পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: যে গভীর সংকটে পুঁজিবাদ পড়েছে, তা করোনার জন্য হয়নি। অতএব, এর দায় জনগণের ওপর চাপানো চলবে না। রাজধানী ভিয়েনায় এক জঙ্গি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এএ কথা ঘোষণা করলেন অস্ট্রিয়ার জনগণ।
বিভিন্ন ফ্যাসিবাদ বিরোধী ও বিপ্লবী কর্মীদের নিয়ে একটি যুক্তফ্রন্ট তৈরি হয়েছে সে দেশে। নাম ‘আত্মনির্ভর অস্ট্রিয়া’। সেই কমিটির ডাকেই “এই সঙ্কটের মূল্য আমরা চোকাবো না” শিরোনামে এই কর্মসূচি পালিত হয়। মিছিল ও সভার মেজাজ ছিল জঙ্গি। ‘জনসংখ্যার ৮০% মানুষকে বেকারভাতা দিতে হবে’, ‘পুরো বেতনের সঙ্গে ক্ষতিপূরণও দিতে হবে’, ‘সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো চলবে না’ ইত্যাদি দাবিতে সরগরম ছিল মিছিল।
অস্ট্রিয়া জুড়ে ছাঁটাইয়ের ফলে প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ বেকার বা স্বল্প সময়ের কাজে নিযুক্ত। গণ-ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে, শ্রমিক-কর্মচারীদের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ বহু মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন নারী আন্দোলনের কর্মীরাও। শ্রমজীবী মহিলাদের মধ্যে ৮৫% বিগত কয়েক মাসের ছাঁটাইয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
‘অ্যান্টিফ্যাসিস্ট অ্যাকশন ভিয়েনা’ -র এক অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলা হয় যে বর্তমানে পুঁজিবাদের সাধারণ সঙ্কটের তীব্র আকার ধারণ করেছে। যার মূল্য এখন জনগণকে দিয়ে পরিশোধ করানোর চেষ্টা চলছে। এরপর কয়েকটি কারখানায় ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় প্রতিবাদীরা। বিক্ষোভের পর এক রাজনৈতিক কর্মী বলেন, “এই ছাঁটাইগুলি কেবল শুরু ছিল, এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এটি চলতে থাকবে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আমাদের লড়াইয়ের স্লোগান হতে হবে: ‘প্রতিটি কাজের জন্য লড়াই’!”
এটি পরিষ্কার যে করোনা মোকাবিলা-র নামে সে দেশে যে সব বিধিনিষেধগুলি চাপানো হয়েছে, যেমন সমাবেশের অধিকার খর্ব করা এবং দেশের ভেতরে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা – সেগুলো স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য মোটেই নয়। বরং মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করার জন্য। এদিনের সভায় যুদ্ধবাজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিপীড়নকে তীব্র সমালোচনা করা হয় পিপলস কমিটি ফর সেল্ফ-ডিটারমাইন্ড অস্ট্রিয়ার এক বক্তৃতায়। “শোষকদের মিথ্যা বিশ্বাস করো না, বিদ্রোহ ন্যায়সঙ্গত!” এদিনের সভায় এই শ্লোগানটি সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয়।
এই বিক্ষোভ অস্ট্রিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের উপর শাসক শ্রেণির আক্রমণগুলির বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বিক্ষোভের নেতাদের বক্তব্য, শাসকদের রাজনীতির বিরুদ্ধে, গণ-ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত ক্রোধকে যদি বেড়ে চলা দারিদ্র্য এবং গণতান্ত্রিক অধিকার নির্মূল করার বিরুদ্ধে সংগঠিত ভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে সংগ্রামে বিকাশ ও সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।