‘ভ্যাকসিন আসতে বহু দেরি, এখনই লকডাউন তুলুন’, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি চিকিৎসকদের
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: প্রথমে বলা হয়েছিল স্বাধীনতা দিবসেই হাজির হবে দেশের মাটিতে তৈরি করোনা ভ্যাকসিন। তা হয়নি। স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, দেশে তিনটি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। বণ্টন ব্যবস্থা প্রস্তুত আছে। বিজ্ঞানীরা সবুজ সংকতে দিলেই তা জনগণকে দেওয়া শুরু হবে। অন্যদিকে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউড ও এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী বারবারই আকারে ইঙ্গিতে বলছেন, ডিসেম্বরেই দেশে ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে য়াবে। বহু চিকিৎসকই কিন্তু একমত নন।
শ্বাসকষ্ট, বক্ষ চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের তিনটি সংগঠন- IPHA, IAPSM এবং IAE, এক যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এখনই ভ্যাকসিনের কোনো আশা নেই। ভারতের মাটিতে প্রতিষেধক তৈরি হতে অন্তত ১৮ মাস লাগবে। সেটা যদি হয়, তাহলে সেটাও হবে নেহাত বিরল ঘটনা। সাধারণত ভ্যাকসিন তৈরিতে এক দশকেরও বেশি সময় লাগে। যখন ভ্যাকসিন বেরোবে তখন হু-র নির্দেশিকা মেনে জনগণকে দেওয়া যাবে। এই পরিস্থিতিতে ওই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এখনই সব রকমের লকডাউন তুলে জনজীবন স্বাভাবিক করে দেওয়া দরকার। কারণ এমনিতেও ভারতে মহামারি ঠেকাতে ভ্যাকসিন কোনো ভূমিকা পালন করে না।
চিকিৎসকদের বক্তব্য, আপাতত কিছু এলাকা ঘিরে বিধিনিষেধ আরোপ করা যেতে পারে। তাঁরা আরও বলেছেন, বড়ো বড়ো শহরে ইতিমধ্যেই বহু মানুষের সংক্রমণ হয়েছে। তাই এখন বেশি টেস্টিং ও আইসোলেশনে গুরুত্ব দেওয়া অর্থহীন। এখন নজর দিতে হবে মৃত্যু কীভাবে কমানো যায়, সেদিকে। সেই মতোই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে প্রস্তুত করতে হবে। তারা তাদের এই বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়েও দিয়েছেন। বস্তুত মহামারি শুরুর পর থেকেই এই তিনটি সংগঠন যৌথ ভাবে কেন্ত্রীয় সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসছে। এটি তাদের তৃতীয় যৌথ বিবৃতি।
এখন প্রশ্ন হল, চিকিৎসকরা যদি মনে করেন এবং জানেন যে ভ্যাকসিন আসতে খুব তাড়াতাড়ি হলেও কমপক্ষে দেড় বছর লাগবে। আর সাধারণ ভাবে প্রায় এক দশক লাগতে পারে, তাহলে দুনিয়া জুড়ে যে তিন মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন তৈরির গল্প ছড়ানো হচ্ছে, সেটা কী! বলাই বাহুল্য, ভ্যাকসিন আবিস্কারের সবকটি ধাপ সম্পূর্ণ না করেই সেক্ষেত্রে বাজারে ভ্যাকসিন ছেড়ে দেওয়া হবে। জনগণ পকেটের পয়সা দিয়ে তা কিনে, নিজেরাই পরীক্ষার গিনিপিগ হবেন। কোভিডের মৃত্যুহার এমনিতেই নগণ্য, তার শক্তিও দুর্বল হয়ে এসেছে। সে তার নিজের নিয়মেই গুরুত্ব হারাবে। নাম হবে ভ্যাকসিনের। এটা অবশ্যই বড়ো বড়ো ওষুধ সংস্থা, বৃহৎ শিল্পপতি, বিল গেটসের মতো একচেটিয়া ভ্যাকসিন ব্যবসায়ীদের চক্রান্ত। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন দেশের শাসক দলগুলি। য়ারা জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে লকডাউন জারি রেখে বিভিন্ন জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে। অন্যদিকে লকডাউন চলায়, প্রতিবাদ করতে পারছে না জনগণ। বস্তুত, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ফ্যাসিবাদকে স্বাভাবিক ব্যবস্থা করে তোলা হচ্ছে।
যে ভাবে এবং ভাষায় চট জলদি ভ্যাকসিন তৈরির গল্প ফাঁদা হচ্ছে এবং সেই গল্প কে বিশ্বাস যোগ্য করার জন্য অবিরত প্রচার চালানো হচ্ছে, প্রথমেই এর আসল স্বরূপ জনসমক্ষে তুলে ধরা উচিত । এত স্বল্প কালে কোন ভ্যাকসিনই পৃথিবীতে এর আগে কখনও আসেনি । এখনও আসবে না- খুবই স্বাভাবিক। পুঁজিবাদের বিকাশের সময় কালে স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যাপারটা যে রকম গুরুত্ব বহন করত, এখন সেটা সম্ভব নয়। পুঁজিবাদের পতনের সময় ফাটকাবাজি এমন স্তরে পৌঁছেছে
, যেখানে মিথ্যা বলাই মূল নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন বহির্ভূত মুনাফা এখানে প্রধান লক্ষ্য । তাই, সে ভ্যাকসিন যদি অতি সত্বর বের হয় সেটা কভিডের বিরুদ্ধে না লড়ে মুনাফার জন্য সারা বিশ্বের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে বলেই আমার ধারণা ।
অঁ