‘মন কি বাত’-এর ভিডিওয় আড়াই লক্ষ ডিজলাইক! স্বতস্ফূর্ত নাকি ডিজিটাল লড়াইয়ে নতুন মাত্রা?
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা শুরুর দিকে যথেষ্ঠ থাকলেও যত দিন গেছে তা কমেছে। অন্যদিকে সম্প্রচারের পর ইউটিউবে আপলোড করা হলেও এটি মূলত রেডিওর অনুষ্ঠান। সে কারণেই হয়তো বিজেপির আইটি সেল ফেসবুক, ওয়াটস্অ্যাপকে যতটা গুরুত্ব দিয়ে থাকে, একে ততটা নয়। সাম্প্রতিক কালে ফেসবুক ও ওয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে বিজেপির অনৈতিক সম্পর্কের কথা সামনে এসেছে। তা নিয়ে ব্যাপক হইচইও হয়েছে। এ সবের মধ্যেই চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে গেল রবিবার।
রবিবার প্রধানমন্ত্রী তার নির্ধারিত ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানটি করেন। সেটি ইউটিউবে আপলোড হওয়ার পরই দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর ভিডিওয় যত না লাইক পড়ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি গুন পড়ছে ডিজলাইক। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, যে সোমবার সকালে একসময় দেখা যায়, লাইক ২৯ হাজার আর ডিজলাইক আড়াই লক্ষেরও বেশি। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, জেইই, নিট এবং কলেজের ফাইনাল পরীক্ষাগুলি সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা হওয়ার পরেই দেশ জুড়ে পড়ুয়াদের একটা বড়ো অংশ ক্ষুব্ধ। তারাই দলে দলে ডিজলাইক দিয়েছেন। অন্যদিকে রবিবার সারাদিন ট্যুইটারে ট্রেন্ডিং ছিল #Mann_Ki_Nahi_Student_Ki_Baat। সেই মর্মে পোস্ট করেছিলেন রাহুল গান্ধীও।
তবে পড়ুয়াদের ক্ষোভ থাকলেও ব্যাপারটা এত সরল নয়। একটু ভাবলেই বোঝা যাবে, এর মধ্যে একটা সংগঠিত প্রয়াস আছে। সোশাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণে বিজেপি অনেকটা এগিয়ে থাকলেও, এদিনের টুইটার ও ইউটিউব বলছে, সাম্রাজ্যবাদীদের যে অংশটা বিজেপি-র বিরোধী, তারা এখানে সক্রিয় রয়েছে।ফেসবুক, ওয়াটসঅ্যাপের বাইরে অন্যান্য সোশাল মিডিয়াকে তারা কাজে লাগাতে চাইছে। তাছাড়া সম্প্রতি কংগ্রেস দলে নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ তৈরি হওয়ার পরপরই দেশের বিজেপি-বিরোধী দলগুলি সক্রিয়তা বাড়িয়েছে। সামনের সারিতেই রয়েছে কংগ্রেস। কলেজের পরীক্ষাগুলিকে তারা ইস্যু করে তোলার চেষ্টা করছে। কংগ্রেসের অন্তর্দলীয় কোন্দল যাতে বেশিদিন শিরোনামে না থাকতে পারে, এটা তারই প্রয়াস।
তবে মনে রাখতে হবে, সোশাল মিডিয়ার এই লড়াই আজকের দিনে মধ্যবিত্তের একটা অংশকে প্রভাবিত করতে পারলেও তা কখনওই পথে নেমে লড়াইয়ের বিকল্প নয়। বরং এই লড়াই শোষিত মানুষের একাংশের মধ্যে এই বিভ্রম তৈরি করতে পারে যে ঘরে বসে এই লড়াইটা চালালেই ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করা যাবে বা সমাজে কিছু বুনিয়াদি পরিবর্তন আসবে। এটা পুঁজিবাদের একটা ছক ছাড়া কিছু নয়। তাই সোশাল মিডিয়ার লড়াইকে এড়িয়ে না গেলেও, পথে নেমে লড়াইয়ের জন্য জনগণকে সবসময়ই নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। সেটাই প্রধান।
ছবি: সংবাদ প্রতিদিন