শ্রমিক ও পরিবেশ বিরোধী নতুন শ্রম আইনের বিরুদ্ধে উত্তাল ইন্দোনেশিয়া, পথে ২০ লক্ষ
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: ভারতের মতোই সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় প্রচুর আইন পরিবর্তন হয়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন আইন। আইন পরিবর্তনের ঝড়ে সেদেশের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোই প্রায় পালটে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে শ্রম আইনও। ভারতের মতোই কর্ম সংস্থান বাড়ানোর নামে নতুন শ্রম আইনে শ্রমিকদের বহু অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পরিবেশের সংরক্ষণকে গুরুত্বহীন করে দেওয়া হয়েছে।
এর প্রতিবাদেই তিন দিনের ধর্মঘট চলছে সে দেশে। রাজধানী জাকার্তাতে মিছিল করতে না দেওয়া হলেও দেশের অন্যান্য সব শহরে প্রায় ২০ লক্ষ শ্রমিক ও ছাত্র পথে নেমেছে।
বাংদুং, পশ্চিম জাভায় প্রতিবাদীরা স্থানীয় সংসদ ভবনের সামনে চাকা পোড়ায়। তাংগেরাং, বেকাশি, কারাওয়াং, সেরাং-এর মতো বেশ কিছু শহরে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে আসেন। পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান।
দেশের ৩২টি ট্রেড ইউনিয়নের যৌথমঞ্চ এই আন্দোলন পরিচালনা করছে। নতুন কর্মসংস্থান আইনকে ‘ধ্বংসাত্মক’ বলে বিবৃতি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন কমনফেডারেশন বলেছে, বিদেশি বহুজাতিকরা যাতে প্রচুর মুনাফা করতে পারে, তার জন্যই এমন আইন আনা হয়েছে।
https://www.facebook.com/watch/?v=4634101173297157
নতুন শ্রম আইনে ৭৯টি আলাদা আলাদা আইনকে বিলুপ্ত করা হয়েছে, শ্রমিকদের ছুটির সুযোগ কমানো হয়েছে, অস্থায়ী শ্রমিকদের অনির্দিষ্ট কাল আটকে রাখার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে এবং বাণিজ্যিক প্রকল্পের জন্য পরিবেশ সংক্রান্ত যে সব বিধিনিষেধ ছিল, তা দুর্বল করে দওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রচুর বনাঞ্চল আগামি দিনে কেটে ফেলা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়া সবচেয়ে বেশি পাম তেল উৎপাদক। সে দেশে পাম চাষে প্রচুর শিশু শ্রমিক ও দাস শ্রমিক ব্যবহার করা হয়ে বলে সম্প্রতি জানা যায়। অরণ্য নিধন করে নিয়ন্ত্রণহীন পাম চাষের ফলে ইতিমধ্যেই ওরাং-ওটাং ও সুমাত্রার গন্ডার বিলুপ্তির পথে।.নতুন আইনে পাম চাষে বিদেশি শ্রমিক বেশি করে নিয়োগের পথ প্রশস্ত করা হয়েছে। অথচ সে দেশে পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর বহু অত্যাচারের সংবাদ এর আগেই প্রচারিত হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেছেন, তিনি জানেন এই নতুন শ্রম আইনে মানুষ মোটেই খুশি হয়নি। কিন্তু তবু তিনি এটা করেছেন, কারণ ‘রাজনীতি নিয়ে তিনি আর ভাবিত নন’। যেহেতু তিনি আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। অর্থাৎ, তিনি বলেতে চেয়েছেন, দেশির সামগ্রিক ভালোর জন্যই তিনি এই আইন এনেছেন। এই আইন যেন অরাজনৈতিক। যেন এই আইন দেশিবিদেশি বৃহৎ কর্পোরেট ও সাম্রাজ্যবাদীদের সাহায্য করতে আনা হয়নি।