিতিকে শুধুমাত্র বাংলার প্রেক্ষিতে না দেখে গোটা দেশের প্রেক্ষিতে দেখতে হবে। বিজেপি নির্লজ্জ ভাবে একচেটিয়া পুঁজির দালালি করে দেশ কে ফ্যাসিবাদের দোরগোড়ায় এনে ফেলেছে।
আরও পড়ুন: ভোট নয়, প্রতিরোধ করতে হবে বিজেপির ফ্যাসিবাদকে, মনে করছেন বাম গণ আন্দোলনকর্মীদের একাংশ
তিনি আরো জানিয়েছেন “তৃণমূলের ব্যাপক দুর্নীতির কারণে ইতিমধ্যেই মানুষের ক্ষোভ জমেছে, তার স্বৈরাচার নিয়ে আমাদের বক্তব্য থাকবে, সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের ভূমিকার জন্য সিপিএমের সমালোচনাও থাকবে কিন্তু প্রধান শত্রু বিজেপিই থাকবে। কেন্দ্রে এবং রাজ্যে বিজেপি সরকার থাকলে তা গণ আন্দোলনের ক্ষেত্রে ভয়াবহ হয়ে উঠবে”।