(গত ২২ নভেম্বর এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে টাইমস অফ ইন্ডিয়া পত্রিকায়। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, নিরাপত্তাকর্মীরা মাওবাদীদের যে নথিটি উদ্ধার করেছেন, সেটি প্রতিবেদকের কাছেও রয়েছে।)
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: সিপিআই(মাওবাদী)-র কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের একটি নথি সম্প্রতি নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে এসেছে। সেখানে মাওবাদীরা দাবি করেছে, তাদের ‘গণমুক্তি গেরিলা ফৌজ’ গঠিত হওয়ার পর নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে বিভিন্ন রাজ্যে গত ২০ বছরে ৪,৪৮৩ জন মাওবাদী নেতাকর্মী মারা গিয়েছে। তার মধ্যে ৮৩৯ জন মহিলা।
ওই নথিতে মাওবাদীরা দেশদের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা তাদের কর্মীদের কিছু সামরিক নির্দেশও দিয়েছে। সেখানে পুলিশের তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা বা গোয়েন্দা নেটওয়ার্ককে নষ্ট করার জন্য ‘স্নাইপার টিম’, ছোটো ছোটো স্কোয়াড ও এই ধরনের নানা সামরিক কাঠামো তৈরি করতে বলা হয়েছে।
মাওবাদীদের সর্বোচ্চ সামরিক নেতৃত্বের ওই নথিতে দাবি করা হয়েছে, গত দু’দশকে তারা তাদের বিভিন্ন গেরিলা অঞ্চলে ২,৯৫৮ জন নিরাপত্তাকর্মীকে মেরেছে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী এই সময়কালে তারা ৩,৫০৭ জন নিরাপত্তাকর্মীকে জখম করেছে।৩,২০৮টি আধুনিক অস্ত্র দখল করেছে এবং বেশ কিছু গোলাবারুদও লুঠ করেছে। ওই নথিতে বিহার-ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়, ওড়িশা-অন্ধ্রপ্রদেশ সীমান্ত এবং অন্যান্য কিছু অঞ্চলে মাওবাদীদের ‘সাফল্যের’ কথাও বলা হয়েছে।
ওই দলিলে মাওবাদীরা তাদের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা সম্পর্কেও ধারণা দিয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে পশ্চিম ঘাট, ছত্তীসগঢ়-মহারাষ্ট্র সীমান্ত এলাকা ও অন্যান্য এলাকা। এইসব অঞ্চলে নিজেদের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তারা এই মুহূর্তে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছে।
অত্যন্ত সংবেদনশীল এই দলিলে মাওবাদীরা কর্মীদের কাছে ‘দেশজুড়ে শ্রেণি সংগ্রাম-গেরিলা যুদ্ধ তীব্র করা ও ছড়িয়ে দেওয়ার’ আহ্বান রেখেছে। পাশাপাশি গণমুক্তি গেরিলা ফৌজ(পিএলজিএ)-এর ২০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করার কথাও বলা হয়েছে।
ওই দলিল অনুযায়ী, গত ২ দশকে মাওবাদীরা নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২০৮টি বড়ো হামলা, ৩১৮টি মাঝারি মাপের হামলা এবং ৩,৯৪৮টি ছোটো অ্যাকশন করেছে। ২০২০ সালে মাওবাদীরা ৯৯টি অ্যাকশন করেছে বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
ওই দলিলে নিরাপত্তা বাহিনীর নতুন কৌশল সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কমান্ডোরা এখন মাওবাদীদের কয়েকটি স্তরে ঘিরে ফেলার পরই গুলি চালানো ও গ্রেনেড হামলা শুরু করছে। মাওবাদীদের গেরিলাদের বিভিন্ন কৌশলগত ভুলের ফলেই যে তাদের বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, সে কথাও লেখা হয়েছে দলিলে। পাশাপাশি মাওবাদী দমনে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সমাধান’ নীতি(২০১৯-২০২২) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিশেষ নিরাপত্তা উপদেষ্টা কে বিজয়কুমারের নেতৃত্বে ৩০টি জেলা থেকে মাওবাদীদের উৎখাত করতে ‘প্রহার’ পরিকল্পনাকে প্রতিরোধ করার কথাও নতুন করে বলা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, এই দলিল উদ্ধারের পর মাওবাদীদের সামরিক কমিশনের পরিকল্পনাকে বানচাল করার জন্য নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করেছে দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে নিরাপত্তা সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, “ওরা(মাওবাদীরা)এখন প্রশিক্ষিত গেরিলাদের নিয়ে তৈরি গণমুক্তি গেরিলা ফৌজ থেকে মনোযোগ ও রণনীতি পালটে ক্যাডারদের গণমুক্তি ফৌজ(পিএলএ)গঠনের দিকে মনোনিবেশ করতে বলছে। যাতে জনগণ, সমর্থক ও সশস্ত্র গেরিলারা থাকবে। নিজেদের নিয়ন্ত্রিত ও আধিপত্যে থাকা এলাকার পরিমাণ বাড়ানোই ওদের লক্ষ্য”।
সূত্র: https://timesofindia.indiatimes.com/city/nagpur/4483-rebels-2958-jawans-killed-in-last-20-yrs-maoists-docu/articleshow/79345579.cms