পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: একনায়কতন্ত্র যুগের সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধানের পক্ষে চিলিবাসীর বিপুল সমর্থন গণভোটে। চিলির মানুষ মনে করেন দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের মূল এই সংবিধান। সেই সংবিধান বাতিলের পক্ষে গণভোট রায় দেওয়ায় রাজধানী সান্টিয়াগোর মূল চত্বর ও অন্য শহরের রাস্তায় উদযাপন শুরু করেন হাজার হাজার মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদতে সালভাদর আলেন্দের সরকারকে উৎখাত করে ১৯৭৩ সালে ক্ষমতা দখল করে জেনারেল পিনোচে। নয়া উদারবাদের প্রথম পরীক্ষাগার হয়ে ওঠে চিলি। হাজার হাজার বামপন্থী নিখোঁজ হয়ে যায় পিনোশের ১৭ বছরের শাসনে। আলেন্দের বন্ধু নোবেলজয়ী কবি পাবলো নেরুদাকে পর্যন্ত গৃহবন্দি করে রাখা হয়। জনগণের আপত্তি সত্ত্বেও ১৯৮০ সালে সামরিক শাসকদের তৈরি সংবিধান লাগু করা হয়, যা এতদিন পর্যন্ত বহাল ছিল।
গত বছর থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল থেকেছে চিলি। সরকার ‘আইন ব্যবস্থা’ টিকিয়ে রাখার নামে সমস্ত শক্তি ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের দমন-পীড়ন,ধরপাকড়, হত্যার মাধ্যমে সর্বত্র রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস দিয়ে বাগে আনতে চেষ্টা করে বিক্ষোভ। ২০১৯-এর ১২ নভেম্বর চিলি জুড়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বন্দর, খনির এবং অন্যান্য শিল্প খাতেও ব্যাপক ভাবে সাধারণ ধর্মঘট পালন করা হয়। এবছর জুলাই মাসে সরকার ১০ শতাংশ পেনশন প্রত্যাহারের চেষ্টা করলে বেশ কয়েকটি শ্রমিক ইউনিয়ন পেনশন ব্যবস্থার বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে ধর্মঘট করে। ফলে চিলির বিক্ষোভে যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ররয়েছে শ্রেণি সংগ্রামের। এখন এই নয়া সংবিধানের মাধ্যমে খেটে খাওয়া মানুষের লড়াইয়ের জয় কতখানি তা দেখার।
তবে চিলির কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা শ্রেণি সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে নতুন সংবিধানের প্রস্তাব প্রতিবিপ্লবীদের হাতিয়ার, জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল যুদ্ধ যা এখন ‘লো ইন্টেন্সিটি কনফ্লিক্ট’ বা নিচু মাত্রার যুদ্ধের আকারে চলছে, তা প্রতিটি গণবিদ্রোহকে দমন করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি বুর্জোয়া নির্বাচনের দ্বারা জনগণের মধ্যে ভুয়ো ‘কতৃত্বে’র ধারণা তৈরি করছে এবং জনগণের ‘বৈধতা’প্রাপ্ত সরকারের বিভ্রান্তি তৈরি করছে। চিলির বিপ্লবীদের বক্তব্য জনগণ একটি নতুন সমাজ গঠনের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে যা তাদের অধিকার নিশ্চিত করবে। আইন সংশোধন করে বা সংবিধান পরিবর্তন করে কি তাতে শান্তিপূর্ণভাবে উত্তরণ হতে পারে? ক্ষমতাসীন শ্রেণিরা কি শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের সুবিধার্থে তাদের ক্ষমতা ছেড়ে দেবে? দীর্ঘদিন ধরে প্রতিক্রিয়াশীল, সুবিধাবাদী ও সংশোধনবাদীরা ‘বিপ্লবী সংগ্রাম সম্ভব নয়’, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ একমাত্র পথ’ জাতীয় ধারণাগুলি জনগণের মধ্যে প্রচার করে চলেছে। কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের বক্তব্য, সমস্ত পরিস্থিতিকেই শ্রেণি বাস্তবতার দৃষ্টিতে দেখতে হবে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই সাংবিধানিক বিভ্রান্তি ত্যাগ করে দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়ার ডাক দিয়েছেন চিলির বিপ্লবীরা।