পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: গত জুলাই মাস জুড়ে ইউরোপের নানা দেশে যে সব ধর্মঘট, প্রতিবাদ ও সংগ্রাম হয়েছে আমরা সংক্ষেপে তার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করছি। এতে সামগ্রিক ছবিটা না থাকলেও, মহাদেশ জুড়ে শাসকের আক্রমণের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণি ও জনগণ যে বিদ্রোহ ও প্রতিরোধ সংগঠিত করেছে, সে সম্পর্কে পাঠকরা জানতে পারবেন। কমিউনিস্ট ও বিপ্লবী শক্তিগুলি যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাও এই প্রতিবেদন থেকে জানা যাবে। প্রতিবেদনটি সংক্ষিপ্ত হলেও, সাম্রাজ্যবাদ ও নিপীড়িত জনগণ, সর্বহারা ও বুর্জোয়াদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব যে আরও তীব্র হচ্ছে, তা এখান থেকে স্পষ্ট হবে। স্পষ্ট হবে নিপীড়িত বাড়তে থাকা ক্ষোভ ও দৃঢ়চিত্ত সংগ্রামের চেহারাটাও।
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গ লাগোয়া কিষাণগঞ্জে নকশাল হামলায় হত ১ বিএসএফ অফিসার ও জওয়ান
বুলগেরিয়া
দুর্নীতিগ্রস্ত বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি করে রাজধানী সোফিয়া সহ দেশের বিভিন্ন শহর দিনের পর দিন মিছিলে-সভায় অবরুদ্ধ করে রাখান হাজার হাজার মানুষ। ইউনিয়নগুলি শ্লোগান তোলে, ‘পদত্যাগ হল প্রথম পদক্ষেপ’।
সোফিয়ার মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিপ্লবীরা। তারা বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা করে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে বুলগেরিয়া থেকে বিদায় করার দাবি তোলে।
সার্বিয়া
সে দেশের সরকার প্রাথমিক ভাবে করোনা ঠেকাতে দেশে লকডাউন ঘোষণা করে। কিন্তু নির্বাচনের জন্য লকডাউন তুলে নেয়। ভোটের লোভে জনগণকে কিছু টাকাও দেয়। তাও ৫০ শতাংশের কম ভোট পড়ে। ভোট মিটতেই ফের লকডাউন ঘোষণা করে দেশ জুড়ে। আর্থিক সংকটে জেরবার জনগণের গতিবিধির ওপর নেমে আসছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। এর বিরুদ্ধে রাজধানী বেলগ্রেড সহ নানা শহরে জঙ্গি গণ আন্দোলন তৈরি হয়। সংসদ ভবনে বোমা ছুঁড়ে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে উত্তেজিত জনতা।
গ্রিস
বেহাল আর্থিক অবস্থার জেরে গ্রিসে ব্যাপক আকার নিয়েছে গণ আন্দোলন। সেই আন্দোলন ঠেকাতে মিছিল-মিটিং বিরোধী অগণতান্ত্রিক আইন পাস করল গ্রিসের সংসদ। আইন পাসের দিন এথেন্সে মিছিল করেন ১০ হাজার মানুষ। জঙ্গি আন্দোলনে অবরুদ্ধ হয়ে যায় এথেন্সের রাজপথ।
অস্ট্রিয়া
ফিলিপিনসের জনগণের ওপর নজরদারি বাড়াতে সে দেশের প্রেসিডেন্ট দুয়ের্তে সম্প্রতি পাস করেছেন একটি সন্ত্রাস বিরোধী আইন। সেই আইনের বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়ায় দেখানো হল বিক্ষোভ। অন্যাদিকে তুর্কি এবং কুর্দিস সংগঠনগুলির মহিলাদের ওপর কিছুদিন আগেই হামলা চালায় ভিয়েনার একটি ফ্যআসিবাদী সংগঠন। তার বিরুদ্ধে ‘রেড উইমেন কমিটি, ভিয়েনা’ প্রতিবাদ সংগঠিত করে। করোনার জেরে আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত অস্ট্রিয়াবাসীর বেকার ভাতা ৮০% বাড়ানোর দাবিতে গত ৪ জুলাই ভিয়েনায় বিক্ষোভ দেখায় বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন ও প্রগতিশীল সংগঠন।
জার্মানি
পুলিশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোলোন, স্টুটগার্ট ও ফ্রাঙ্কফুর্টে জঙ্গি প্রতিরোধ কমর্মসূচি পালন করেন জনগণ। বিক্ষোভও দেখানো হয়।
তুরস্কের মার্কসবাদী-লেনিনবাদী পার্টির কয়েকজন সদস্যের বিচার চলছে মিউনিখে। সেই বিচার প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে প্রতিবাদী কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে প্রগতিশীল শক্তিগুলি।
ফ্রান্স
ফরাসি পুলিশের বর্ণবিদ্বেষী কার্যকলাপ এবং অতীতের দুই কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার বিরোধিতায় নিয়মিতই বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে প্যারিস সহ ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে। আমেরিকায় বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর গতি পেয়েছে এই প্রক্রিয়া। এছাড়া মাকরঁ সরকারের শ্রম সংস্কারের বিরুদ্ধে অতিমারির আগে থেকেই সংগ্রামরত সে দেশের শ্রমিকশ্রেণি।
গ্যালিসিয়া(স্পেন)
স্পেনের গ্যালিসিয়া প্রদেশে নির্বাচন বয়কটের প্রচার চালায় সেখানকার বিচ্ছিন্নতাকামী কমিউনিস্ট বিপ্লবী শক্তি।
ফিনল্যান্ড
আমেরিকার বর্ণবিদ্বেষ ও পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলনে সামিল অস্টিনের তিন কমিউনিস্ট বিপ্লবীকে গ্রেফতার করেছে সে দেশের পুলিশ। তাদের মুক্তির দাবি সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে সামিল হন ফিনল্যান্ডের বিভিন্ন প্রগতিশীল শক্তি।
নরওয়ে
ক্রিস্টিয়ানস্যান্ডে পুলিশি নির্যাতন ও বর্ণবিদ্বেষমূলক নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরব নরওয়ের কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা।
ইতালি
করোনা অতিমারির জেরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক শ্রেণিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে পুঁজিপতিদেরই। এই দাবিতে কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের নেতৃত্বে ইতালিতে একাধিক কর্মসূচি পালন করে ট্রেড ইউনিয়নগুলি।
আয়ারল্যান্ড
আইরিশ রেভোলিউশনারি আর্মির অন্যতম নেতা লিয়াম ক্যাম্পবেলকে বিচারের জন্য লিথুয়ানিয়ায় পাঠাতে চাইছে সে দেশের সরকার। ইতিমধ্যেই আয়ারল্যান্ডে ১২ বছর জেল খেটেছেন ক্যাম্পবেল। তার প্রতিবাদে ডাবলিনে প্রতিবাদ প্রগতিশীল শক্তির।