Home খবর জনগণকে কোভিডের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করল চিন, অনুমতি না পেয়ে ট্রাম্প বলছেন ‘ডেমোক্র্যাটদের চক্রান্ত’

জনগণকে কোভিডের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করল চিন, অনুমতি না পেয়ে ট্রাম্প বলছেন ‘ডেমোক্র্যাটদের চক্রান্ত’

জনগণকে কোভিডের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করল চিন, অনুমতি না পেয়ে ট্রাম্প বলছেন ‘ডেমোক্র্যাটদের চক্রান্ত’
0

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: দুনিয়ার বাজার ধরতে প্রতিটি ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থাই যে প্রতিষেধক তৈরির সব কটি ধাপ পূরণ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিন বাজারে আনতে চাইছে, সেটা এতদিনে জলের মতো পরিষ্কার। নিরাপত্তা এবং অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে কিনা, সেটুকু কোনো মতে দেখে নিয়েই সকলে বাজারে ভ্যাকসিন আনতে উদগ্রীব। সেটা কতটা কাজ করছে বা কতদিন কাজ করবে, তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না।

সকলেরই মাথায় রয়েছে, বেশি দেরি হলেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দুনিয়ার সব ঘন বসতিপূর্ণ শিল্পোন্নত অঞ্চলে মানুষের মধ্যে গোষ্ঠী প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে। সেই অঞ্চলের মানুষ আর পকেটের পয়সা খরচ করে ভ্যাকসিন নেবে না। তাছাড়া যেহেতু কোভিডের মারণক্ষমতা খুবই কম, তাই যত দিন যাবে, ততই কর্পোরেট সংস্থা আর তাদের হয়ে বশংবদ সরকারগুলোর চাপিয়ে দেওয়া আতঙ্ক মানুষ কাটিয়ে উঠবে। ওদিকে অন্যান্য অঞ্চলগুলির মানুষের মধ্যে ব্যবসা করার সুযোগ কম, কারণ তাদের হাতে পয়সা নেই। দেশের সরকারগুলো বিনা পয়সায় তাদের প্রতিষেধক না দিলে সেখানে ব্যবসা করা মুশকিল। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলে রোগ ছড়াতে সময় বেশি লাগবে, আর যত দিন যাবে ভাইরাস দুর্বল হবে।

এসব ছাড়াও একটা জরুরি বিষয় রয়েছে। কোভিডের কারণে এখনও দুনিয়া জুড়ে পণ্য উৎপাদন স্বাভাবিক হয়নি। যে দেশ প্রথম প্রতিষেধক তৈরি করে নিজেদের দেশের মানুষকে দিতে পারবে। বিশ্ব বাজারে পণ্য উৎপাদনে তারা এগিয়ে যাবে। সকলেরই মাথায় রয়েছে বছর খানেকের মধ্যে গোষ্ঠী প্রতিরোধ ক্ষমতা দুনিয়ার সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তৈরি হয়ে য়াবে, আধ সেদ্ধ প্রতিষেধক ততদিন কিছুটা নিরাপত্তা দিতে পারলেই যথেষ্ট। রাশিয়ার মতো কেউ খোলামেলা ঘোষণা করে দিচ্ছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো কেউ তলায় তলায় সেরামকে গিয়ে ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু করে দিলেও, মুখে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চালানোর দাবি করছে। যাতে রাতারাতি ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে যাওয়ার ঘোষণা করে প্রশ্নের মুখে পড়তে না হয়। ভারতে বায়োটেক সংস্থা আইসিএমআরের সঙ্গে যে ভ্যাকসিন বানাচ্ছে, সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকল্প। জাইডাস ক্যাডিলা কাদের হয়ে বা কাদের সঙ্গে কাজ করছে, সেটাও কিছুদিন পর জানা যাবে।

এর সঙ্গে রয়েছে রাজনীতির ময়দানে ভ্যাকসিনকে কাজে লাগিয়ে সফল হওয়ার চেষ্টা। ৩ নভেম্বর আমেরিকায় ভোট। তার আগে জনগণের অসুরক্ষিত অংশের উপর অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন আপদকালীন ব্যবহার করতে চাইছেন ট্রাম্প। কিন্তু সে দেশের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা তাতে অনুমতি দিচ্ছেন না। ট্রাম্পের দাবি, এর পেছনে রয়েছে ডেমোক্র্যাটদের চক্রান্ত। অন্যদিকে ভ্যাকসিন তৈরি হওয়ার আগেই প্রস্তুতকারক সংসংথা সেরাম বলে চলেছে, ডিসেম্বরে/৭৩ দিনের মধ্যে ভারতবাসী ভ্যাকসিন পাবে। জরুরি কথাটি বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার পর টুইট করে পিছু হঠলেও রাজনৈতিক মহলের অনুমান বিহার ভোটকে মাথায় রেখে বিজেপির ইঙ্গিতেই এই ধরনের খবর ছড়ানো হচ্ছে সংস্থার তরফে। এমনকি ওই ভ্যাকসিন তৈরি হওয়ার আগে রাশিয়ার ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করার সম্ভাবনাও রয়েছে। অক্টোবরে সে দেশের প্রেসিডেন্ট পুতিন ভারতে আসছেন।

চিনের অবশ্য দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার ব্যাপার নেই। তাদের যাবতীয় স্বার্থ আন্তর্জাতিক। সেই দেশ এখন বিশ্বায়িত পৃথিবীর কারখানা। দেশের শ্রমিকদের উৎপাদনক্ষম রাখতে পারলেই তারা দুনিয়া জুড়ে ব্যবসায় এগিয়ে থাকতে পারবে। চিনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষেধক নির্মাণকারী সংস্থার সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের তৃতীয় দফার ট্রায়াল চলছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে। এ সবের মধ্যেই সে দেশের স্বাস্থ্য সদফতরের এক কর্তা সোমবার টিভিতে জানিয়েছেন, গত ২২ জুলাই থেকে  গুরুত্ব বিচার করে জনগণের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করেছে। চিনের করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের প্রধান ঝেং জংওয়েই জানিয়েছেন, গত ২২ জুলাই থেকে চিকিৎসাকর্মী ও কিছু সরকারি কর্মচারীকে ভ্যাকসিন দেওয়া চলছে। আগামী কয়েক মাসে আরও আরও মানুষকে তা দেওয়া হবে।

চিনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শরৎ ও শীত কালে রোগের সংক্রমণ আটকানোর জন্য, তারা প্রতিষেধক দেওয়ার কর্মসূচি আরও বিস্তৃত করতে চান। জনগণের যে অংশের প্রতিষেধক আগে প্রয়োজন, তাদের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলাই তাদের লক্ষ্য।

তবে চিন এর আগেও প্রতিষেধক তৈরি করেছে। সে দেশের একাডেমি অফ মিলিটারি সায়েন্স ক্যানসিনো বায়োলজিকসের সঙ্গে মিলিত ভাবে একটি ভ্যাকসিন তৈরি করে। সেটা কেবল সামরিক বাহিনীর মধ্যে দেওয়া হয়েছে জুন মাসের শেষ সপ্তাহে। কিন্তু সেটা আলাদা ভ্যাকসিন। সে দিক থেকে দেখলে জনগণের মধ্য়ে ভ্যাকসিন দেওয়া পৃথিবীর মধ্যে চিনেই প্রথম শুরু হল। তা সে যত কম মানুষের মধ্যেই হোক না কেন।

 

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *