Home খবর ‘আমরা গিনিপিগ নই’, দারিদ্র্য-অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দক্ষিণ আফ্রিকায়

‘আমরা গিনিপিগ নই’, দারিদ্র্য-অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দক্ষিণ আফ্রিকায়

‘আমরা গিনিপিগ নই’, দারিদ্র্য-অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দক্ষিণ আফ্রিকায়
0

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: কোভিডের প্রথম প্রতিষেধকের মানুষের দেশের ওপর পরীক্ষা হবে দক্ষিণ আফ্রিকায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণায় সে দেশের নাগরিকদের কাজে লাগানোর বিরুদ্ধে জোহানেসবার্গের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখালেন উইটওয়াটারস্ট্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া-গবেষক-অধ্যাপকরা। প্রতিবাদীদের বক্তব্য, তারা ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে নন, কিন্তু গরিব ও অপীক্ষিত ভ্যাকসিনের ক্ষতি সম্পর্কে অসচেতন দক্ষিণ আফ্রিকাবাসীকে কাজে লাগিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের মুনাফা তৈরির চেষ্টাকর বিরুদ্ধে।  

অক্সফোর্ডের ওই গবেষণার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ২০০০ স্বেচ্ছাসেবীকে বেছে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, তারা সকলেই গরিব পরিবারের। এক প্রতিবাদীর বক্তব্য, “এর থেকে বোঝা যায়, আমাদের মহাদেশটি আবর্জনা ফেলার জায়গা। যদি কোনো ওষুধের পরীক্ষায় বড়ো রকমের ঝুঁকি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সেটি পরীক্ষা করার যথাযথ জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে আফ্রিকা। গণতান্ত্রিক অধিকার কোথায়”? সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি মুখে সাম্যের কথা বললেও শোষণ করার সময় তারা সেইসব বাণী ভুলে যায়, অভিযোগ প্রতিবাদীদের।

প্রতিবাদীদের শ্লোগান ছিল, ‘আমরা গিনিপিগ নই’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইথিওপিয়ান ডিরেক্টর বলেছেন, ‘কেবল নৈতিক ও বৈজ্ঞানিক ভাবে শক্তিশালী ভ্যাকসিন ও ওষুধের পরীক্ষাই আফ্রিকায় হবে’। কিন্তু প্রতিবাদীরা জানেন অতীতে এই মহাদেশে কী হয়েছে। এক প্রতিবাদীর বক্তব্য, “আমি প্রতিষেধকের বিরুদ্ধে নই, আমি মুনাফাবাজির বিরুদ্ধে। প্রতিষেধক পরীক্ষার জন্য আফ্রিকায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাই আমরা জানি, এর সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের কোনো সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক আছে প্রতিষেধক থেকে মুনাফা করার আর প্রতিষেধকের উপর একচেটিয়া অধিকার কায়েমের’।

