Home খবর কোভিড -১৯ ভারতে শরণার্থীদের চূড়ান্ত দুরবস্থায় ঠেলে দিয়েছে
0

কোভিড -১৯ ভারতে শরণার্থীদের চূড়ান্ত দুরবস্থায় ঠেলে দিয়েছে

কোভিড -১৯ ভারতে শরণার্থীদের চূড়ান্ত দুরবস্থায় ঠেলে দিয়েছে
0

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: স্বাস্থ্য পরিষেবা নেই। জমানো টাকা নেই। চাকরি নেই। চারদিকে রয়েছে জাতিবিদ্বেষমূলক ঘৃণার দৃষ্টি। সংক্রমণের আতঙ্ক সঙ্গে নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন দেশের সবচেয়ে দুর্বল অংশের মানুষ।

মায়ানমারে অত্যাচার থেকে বাঁচতে ভারতে পালিয়ে আসা ৪ হাজার রোহিঙ্গার দিল্লির নানা অংশে বসবাস। জীবনধারণের জন্যে তারা কম টাকায় বিভিন্ন শ্রমের কাজ করে থাকে। লকডাউন শুরু হওয়ার সাথে সাথে তারা কাজ হারিয়েছে। বাড়ি ভাড়াটুকুও দিতে পারছেন না। এই মানুষগুলির বেঁচে থাকার উপায় এখন গির্জা আর বিভিন্ন এনজিও থেকে দেওয়া রেশন। সঙ্গে রয়েছে বাড়িওয়ালার উচ্ছেদ করে দেওয়ার হুমকি। এই অবস্থায় তাদের নতুন করে কাজের সন্ধান করা সহজ নয়,  কারণ তাদের কাছে ‘ওয়ার্কিং ভিসা’ নেই।

সোমালিয়া, আফগানিস্তান, মায়ানমার এবং অন্যান্য দেশ থেকে ভারতে আসা ২,০০,০০০ শরণার্থীর জীবনে অনিশ্চয়তার ছায়া ঘনিয়েছে। ভারতে নিয়ম অনুযায়ী কোনো শরণার্থী কাজের ভিসা না পাওয়া পর্যন্ত আইনত কাজ করতে পারে না। এই ভিসা পাওয়া এক ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া, যাতে বহু মাস সময় লাগে।

হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্কের সিনিয়র আইনজীবী ফজল আবদালি জানিয়েছেন, দেশে মাত্র  ১০% এরও কম শরণার্থীর কাজের ভিসা রয়েছে। বেশিরভাগই অশিক্ষিত, তারা  অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিক অথবা দুটিরও বেশি ভাষা জানা থাকলে পর্যটনস্থলগুলিতে অনুবাদক এবং গাইড হিসাবে কাজ করে। এর বেশিরভাগ কাজই মহামারিতে বন্ধ  হয়ে গেছে। ভাড়ার বোঝা, সঞ্চয়ের অভাব, চাকরির সুযোগ না থাকা, ক্রমশ বেড়ে চলা জাতিবিদ্বেষ এবং ভাইরাস সংক্রমণের ভয় শরণার্থীদের চরম সমস্যায় ঠেলে দিচ্ছে। দৈনিক মজুরদের জন্য সরকার প্রদত্ত সামাজিক সুরক্ষা প্যাকেজের কোনোটিতেই অ-নাগরিকদের অধিকার নেই।

জুনে মহামারি সম্পর্কে আলোচনায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস স্বীকার করেছেন যে বিশ্বব্যাপী সাত কোটিরও বেশি শরণার্থী একই সাথে তিনটি সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে: এক, স্বাস্থ্য সঙ্কট, কারণ প্রায়শই তারা ঘিঞ্জি, অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে বসবাস করে, দ্বিতীয়, আর্থ-সামাজিক সংকট এবং সুরক্ষার অভাব। “এরই সাথে কোভিড -১৯ এর আতঙ্ক, জাতিবিদ্বেষ, বিদেশিদের সম্পর্কে আতঙ্ককে ব্যাপক ভাবে বাড়িয়েছে” তিনি বলেন।

২৫ বছর বয়সি মোহাম্মদ হাফেস ২০০৮ সালে তার ঠাকুমার সহায়তায় ভারতে এসেছিলেন। সোমালিয়ার একটি জঙ্গি গোষ্ঠী তার বাবাকে খুন এবং মাকে অপহরণের পরেই তিনি ভারতে চলে আসেন। সোমালি সম্প্রদায়ের সহায়তায় হাফেস দক্ষিণ দিল্লিতে ভাড়াবাড়ি খুঁজে, ফটোগ্রাফি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ শিখেছেন এবং  ভারতে বসবাসকারী আফ্রিকানদের উপর ডকুমেন্টারি তৈরি করেন। সোমালি ছাড়াও হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি এবং আরবি ভাষায় সাবলীল হাফেস অনুবাদের কাজও করতেন। এক বছর আগে, তিনি একটি স্থানীয় প্রকাশনীতে একটি চাকরি পেয়েছিলেন, তবে এক প্রতিবেশী পুলিশের কাছে তার ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই কাজ করার বিষয়ে অভিযোগ জানাতে সেই কাজটিও চলে যায়। হাফেস জানিয়েছেন, “আমার বাড়ির কাছের লোকেরা আমাকে ‘হাবশি, ‘কাল্লু বলে ডাকে, তারা আমাকে অভিশাপ দেয়, আমাকে ফিরে যেতে বলে”। হাফেস এমবিএ করে ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্নপূরণ করতে চান।

