পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: গত ৬ নভেম্বর মধ্যপ্রদেশের গুনা জেলার উকাওয়াদ খুরদ গ্রামে আদিবাসী যুবক বিজয় সাহারিয়া কে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হল। আর এই ঘটনায় আরও একবার প্রকাশ্যে এল বর্তমান ভারতে ভূমিদাস প্রথার উপস্থিতি।। বিজয় রাধেশ্যাম নামক ব্যাক্তির ধার শোধ করতে বিজয় তার ভূমিদাস হিসেবে খাটত। ঋণ নেওয়া সত্ত্বেও বিজয় কেন অন্য ব্যক্তির খেতে কাজ করেছে, সেই রাগে তার জমিতে জল দেওয়ার অজুহাতে রাধেশ্যাম তাকে রাতে একটি মন্দিরে ডেকে তার গায়ে কেরসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। দ্রুত বামোরির একটি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বেডের অভাবে গুনার একটিতে স্থানান্তরিত করা হয় বিজয়কে। পরদিন তিনি মারা যান।
মৃত ব্যক্তি পাঁচ হাজার টাকার দেনায় তিন বছর ধরে অভিযুক্তের ভূমিদাস ছিলেন। সেই টাকা শোধ দিতে না পারার কারণে তাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। ‘ঋণ দাসত্ব’ এবং ভুমিদাসদের উপর অত্যাচারের ঘটনা আজও নিয়মিত ব্যাপার। ভূমিদাস অধিকার গোষ্ঠী বন্ধুয়া মুক্তি মোর্চার সদস্য নরেন্দ্র ভাদোরিয়ার বক্তব্য গুনায় ভূমিদাস প্রথা অত্যন্ত সাধারণ ব্যাপার। ২০০৪ সালে সালে, ১২,৮২২ জন ভূমিদাস চিহ্নিত করে তাদের মুক্তি দেওয়া হয় এবং মধ্যপ্রদেশেই ১১,৮৯৭ জনকে পুনর্বাসিত করা হয়। জাতীয় গ্রামীণ শ্রম কমিশনের স্টাডি গ্রুপ অন বন্ডেড লেবারের রিপোর্টে বেশ কয়েকটি রাজ্যে পাথর ক্রাশার, বেলেপাথর, মার্বেল এবং স্লেট খাদানগুলিতে ব্যাপক সংখ্যায় চুক্তিভুক্ত শ্রমিক উপস্থিতির কথা জানিয়েছে। মধ্যপ্রদেশে স্লেট মাইন এবং পাথরের খনিগুলিতে দাস শ্রমিকদের সংখ্যা যথেষ্ঠ বেশি।
আদিবাসীদের জোর করে ঋণের জালে জড়িয়ে দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, তারই ফলাফল এই ঋণ দাসত্ব। এর মূল কারণ হ’ল রাষ্ট্র ও কর্পোরেট কোম্পানিগুলির দ্বারা তাদের জীবিকা, জমি থেকে উৎখাত, উৎপাদনের অধিকার খর্ব, অবৈধ খনন এবং খনির উপর মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণ। এনএইচআরসি অন্ধ্রপ্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, বিহার, গুজরাট, হরিয়ানা, কর্ণাটক, কেরালা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, রাজস্থান, তামিলনাড়ু এবং উত্তরপ্রদেশে চুক্তি শ্রমের উপস্থিতির উচ্চ হার চিহ্নিত করেছে।
সাহরিয়া উপজাতির সদস্যরা, বিশেষত মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান সহ বিভিন্ন রাজ্যে দাসত্বের শিকার। মাসে মাত্র ২০০০-৬০০০ টাকার বিনিময়ে দরিদ্র পিতামাতারা তাদের সন্তানদের তাদের ভিন্ন রাজ্যে চালানকারীদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন।
উঁচু জাতের দাসত্বের স্বীকার সাহারিয়া উপজাতির ভূমিদাসদের দাবি, এই ‘উন্নয়ন’ প্রকল্পগুলির পরিবর্তে, সরকার সাহরিয়াদের জমি বণ্টন করুক এবং বনজ সম্পদে অধিকার নিশ্চিত করুক।