আফ্রিকার মানুষের মধ্যে প্রতিষেধক-বিরোধী মনোভাব নিয়ে সাম্রাজ্যবাদীরা চিন্তিত। গাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সিইও বলেছেন, ‘আফ্রিকার মানুষ এখন য়ে মনোভাব নিয়ে চলছেন, তেমন প্রতিষেধক-বিরোধী মনোভাব আমি কখনও কোথাও দেখিনি। পরিস্থিতি খুব খারাপ’। কিন্তু প্রতিবাদীদের বক্তব্য, এটা ডাহা মিথ্যে। আফ্রিকার মানুষের দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ ন্যায্য। বেশিরভাগ আফ্রিকান সাম্রাজ্যবাদীদের সাহায্য ও সাম্রাজ্যবাদী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিশ্বাস করে না। এরা আফ্রিকার মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে আদৌ ভাবিত নয়, এইসব ‘রক্তচোষা’রা কেবল নিজেদের ধান্দায় আসে। করোনা অতিমারির সময়ও প্রথম থেকেই সাম্রাজ্যবাদী সংবাদ মাধ্যমগুলি আফ্রিকায় প্রতিষেধক পরীক্ষা করার ‘সুবিধা’ নিয়ে বহু আলোচনা করেছে। কারণ আফ্রিকায় কমবয়সি মানুষের সংখ্যা বেশি এবং আফ্রিকার মানুষ মহামারিতে অভ্যস্ত। তারপর এল ‘অসুবিধা’র কথা। সেটা কী? আফ্রিকার মানুষ রক্তপরীক্ষা করাতে চাইছে না। মূল বিষয় হল, আফ্রিকার বহু দেশে নিভৃতবাসের জন্য পয়সা খরচ করতে হচ্ছে। কিন্তু মানুষের হাতে পয়সা নেই। তাই তারা রক্তপরীক্ষা করাচ্ছে না। এখন নতুন ‘সমস্যা’ হল আফ্রিকাবাসীর প্রতিষেধক-বিরোধী মনোভাব। প্রতিবাদীদের বক্তব্য, এর থেকেই বোঝা যায়, মানুষের আসল সমস্যা নিয়ে আলোচনা না করে, সেগুলির সমাধান না করে, সাম্রাজ্যবাদীরা সেগুলো এড়ানো নিয়েই চিন্তিত। স্বাস্থ্য পরিষেবার কাজ মানুষের সেবা করা, তার বদলে এই মহাদেশে তা সাম্রাজ্যবাদীদের মুনাফা করতে সাহায্য করছে, আর সে সবই চলছে ‘সাম্রাজ্যবাদীদের মহান সাহায্যে’র নামে। এর ফলে করোনা প্রতিষেধক পরীক্ষার মাধ্যমে আফ্রিকার মানুষ আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন।        

ভারতের অবস্থা অবশ্য আরও এক কাঠি সরেস। এখানে ওষুধ ও প্রতিষেধকের পরীক্ষা মানুষের পকেটের পয়সা নিয়েই করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ছাড়াই গ্লেনমার্ক সংস্থার ওষুধ ফ্যাবিফ্লু ভারতের বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি পরীক্ষামূলক। কিন্তু ওষুধটি বাজারজাত করা হয়েছে। অর্থাত করোনারোগীরা পকেটের টাকা খরচ করে ওষুধটি খাবেন। আর তাদের শরীরে ফলাফল দেখে ওষুধটির ভবিষ্যত নির্ধারিত হবে। বোঝাই যাচ্ছে সরকার, ওষুধ সংস্থা ও চিকিৎসকদের একাংশের দুষ্টচক্র এক্ষেত্রে কাজ করবে। মুনাফা তাদের মধ্যেই ভাগ হবে। ওষুধের নেতিবাচক প্রভাব থাকলে, তার দায় নিতে হবে সাধারণ রোগীদের। পাশাপাশি শুক্রবার ঘোষণা হয়েছে ভারতের একটি ওষুধ সংস্থা ও আইসিএমআর একটি করোনা প্রতিষেধকের মানব শরীরের ওপর পরীক্ষা ৭ জুলাই থেকে শুরু করবে। অথচ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ১৫ আগস্টের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করে তা ব্যাপক মানুষকে দিতে শুরু করা হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন তৈরির সবকটি ধাপ শেষ হয়ে তা বাজারজাত হতে বেশ কয়েক মাস এমনকি কয়েক বছরও লাগতে পারে। তাহলে ৫ সপ্তাহে কী করে তা তৈরি হবে? এক্ষেত্রে অনেকের সন্দেহ, পরীক্ষার তৃতীয় পর্যায়, যেখানে বহু মানুষের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে বেশ কয়েকমাস দেখতে হয়, সেই অংশটা জনগণের টাকায় করা হবে। অর্থাত যারা পয়সা খরচ করে ভ্যাকসিন নেবেন, তারা জানতেও পারবেন না যে তাদের ওপর আসলে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চলছে। এর বিরুদ্ধে ভারতের জনস্বাস্থ্য আন্দোলনকারীরা কবে পথে নামেন সেটাই দেখার।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *