Home কৃষি কেন্দ্রের তিন কৃষি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে হরিয়ানায় কৃষকদের মিছিল, পুলিশের লাঠিচার্জ
0

কেন্দ্রের তিন কৃষি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে হরিয়ানায় কৃষকদের মিছিল, পুলিশের লাঠিচার্জ

কেন্দ্রের তিন কৃষি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে হরিয়ানায় কৃষকদের মিছিল, পুলিশের লাঠিচার্জ
0

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: কেন্দ্রীয় সরকারের তিনটি কৃষি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে মিছিল করলেন কয়েকশো কৃষক ও কৃষিপণ্য ব্যবসার মধ্যস্থতাকারী। হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র জেলার পিপিলিতে। মিছিল স্থায়ীয় শস্য বাজারের দিকে এগোতেই মিছিলের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পুলিশ। অভিযোগ, করোনা পরিস্থিতিতে এই ধরনের মিছিল বেআইনি। মিছিলের আয়োজক ছিল ভারতীয় কৃষক ইউনিয়ন(বিকেইউ)। লাঠিচার্জের পর ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন কৃষকরা।

গত জুন মাসে তিনটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা তিনি অধ্যাদেশ পাস করে। সেগুলি হল, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য(বিপণন ও সরলিকরণ)অধ্যাদেশ, কৃষকদের মূল্য নিশ্চয়তা ও খামার পরিষেবা চুক্তি(ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা) অধ্যাদেশ এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন, ১৯৫৫-র একটি সংশোধনী।

কেন্দ্রের বক্তব্, এই তিনটি অধ্যাদেশ কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে এবং তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো কৃষিপণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন। যদিও কৃষকদের মতে, সংস্কারের নামে কেন্দ্র কৃষিপণ্যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিং হুদার মতে, ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আনতে গেলে, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ও কৃষক মান্ডিকে রক্ষা করেই তা আনতে হবে। বর্তমান অধ্যাদেশগুলি কৃষক বিরোধী। অন্যদিকে চাপের মুখে হরিয়ানার কৃষিমন্ত্রী জে পি দালাল বলেছেন, সে রাজ্যে সব শস্যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বজায় থাকবে।

বিকেইউ-র রাজ্য শাখার প্রধান গুরনাম সিং বলেন, তিনটি অধ্যাদেশ কৃষকদের বিপর্যস্ত করে দেবে, তারা বড়ো ব্যবসায়ীদের দয়ার ওপর বাঁচতে বাধ্য হবেন। এর আগেও হরিয়ানা ও পঞ্জাবে কেন্দ্রের অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে।

অধ্যাদেশগুলি কী কী?

অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের সংশোধনী অনুযায়ী, শস্য, ডাল, ভোজ্য তেল চিনির মতো সমস্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যকে বিনিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। অর্থাত, এগুলি এখন থেকে যত খুশি জমা করা যাবে এবং অন্যত্র পাঠানো যাবে।  কেবলমাত্র প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে সরকার একে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ব্যবসায়ীদের কৃষককে পণ্য ক্রয়ের দিনে বা পরবর্তী তিনটি কাজের দিনের মধ্যে দাম চুকিয়ে দিতে হবে। এই অধ্যাদেশের বলে মান্ডির বাইরে রাজ্যের অন্যত্র বা ভিন রাজ্যে কৃষপণ্য নিয়ে যাওয়া যাবে। এছাড়া এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী ‘তালিকাভুক্ত কৃষক’রা ‘বাণিজ্যিক এলাকা’য় বৈদ্যুতিন মাধ্যমেও পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।

‘বাণিজ্যিক এলাকা’র সংজ্ঞায় অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, “যে কোনো উৎপাদনস্থল, শস্য সংগ্রহ ও মজুত করার জায়গা- যার মধ্যে থাকবে খামারে ঢোকার দরজা, কারখানা চত্বর, মজুতঘর, কোল্ড স্টোরেজ অথবা অন্য কোনো জায়গা যেখান থেকে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য কেনাবেচা করা যায়”। কৃষিপণ্যের বাজার কমিটির মান্ডি এবং বেসরকারি বাজারগুলি এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

বস্তুত এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে কৃষিপণ্য কেনাবেচায় কৃষিপণ্যের বাজার কমিটির একচেটিয়া ক্ষমতা লোপ করা হয়েছে। যে কাউকে কৃষিপণ্য কেনাবেচার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ম না মানলে তাকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে।

অন্য অধ্যাদেশে কৃষকদের বেসরকারি সংস্থাকে পণ্য বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য

বিশেষজ্ঞদের মতে এই তিনটি অধ্যাদেশের কোথাও বন্যা, খরার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চাষিদের সাহায্য করার কোনো সংস্থান নেই। অর্থাত সরকার চাষিদের সাহায্য করতে বাধ্য নয়। এছাড়া অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছে, তাতে বেসরকারি সংস্থাগুলি লাভবান হবে। কৃষক এবং উপভোক্তাদের কোনো লাভই হবে না। বরং কর্পোরেটরা শস্য মজুত করে কালোবাজারি করার সুযোগ পাবে।

এছাড়া কৃষিপণ্যের ব্যবসা বানিজ্যের যে অধ্যাদেশ আনা হয়েছে, তাতে কৃষকদের যে কোনো জায়গায় পণ্য বিক্রির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগ বরাবরই ছিল। নতুন অধ্যাদেশ এনে জনগণের প্রয়োজনে তাতে হস্তক্ষেপ করার সরকারি অধিকার ঐতিহাসিক ভাবে বাতিল করা হল।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *