পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: গত এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন দাবি করেছিল করোনা অতিমারির ফলে ভারতের ৪০ কোটি অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী গভীর সংকটে পড়বেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে লকডাউনের ফলে দেশের দারিদ্র্য বাড়বে। কিন্তু কতটা বেশি হবে, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
করোনা-অতিমারি গোটা দুনিয়ার অর্থনীতিতে বড়ো মাপের সংকট ডেকে আনলেও বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকজন বিলিওনেয়ার(১ বিলিয়ন হল ১০০ কোটি)গত কয়েক মাসে সম্পত্তি বাড়িয়েছেন। অথচ এই সময়টাতে সাধারণ মানুষের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়েছে।
আমেরিকায় মার্চ থেকে তিন মাসে বিলিওয়েনারদের ঝুলিতে জমা পড়েছে ৫৬৫ বিলিয়ন ডলার। জানুয়ারি থেকে আমাজনের মালিক জেফ বেজোসের লাভ হয়েছে ২৫ বিলিয়ন। কারণ এই সময়ে মার্কিনরা অনলাইন কেনাকাটা ব্যাপক বাড়িয়েছেন। জুলাইয়ের ২০ তারিখে, একদিনে বেজোসের ১৩ বিলিয়ন ডলার লাভ হয়েছে। ২০২১ সালে ব্লুমবার্গ বিলিওনেয়ার ইনডেক্স তৈরি হওয়ার পর একদিনে কোনো বিলিওনেয়ারের এত সম্প্ততি হয়নি। ২০২০ তে তার সম্পত্তির পরিমাণ ৭৪ বিলিয়ন ডলার বেড়ে হয়েছে ১৮৯ বিলিয়ন ডলার। এই সময়টায় মার্কিন অর্থনীতি তার সর্বকালীন সংকটের মধ্যে রয়েছে।
আমেরিকার অন্যান্য যারা অতিমারিতে বিপুল লাভ করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছে, জুমের সিইও এরিক ইউয়ান এবং মাইক্রোসফটের প্রাক্তন সিইওস্টিভ বালমের। বালমের স্কাইপের মালিক। দুজনেই ভিডিও কনফারেন্সিং থেকে লাভ করেছেন। ফেসবুকের মালিক মার্ক জুকেরবার্গ এ বছর এ পর্যন্ত ৯.১ বিলিয়ন লাভ করেছেন।
১০ আগস্ট পর্যন্ত এ দেশের মুকেশ অম্বানির সম্পত্তি বেড়ে হয়েছে ৭৯.৩ বিলিয়ন ডলার। তিনি এখন পৃথিবীর চতুর্থ ধনীতম ব্যক্তি। এ বছর তার সম্পত্তি বেড়েছে ২২ বিলিয়ন ডলার। অম্বানি ধীরে ধীরে তার ব্যবসা ই কমার্সের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। লকডাউনে তেলের ব্যবসায় ক্ষতি হলেও এই সময়ে তার ডিজিটাল ব্যবসায় ফেসবুক ও গুগুল বিনিয়োগ করেছে। ফলে মার্চে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারের দামে ধস নামলেও বর্তমানে তা দ্বিগুনের বেশি বেড়ে গেছে।
কোভিডের বাজারে ভারতের ওষুধ সংসংথাগুলির শেয়ার দর প্রচুর বেড়েছে। সান ফার্মার দিলীপ সাংভি, রেডেডি ল্যাবরেটরির মালিক রেডেডি পরিবার, ওরবিন্দ ফার্মার পিভি রেড্ডি, ডিভিস ল্যাবরেটরির মুরলি কে ডিভি, সিপলা ওয়াইকে হামিদ, প্রতিটি সংস্থার মোট দাম দ্বিগন হয়েছে অতিমারিতে। এয়ারটেলের সুনীল মিত্তল এবং আদানি গ্রুপের গৌতম আদানির সম্পত্তিও ব্যাপক বেড়েছে।
আমাদের দেশে যে কুৎসিত অসাম্য ছিলই তা এই অতিমারিতে আরও বেড়েছে। এ নিয়ে বিশেষ চর্চা হচ্ছে না। কোভিডের জেরে ভারতে গরিবের সংখ্যা দ্বিগন হয়ে যেতে পারে। তাদের আয় যদি ২৫ শতাংশ কমে, তাহলে নতুন করে ৩৫ কোটি ৪০ লক্ষ ভারতীয় গরিব হবেন।
এ সবের চেয়েও বড়ো সমস্যা হল, এই সব অতি ধনীদের সম্পদের কিছু অংশ কাজে লাগিয়ে দেশের দারিদ্র্য কমানোর মতো সাদামাটা সংস্কারমূলক পদক্ষেপ করতেও নারাজ ভারতের শাসক শ্রেণি। তারা তেলা মাথায় তেল দিয়েই চলেছেন।