হাফেসের প্রতিবেশী এবং আরেকজন সোমালি শরণার্থী আলির কথায় “আমি সম্মানের সাথে বাঁচার মৌলিক অধিকার চাই। আমার পিএইচডি করা আছে তবে আমি কাজ করতে পারি না কারণ এদেশের ওয়ার্কিং ভিসা নেই। ইউএনএইচসিআর থেকে কোনও সাহায্য করা হয় না।” ৪০ বছর বয়সি আলি ১৪ বছর আগে সোমালিয়া থেকে পালানোর আগে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভূগোল ও ইতিহাস পড়াতেন। হাফেসের মতো তিনিও অনুবাদক ও গাইড হিসাবে কাজ করে বেঁচে আছেন।

ভারতে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে ইউএনএইচসিআর শুকনো রেশন সরবরাহ করে আসছে, এবং বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, ঝুঁকিতে আক্রান্ত মহিলাদের এবং  যাদেরচিকিৎর সহায়তার প্রয়োজন, তাদের মাসিক ভাতা দিয়ে আসছে। এখনও অবধি তারা শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী পরিবারগুলিকে ১০,৮২০ টি খাদ্য প্যাকেজ দিয়েছে। ইউএনএইচসিআর, ভারতের মুখপাত্র এবং জাতিসংঘ সংস্থার সহকারী বহিরাগত সম্পর্ক কর্মকর্তা কিরি আতরি জানিয়েছেন “আমরা বিশেষত শরণার্থীদের উপর কোভিড-১৯ এর আর্থ-সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। ইউএনএইচসিআর এবং তার অংশীদাররা রোগের প্রভাব কমাতে কঠোর পরিশ্রম করছে তবে আরও সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে”।

আইনজীবী আবদালি জোর দিয়ে বলেছেন, সরকারের কিছু কার্যকর নীতি থাকা দরকার যা শরণার্থীদের কাজ করতে দেবে। “শরণার্থীদের বিষয়ে পৌরসভা আইন নেই, এটি রাষ্ট্রের আওতায় পড়ছে। আইনগুলির মধ্যে তাদের সম্পর্কে কোনো কথা নেই। তারা কেন রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে থাকবে? প্রত্যেকের জীবনের অধিকার থাকা উচিত। এবং শরণার্থীরা নিজেরাই অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে চায় না। তারা কাজ করতে চায়”।

কাজের ভিসা না থাকা একমাত্র সমস্যা নয়। দিল্লিতে লকডাউন নিষেধাজ্ঞাগুলি আংশিক শিথিল হওয়ায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে, কিন্তু ভারতে ১৮০০০ রোহিঙ্গা যারা দিনমজুর হিসাবে কাজ করতেন তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের ত্রিপলের আশ্রয়ে সীমাবদ্ধ। রোহিঙ্গা মুসলমানদের তবলিগি জামাতের ঘটনার সাথে যুক্ত করায় তাদেরকে নানা সময়ে ‘করোনা বোমা’ ইত্যাদিতে অভিহিত করা হচ্ছে।

অন্যদিকে শরণার্থীদের সাথে সহাবস্থান করা অন্যান্য স্থানীয় অভিবাসী এবং শ্রমিক সম্প্রদায়গুলির সমস্যা আরও জটিল।প্রায়শই, ত্রাণকার্য রোহিঙ্গাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, অন্য অভিবাসী জনগোষ্ঠী তার সুযোগ পায় না। ওড়িষার পরিযায়ী শ্রমিক রামা মার্চের পর থেকে মাত্র দুবার বিনামূল্যে খাবারের প্যাকেজ পেয়েছেন। “প্রত্যেকে রোহিঙ্গাদের কাছে সরাসরি যায়, কেউই আমাদের কাছে আসে না,” অভিযোগ করেন ৫০ বছর বয়সী রামা যিনি মার্চের আগে একটি নির্মাণ স্থলে কাজ করতেন। তার প্রতিবেশী রোহিঙ্গারাই তাকে খাবার দিয়ে সাহায্য করেছে।

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য, শরণার্থীদের সাথে থাকা স্থানীয় সম্প্রদায়ের সংবেদনশীল হওয়া জরুরি, আবদালি বলেছেন। “তা না হলে দুজনের মধ্যে দন্দ্ব থাকবে। উদ্বাস্তুরা কতটা দুর্বল তা তাদের বোঝানো দরকার।”

সূত্র: দ্য প্রিন্ট

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *