জনগণের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সব তথ্যের মালিকানা পেতে নতুন ওয়েবসাইট কেন্দ্রের, কর্পোরেটদের স্বার্থে?
![জনগণের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সব তথ্যের মালিকানা পেতে নতুন ওয়েবসাইট কেন্দ্রের, কর্পোরেটদের স্বার্থে?](https://peoplesmagazine.in/wp-content/uploads/2020/08/national-digital-health-mission.jpg)
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: কোভিড-অতিমারির জেরে দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুনিয়া আর আগের মতো থাকেনি, এই অতিমারির পরেও তা থাকবে না। প্রথমে বিষয়টা অনেকে বোঝেননি। তারপর খতিয়ে দেখে জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পৃথিবীর সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে উঠে এসেছিল অস্ত্র ব্যবসা। অস্ত্র বিক্রি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছিল। ঠান্ডা যুদ্ধের পরিস্থিতি তাকে গতি দিয়েছিল। আর করোনার হাত ধরে আমূল পরিবর্তন আসতে চলেছে স্বাস্থ্য ব্যবসায়।
এটা ঠিক যে লকডাউনকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল ব্যবসায় ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে ও আগামি দিনেও ঘটবে। কিন্তু সেটা মূলত তৃতীয় বিশ্বে। কারণ প্রথম বিশ্ব এ ব্যাপারে অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু মন্দা কাটানোর জন্য পুঁজিবাদের চাই নতু ক্ষেত্র। স্বাস্থ্যই হতে চলেছে সেই ক্ষেত্র। এমনিতেই যারা কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জমা পড়ছে সরকারি ওয়েবসাইটে। এছাড়া দুনিয়ার নানা দেশে করোনা ঠেকানোর নামে বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, এদেশেও হয়েছে আরোগ্য সেতু অ্যাপ। মানুষের আতঙ্ককে কাজে লাগিয়ে সেই অ্যাপেও বহু তথ্য জমা করা হচ্ছে। অনেকেরই ধারণা সেই তথ্য বিক্রি করা হবে বিভিন্ন ওষুধ সংস্থা ও স্বাস্থ্য বিমা সংস্থাকে। এই সংস্থাগুলি সেই তথ্য কাজে লাগিয়ে আগামি দিনে তাদের বাণিজ্য নীতি তৈরি করবে।
আরও পড়ুন: অতিমারির ধাক্কায় আমূল পরিবর্তন
সেই প্রক্রিয়াকে গতি দিতে ১৫ আগস্ট নতুন একটি প্রকল্প ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যার পোশাকি নাম ‘ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ মিশন’। যার অধীনে তৈরি হবে একটি ওয়েব সাইট ও অ্যাপ। সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, এর ফলে ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
ওই পোর্টালে প্রত্যেক ভারতীয় তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আপলোড করতে পারবেন। যাকে বলা হচ্ছে ‘ই- রেকর্ড’। এখানে নিজের তথ্য আপলোড করলে মিলবে একটি ‘হেল্থ আইডি’ বা স্বাস্থ্য পরিচয়পত্র। যা দেশের যে কোনো প্রান্তে গ্রাহ্য হবে। এছাড়া ওই পোর্টালে থাকবে আরও দুইটি বিভাগ। চিকিৎসকরাও এখানে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এই বিভাগটির পোশাকি নাম ডিজি ডক্টর। এছাড়াও চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রতিষ্ঠান এখানে নিজেদের নথিভুক্ত করতে পারবে। ওই পোর্টালে টেলিমেডিসিন পরিষেবা দেওয়ারও ব্যবস্থা থাকবে। আর থাকবে অনলাইন ওষুধ কেনার ব্যবস্থা।
কোনো ব্যক্তি অনুমতি দিলেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো চিকিৎসক বা কোনো প্রতিষ্ঠান তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য দেখতে পাবে। অন্যদিকে চিকিৎসকরা ডিজিটাল সই-এর মাধ্যমে অনলাইনে প্রেসক্রিপশনও করতে পারবেন। কোনো ব্যক্তি চাইলে তার হেল্থ আইডি-র সঙ্গে নিজের আধার কার্ডও সংযুক্ত করতে পারবেন।
তবে এই পোর্টালে নিজেকে নথিভুক্ত করার বিষয়টি এখনও স্বেচ্ছাধীন। কেউ চাইলে নাও করতে পারেন। কিন্তু ভারতবাসী জানেন, গত কয়েক বছরে কীভাবে আধার কার্ডের সঙ্গে তার যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্যকে যুক্ত করে নেওয়া হয়েছে। কোনো সরকারি পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে আধার কার্ডের সঙ্গে সংযুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক নয় বলে আদালত রায় দিলেও, তা বাস্তবে কোনো কাজে আসেনি। কারণ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সককেই আধার যুক্ত করতে হয়েছে। আদালত রায় দেওয়ার আগেই বহু মানুষ আধারের সঙ্গে মোবাইল নম্বর যুক্ত করে নিয়েছেন। তাই ধরেই নেওয়া যায়, কয়েক বছরের মধ্যেই, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে গেলে হেল্থ আইডি থাকাটা বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা হবে সকল ভারতবাসীর জন্য। সরকার যদি নাও চায়, হয়তো কর্মস্থলেই হেল্থ আইডি থাকা বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। এভাবেই জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য হস্তগত করবে রাষ্ট্র ও কর্পোরেট সংস্থাগুলো। এতে তাদের ব্যবসায় যেমন সুবিধা হবে তেমনই জনগণের ওপর নজরদারি রাখার ক্ষেত্রে আরও এক কদম এগোবে রাষ্ট্র।