পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: লকডাউন যখন পুরোদম এচলছিল, তখন এ নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হচ্ছিল যে বায়ূদূষণ এবং শব্দদূষণ অনেক কমে গেছে। যা দেশের অরণ্য এবং বন্যপ্রাণের পক্ষে ভালো।
কিন্তু সেই ভালো দিন স্থায়ী হল না। দেশের বন্যপ্রাণ বিষয়ক জাতীয় বোর্ডের স্থায়ী কমিটি ভারতের বেশ কিছু অরণ্য এবং বন্যপ্রাণ সম্পর্কে এমন সব খবর দিল, যা মোটেই ভালো নয়। এই বোর্ডের কাজ হল কেন্দ্রীয় সরকারকে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংক্রান্ত পদক্ষেপ পরামর্শ দেওয়া এবং সংরক্ষিত এলাকার আশেপাশের প্রকল্পগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখা।
এই বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী। ২০১৪ সালে থেকে এই বোর্ডের একটিও বৈঠক হয়নি। যে সব প্রকল্পগুলি দেশের জীববৈচিত্র্যে প্রভাব ফেলতে পারে, সেগুলি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয় এই বোর্ড। দেশজড়ো লকডাউন চলাকালীন গত ৭ এপ্রিল অনলাইন বৈঠক করেন বোর্ডের সদস্যরা। ওই বৈঠকে আলোচনা হয় বিভিন্ন সংরক্ষিত অঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা প্রকল্পগুলির ভবিষ্যত নিয়ে। বৈঠকে এমন ২৬টি প্রকল্পে নীতিগত সম্মতি জানানো হয়। ফলে দেশের ৩০০০ হেক্টর অরণ্যভূমিকে বানিজ্যিক কাজে লাগানোর ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
কী কী প্রকল্প? এর মধ্যে কয়েকটির কথা আপনারা হয়তো জানেন। যেমন, অসমের দেহলিং পাটকাই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কাছে খোলামুখ কয়লা খনি এবং গোয়ার ভগবান মহাবীর বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যের মধ্যে দিয়ে ট্রান্সমিশন লাইন এবং হাইওয়ে।
এই প্রকল্পগুলির বেশিরভাগই সাধারণ মানুষের নজরের বাইরে থেকে গেছে। তার মধ্যে রয়েছে, যমুনা নদীর ওপর লাখওয়ার বাঁধ। পরিবেশবিদরা বহুদিন ধরে এই বাঁধের বিরোধিতা করে আসছেন। কারণ সেটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল এবং এটা তৈরির জন্য বেনং অভয়ারণ্যের কাছে ৮৭৩ হেক্টর জমি লাগবে। যতটা জমি নিয়ে দিল্লিতে রাজধানীকে ঢেলে সাজার সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্প রূপায়িত হবে, এটা তার প্রায় ১০০ গুন। যদি কোনো কারণে বাঁধ ভেঙে যায়, তাহলে সেই পুনর্গঠিত দিল্লি জলের তলায় চলে যাবে। পাশাপাশি এতে নদীর স্বাভাবিক স্রোত এবং বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হবে।
বোর্ডের বৈঠকে বাস্তুতন্ত্রের দিক থেকে সংবেদনশীল রাজস্থানের মুকুন্দ্র ব্যাঘ্র প্রকল্পের মধ্যে পাথর ও চুনাপাথরের খনি প্রকল্প তৈরির জন্য ১০টি সুপারিশ করেছে। তার জন্য জমি লাগবে ৯৭০ হেক্টর। এই ভাবেই বোর্ড এবং তার স্থায়ী কমিটি উন্নয়নের নামে আমাদের জাতীয় প্রাকৃতিক সম্পদকে নিলামে তুলে দিল।
পরিবেশ সংক্রান্ত প্রভাব পর্যালোচনা বিষয়ক যে নতুন খসড়া তৈরি হয়েছে, তাতে মতামত দেওয়ার সুযোগ গত ৩০ জুন শেষ হয়ে গেছে। ফলে যে সব প্রকল্প সাধারণ মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে, সেগুলি নিয়ে তাদের মতামত দেওয়ার সুযোগ শেষ হয়ে গেল। তাই পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের এখন আরও বেশি করে গলা তুলতে হবে। সম্প্রতি বিশাখাপত্তনমে গ্যাস লিক এবং তার ফলাফলে হওয়া অগ্নিকাণ্ডের জেরে যে দুজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল, তের থেকেই বোঝ যায় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ না করলে জনগণের জীবনে কী বিপর্যয় নামতে পারে।