পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: আমূল রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে গত কয়েক মাস ধরেই উত্তাল থাইল্যান্ড। পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভের সূচনা বছরের শুরুতে। থাই আদালতের বিরোধী দল ফিউচার ফরোয়ার্ডকে ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলিতে প্রতিবাদ শুরু হয়। গত বছরের নির্বাচনের সময় থেকে দলটি তরুণদের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিল – ২০১৪ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পরে থাইল্যান্ডকে গণতন্ত্রের দিকে ফিরিয়ে আনা তাদের দাবি প্রধান ছিল। করোনভাইরাস মহামারির শুরু বিক্ষোভগুলিকে সাময়িক ভাবে বন্ধ করে। থাইল্যান্ড করোনভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ এড়াতে পারলেও, মহামারিটির অর্থনৈতিক প্রভাব দেশের শ্রেণি বৈষম্যকে স্পষ্ট তুলেছে।
১৯ সেপ্টেম্বর হাজারে হাজারে বিক্ষোভকারীরা রাজপ্রাসাদের বিপরীতে সানাম লুয়াং (রয়্যাল ফিল্ড)-এ পুলিশের আদেশ অমান্য করে শিবির করে। রবিবার সকালে প্রাসাদের বাইরে একটি ঘোষণাফলক লেখা হয় ‘এই দেশটি জনগণের এবং তারা রাজতন্ত্রের সম্পত্তি নয়। রাজপরিবার জনগণকে প্রতারিত করেছে।‘ বিক্ষোভকারীরা ‘সামন্ততন্ত্র মুর্দাবাদ, জনগণ দীর্ঘজীবী হোক’ স্লোগান দেয়।
বিক্ষোভকারীদের আশু দাবি রাজতন্ত্রের আমুল সংস্কার, রাজার বরাদ্দ বাজেট কমানো এবং রাজ সম্পদগুলি থেকে তার ব্যক্তিগত তহবিল আলাদা করা। এর সাথে তারা সংসদ ভেঙে দেওয়ার, সরকারের সমালোচকদের হয়রানির অবসান এবং সামরিক সংবিধানে বদলের দাবিও যোগ করেছে।
রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন ২০১৬ সালে তাঁর পিতা, রাজা ভূমিবোল আদুলিয়াদেজের মৃত্যুর পরে ক্ষমতায় আসেন। নিজের কর্তৃত্বকে আরও শক্তিশালী করে রাজপরিবারের সম্পদ এবং সামরিক বিভাগ সরাসরি তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন রাজা। থাইল্যান্ডে সংসদ থাকলেও রাজনৈতিক বিষয়ে নাক গলাতে শুরু করেছে রাজা।
থাইল্যান্ডে রাজপরিবারের সমালোচনা করলে আইন মোতাবেক হতে পারে ১৫ বছরের জেল। ২০১৫ সালে অনলাইনে রাজার কুকুরের ছবি শেয়ার করে মজা করার শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে এক ব্যাক্তি কে।
প্রায় ২৮ জন প্রতিবাদী নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। রাজতন্ত্রের সমালোচনা করার অভিযোগে ২,২০০ এরও বেশি ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার আইনজীবিদের বক্তব্য, রাজতন্ত্র বিরোধী কয়েক হাজার লিফলেট বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। এছাড়াও কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও অভিভাবকদের চাপ দিয়ে এই বিক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। তবে হুমকির মুখে পিছপা হচ্ছে না বিক্ষোভকারীরা। ১৯৭৩ এর ছাত্র অভ্যুত্থানের বার্ষিকী মাথায় রেখে ১৪ ই অক্টোবর একটি সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তারা। শ্রমিক শ্রেণিকে যুক্ত করে এই আন্দোলনেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিতও রয়েছে ছাত্রদের কর্মসূচিতে।