পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: মাওবাদী অধ্যুষিত বস্তার অঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যুবকদের নিয়ে ‘বস্তার স্পেশাল ফোর্স’ বানাতে চলেছে ছত্তীসগঢ় পুলিশ। সোমবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল পুলিশের উঁচু স্তরের আধিকারিকদের এই নির্দেশ দিয়েছেন।
বস্তার ডিভিশনে সাতটি জেলা রয়েছে- বস্তার, কাঁকেড়, কোন্ডাগাঁও, দান্তেওয়াড়া, নারায়ণপুর, সুকমা ও বিজাপুর। ১৯৮০ সাল থেকে এই গোটা অঞ্চলের মাওবাদী কার্যকলাপ চলছে এবং তা ক্রমেই বেড়েছে। বস্তারের একটি বড়ো এলাকা সম্পূর্ণ ভাবে মাওবাদীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে বিভইন্নসময়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মাওবাদী অধ্যুষিত প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের যুবকদের এই বাহিনীতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। এই বাহিনী তাদের উপার্জনের সুযোগ করে দেবে।
গভীর জঙ্গলের অচেনা কঠিন পথ ও স্থানীয় ভাষা না জানার ফলে বস্তারে নিযুক্ত পুলিশকর্মীরা অসুবিধার মধ্যে পড়েন। বস্তারের স্থানীয় যুবকদের নিয়ে এই বাহিনী তৈরি হলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পুলিশের সুবিধা হবে।
বিচারপতি পট্টনায়ক কমিটির সুপারিশ মেনে ছোটোখাটো অপরাধে কারাবদ্ধ আদিবাসীদের দ্রুত মুক্তি দেওয়ার জন্য পুলিশকে উদ্যোগ নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের জেলে আটকে থাকা ২৩ হাজার আদিবাসীর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখার জন্য গত বছরের মার্চ মাসে একটি সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
গত বছর ওই প্যানেলের কাছে ৬২৫টি মামলা হাজির করা হয়েছেল, যার মধ্যে ৪০৪টি তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেয় প্যানেল। ২০৬টি মামলা আদালতে নিষ্পত্তি হয়। বাঘেল এদিন আদিবাসীদের বিরুদ্ধে চলা মামলাগুলি প্রতি মাসে মূল্যায়ন করার নির্দেশ দেন পুলিশকে। পুলিশের নীচের তলার কর্মীদের ব্যক্তিগত সমস্যাগুলির দিকে নজর দেওয়া ও সেগুলি দ্রুত সমাধান করার জন্য আধিকারিকদের বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
২০০৫ সালের পর পূর্বতন বিজেপি সরকারের জমানায় বস্তার পুলিশ স্থানীয় যুবকদের নিয়ে একটি পরীক্ষানিরীক্ষা চালায়। তাদের স্পেশাল পুলিশ অফিসার(এসপিও)হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। কথা ছিল, তারা মূল বাহিনীকে সাহায্য করবে। কিন্তু পুলিশের সমর্থনে সেই বাহিনী নিজেরাই বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে তল্লাশি চানাতে শুরু করে এবং স্থানীয়দের মাওবাদী বলে হেনস্থা করতে থাকে।
২০০৫ সালে স্থানীয় কংগ্রেসি বিধায়ক মহেন্দ্র কর্মার নেতৃত্বে শুরু হয় ‘সালওয়া জুড়ুম’(শান্তি অভিযান)। যা ছিল একটি মাওবাদী বিরোধী অভিযান। তাতে যোগ দেয় ওই এসপিও-রাও। এই অভিযান চলে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ওই তিন বছর অভূতপূর্ব হিংসার সাক্ষী ছিল বস্তার। এসপিও-রা যেমন স্থানীয় মানুষদের ওপর নির্বিচারে হিংসা চালিয়েছিল, তেমনই এই মাওবাদী-বিরোধী অভিযানকে উচ্ছেদ করতে বড়ো মাপের সশস্ত্র আক্রমণ চালায় মাওবাদীরাও। শেষ পর্যন্ত এই মাওবাদী-বিরোধী অভিযান বিপর্যস্ত হয়।
এসপিও-রা সাধারণ নাগরিক। তাদের জঙ্গি-বিরোধী সশস্ত্র কার্যকলাপের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়। মাসে মাসে কিছু টাকাও দেওয়া হয়।
২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয়, ছত্তীসগঢ়ের মাওবাদী দমনের মতো অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে এসপিও-দের নিয়োগ করা যাবে না। তারপর বহু এসপিও-কে অ্যাসিস্ট্যান্ট কনস্টেবল পদে পুলিশে চাকরি দেওয়া হয়।
সে কথা মাথায় রেখেই এবার ছত্তীসগঢ় পুলিশের অঙ্গ হিসেবে এই নতুন বাহিনী তৈরি করতে চাইছে রাজ্য সরকার। যাতে আদালত তা বেআইনি ঘোষণা না করতে পারে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, আদিবাসীদের প্রতিরোধের ফলে বস্তার অঞ্চলের বহু খনিপ্রকল্প আটকে রয়েছে। সেগুলি চালু করার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে দেশি-বিদেশি বৃহৎ পুঁজিপতিরা। গোটা লকডাউন পর্যায় জুড়ে দেশের আর্থিক ও শিল্প ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণকে এক নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। গোটা দুনিয়ায় গভীর সংকটে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা। এই অবস্থায় প্রতিটি কর্মসূচিকে রূপায়ণ করার জন্য আক্রমণাত্মক না হয়ে তাদের উপায় নেই। সেই জায়গা থেকেই এই নতুন উদ্যোগ ছত্তীসগঢ় সরকারের।