‘একনায়কত্ব’র মতো ‘নেতিবাচক ও ভীতিকর’ শব্দ ব্যবহার সর্বহারার পক্ষে একান্ত জরুরি- সংক্ষিপ্ত আলোচনা
বুর্জোয়া একনায়কত্বকে উচ্ছেদ করে সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার কথা সব মার্কসবাদী শিক্ষকরাই বলে গেছেন। কিন্তু সোভিয়েতের পতন, চিনের পিছু হঠার পর দুনিয়া জুড়ে কমিউনিস্ট আন্দোলনে একনায়কত্ব নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সর্বহারার গণতন্ত্রের নামে অনেকেই বুর্জোয়া গণতন্ত্রের ধারণাকে সামনে নিয়ে আসছেন। ভারতে সিপিআইএমের মতো দল, তাদের কর্মসূচি থেকে কিছুদিন আগে সর্বহারার একনায়কত্ব শব্দবন্ধটি তুলে দিয়ে ‘সর্বহারার রাষ্ট্রক্ষমতা’(প্রেলেতারিয়ান স্টেটহুড)কথাটি ঢুকিয়েছে। দুনিয়া জুড়ে সংগ্রামের এই সময়ে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের এইসব গুরুতর দিকগুলি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে। এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনার সুযোগ আমাদের মতো সংবাদ নির্ভর পোর্টালে কম। কিন্তু সম্প্রতি নরওয়ের ‘সার্ভ দ্য পিপল’ সংগঠনের সমাজতন্ত্র বিষয়ক একটি প্রবন্ধ আমাদের নজরে আসে। ওই প্রবন্ধের ‘সর্বহারার একনায়কত্ব’ সংক্রান্ত অংশটি আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। আগ্রহীদের জন্য ওই অংশটি আমরা ভাবানুবাদ করলাম।
আমরা কমিউনিস্টরা এইসব ভীতিকর শব্দ উচ্চারণ করতে লজ্জাবোধ করি না। আমরা দীর্ঘস্থায়ী জনযুদ্ধের পক্ষে। আমরা ন্যায় যুদ্ধের পক্ষে। আমরা সর্বহারার একনায়কত্বের পক্ষে। আমরা জানি এই শব্দবন্ধটি খুব ইতিবাচক দ্যোতনা বহন করে না এবং এর মধ্যে হিংসা ও নিপীড়ন লুকিয়ে আছে। তাহলে কেন আমরা একে নিরীহ ও আনন্দদায়ক হিসেবে উপস্থাপন করি? বুর্জোয়ারা এটা সবসময় করে থাকে। তাদের কাছে নিষ্ঠুর সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ হয়ে যায় ‘মানবতাবাদী হস্তক্ষেপ’। কিন্তু মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ কোনো কিছু লুকিয়ে রাখার মতাদর্শ নয়, খুলে ধরার মতাদর্শ। এই মতাদর্শকে ব্যবহার করে আমরা দুনিয়াটা যেমন, তেমনই দেখতে পাই। এই মতাদর্শ তাকে পোশাক পরিয়ে, রোমান্টিক ভাবমূর্তিতে ঢেকে রাখে না।
সমস্ত রাষ্ট্রই শ্রেণির রাষ্ট্র। সমস্ত শ্রেণির রাষ্ট্রই, শ্রেণির একনায়কত্ব। সেগুলিতে শ্রেণির একটি অংশ, গোটা একটি শ্রেণি বা কয়েকটি শ্রেণির জোটের একনায়কত্ব জারি থাকে। এবং সেগুলিতে অন্যান্য শ্রেণিগুলির ওপর একনায়কত্ব কায়েম করা হয়।সর্বহারার একনায়কত্বের ক্ষেত্রে, সর্বহারার রাজনৈতিক রাষ্ট্র ক্ষমতা, বুর্জোয়াদের ওপর একনায়কত্ব প্রয়োগ করে। সর্বহারার শাসন সামগ্রিক ভাবে শ্রমজীবী জনগণের জোট- যেমন কৃষক, ছোটো ব্যবসায়ী ও বুদ্ধিজীবী।
সর্বহারার একনায়কত্ব মানে জনগণের গণতন্ত্র, শত্রুর নয়। এর অর্থ হল জনগণের মুক্তি, কিন্তু আজ যারা ক্ষমতায় রয়েছে তাদের ওপর নিপীড়ন। অর্থাৎ ফ্যাসিবাদী, সাম্রাজ্যবাদের দালাল, বুর্জোয়া প্রতিবিপ্লবীদের ওপর নিপীড়ন। যদি আমরা এই সত্যকে ঢেকে রাখি তাহলে আমরা নিজেদের আর আমাদের প্রভাবে থাকা জনগণকেই বোকা বানাবো। যে নেতৃত্ব নিজেদের এবং অন্যদের প্রতারিত করে, তাদের দিয়ে জনগণের কী লাভ হবে?