পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: ভ্রমণপিপাসু মানুষদের জন্য ইউরোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থলগুলির অন্যতম ক্রোয়েশিয়া। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দরিদ্রতম দেশগুলির মধ্যে রয়েছে এই দেশটি। সে দেশের অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভই হল পর্যটন। লকডাউনের শেষে বুধবার সকালে চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া থেকে ৫০০ পর্যটক নিয়ে ট্রেন পৌঁছল ক্রোয়েশিয়ায়। এরা সকলেই সময় কাটাবেন অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের সৈকতে কিংবা কোনো দ্বীপে।
প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক যায় ক্রোয়েশিয়ায়। সারা পৃথিবী থেকে সিনেমার শুটিং করতে সেখানে যায় বহু দল। কিন্তু এবার গ্রীষ্মটা ফাঁকাই গিয়েছে। তবু সে দেশের পর্যটনমন্ত্রী মনে করছেন এবারও লাখ তিনেক পর্যটক আসবেন গ্রীষ্মে। ৩০ হাজার ট্রেনের টিকিট ইতিমধ্যেই কাটা হয়ে গিয়েছে। পর্যটকদের জন্য কেবল একটিই কড়া নির্দেশ রয়েছে, সর্বক্ষণ মুখোশ পরে থাকতে হবে।
ক্রোয়েশিয়া ইউরোপের প্রথম দেশ যারা পর্যটনের জন্য লকডাউন শিথিল করল। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নীতি অনুযায়ী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের জেরে ক্রোয়েশিয়ার স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল খুবই খারাপ। সেখানকার জনগণ অতিমারির ধাক্কায় বিপর্যস্ত। তা সত্ত্বেও সেখানকার শাসক শ্রেণি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির পর্যটকদের জন্য যাবতীয় বন্দোবস্ত সেরে রেখেছে।
তবে ক্রোয়োশিয়াই
একমাত্র দেশ নয়, যারা পর্যটন শিল্পের জন্য লকডাউনের নিয়ম শিথিল করল। গত এপ্রিলেই তুরস্কের
প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছিলেন, তিনি পর্যটকদের জন্য দেশে কিছু করোনা-মুক্ত অঞ্চল তৈরি
করবেন। দেশবাসী অতিমারিতে নাজেহাল হলেও পর্যটকদের সুরক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা করবেন।
মুনাফার জন্য যে সবকিছুই
করা যায়, তার সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ হল গ্রিস। সাম্প্রতিক কালে সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপিয়ান
ইউনিয়নের করা বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে গ্রিসের মানুষ অত্যন্ত দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
ইইউ সে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছে। জনগণ নিজেরাই ওষুধ বিনিময়ের বাজার
তৈরি করেছেন। এই অবস্থায় পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য গ্রিস সরকার সিদ্ধান্ত
নিয়েছে, তারা দেশের সবকটি রিসর্টে চিকিৎসকের ব্যবস্থা রাখবে যাতে পর্যটকদের পর্যাপ্ত
নিরাপত্তা দেওয়া যায়। এর থেকেই বোঝা যায়, সাধারণ দেশবাসীর স্বাস্থ্য নিয়ে এদের কোনো
ভাবনা নেই।
মুনাফার জন্য যে দেশবাসীর
স্বাস্থ্যকে বলি দেওয়া যায়, তার সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ অস্ট্রিয়া। সে দেশের ইসগল একটি
জনপ্রিয় স্কি রিসর্ট। গত মার্চে আন্তর্জাতিক পর্যটনে প্রথম সতর্কবার্তা এসেছিল সেখান
থেকেই। বেশ কিছু করোনা সংক্রমণের ঘটনা সেখানে ঘটে। কিন্তু হোটেল মালিকরা এবং সামগ্রিক
ভাবে পর্যটন শিল্প কোনো গা করেনি। চূড়ান্ত লকডাউন ঘোষণার আগে পর্যন্ত পর্যটক, শ্রমিক
এবং সাধারণ জনগণের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয় স্রেফ মুনাফার জন্য।
গত কয়েক বছর ধরেই ক্রোয়েশিয়ায়
পর্যটন শিল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। এই শিল্প স্থানীয় মানুষের জীবনে দুর্দশা
ছাড়া কিছুই বয়ে আনেনি। আজ তথাকথিত ‘করোনা সংকট’ এবং শাসক শ্রেণির পদক্ষেপ থেকে আরও
স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে, পর্যটন শিল্প থেকে সাধারণ জনগণ এবং শ্রমিক শ্রেণির কোনো লাভ
হয়না। মুনাফা করে সাম্রাজ্যবাদীরা ও তাদের দালালরা।