এনআরসি-সিএএ-র বিরুদ্ধে, কাশ্মীরের অধিকারের পক্ষে মার্কিন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বিডেন, কেন?
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: চলতি বছরের শেষে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই রিপাবলিকান প্রার্থী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী প্রাক্তন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বিডেন। নির্বাচনকে ঘিরে ক্রমেই তুঙ্গে উঠছে প্রচার। জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার বিরুদ্ধে আমেরিকা জুড়ে যে তীব্র গণ আন্দোলন চলছে, তা নিজেদের পক্ষে কাজে লাগাতে তৎপর ডেমোক্র্যাটরা। ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন প্রদেশের ডেমোক্র্যাট শাসকরা আন্দোলনকারীদের প্রতি নরম অবস্থান নিচ্ছে। যদিও প্রতিবাদ হিংসাত্মক রূপ নিলে পুলিশের উচিত আন্দোলনকারীদের ‘পায়ে গুলি করা’, এমন মন্তব্যও করেছেন বিডেন। তা নিয়ে আন্দোলনকারীদের বিরাগভাজনও হয়েছেন। ডেমোক্র্যাটরা যাতে আন্দোলনের দখল নিতে না পারে, সে ব্যাপারেও সতর্ক প্রতিবাদীদের একটা বড়ো অংশ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসী বিরোধী, শ্বেতাঙ্গ-শ্রেষ্ঠত্বের পক্ষে বলে সুপরিচিত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার সুসম্পর্ক সুবিদিত। আর্থিক মন্দা, কোভিড পরিস্থিতি, গণ আন্দোলনের জেরে আপাতত তিনি কোণঠাসা। তবে হিন্দু ভারতীয়-আমেরিকানরা ট্রাম্পের পক্ষেই। এই অবস্থায় দেশের মুসলিম অভিবাসী ও বৃহত্তর মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট ঘরে তোলার জন্য চমকপ্রদ কৌশল নিলেন জো বিডেন। সম্প্রতি তার নির্বাচনী পলিসি পেপার প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বিডেন কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে সওয়াল করেছেন। পাশাপাশি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন(২০১৯) এবং অসমে এনআরসির বিরুদ্ধেও মতামত জানিয়েছেন। বিডেনের মতে সিএএ-এনআরসি ভারতের দীর্ঘদিনের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যের বিরোধী। তবে এখানেই শেষ নয়। চিনে উইঘুর সম্প্রদায়ের প্রতি চিন সরকার অন্যায় করছে বলেও ওই পলিসি পেপারে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ রয়েছে মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের দুর্দশারও। সব মিলিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মনজয় করতে চেষ্টার কসুর করেননি বিডেন। এর মধ্যে দিয়ে মুসলিম দুনিয়াকেও বার্তা দিয়েছেন বিডেন। যাতে তারা তাকে নির্বাচনে সাহায্য করে।
তবে বিডেনের এই অবস্থান শুধুই নির্বাচন-কেন্দ্রিক নয়। এর সঙ্গে আমেরিকার বিদেশনীতিরও নতুন পথেরও গভীর যোগ রয়েছে। চিন-আমেরিকা বাণিজ্য-যুদ্ধ এখন গোটা দুনিয়ার চর্চার কেন্দ্রে। সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী চিনের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকানদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। তবে দুদলের কৌশল আলাদা। বাণিজ্যিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ থাকার জন্য চিনের সঙ্গে দ্ব্ন্দ্ব বাড়াতে পারছে না আমেরিকা। আমেরিকার আর্থিক সংকটকে কাজে লাগিয়ে গোটা দুনিয়ায় প্রভাব বাড়াচ্ছে বেজিং। এই অবস্থায় ট্রাম্প চাইছেন মার্কিন অর্থনীতিকে আত্মনির্ভর করে তুলতে। যাতে চিন থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি কমিয়ে আনা যায়। ট্রাম্পের প্রচারের কেন্দ্রে মার্কিন শ্রেষ্ঠত্বের জাত্যাভিমান। সে পথে না হেঁটে বিডেন এশিয়ার চিনের প্রভাব কমাতে মুসলিমদের মনজয়ের পথ নিলেন। আমেরিকার দীর্ঘদিনের বন্ধু পাকিস্তান এখন চিনের প্রভাবাধীন। কাশ্মীর,এনআরসি-সিএএ, উইঘুর, রোহিঙ্গাদের নিয়ে ঘোষণা সেই প্রভাব কমানোর ক্ষেত্রে আগামি দিনে কাজে লাগতে পারে বলে মনে করছে ডেমোক্র্যাটরা। এমনকি তা প্রভাব ফেলতে পারে বাংলাদেশেও। এছড়া রয়েছে গোটা আরব দুনিয়া। সৌদি আরব-ইজরায়েল ছাড়া সেখানে তাদের কোনো বন্ধু নেই। ইসলামপন্থীদের প্রতি নরম মনোভাব দেখিয়ে দক্ষিণ এশিয়া, আরব, আফ্রিকায় চিনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধে সুফল মেলার আশা করছেন বিডেন।
বস্তুত আমেরিকার ইতিহাস মানবজাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ধ্বংসের ইতিহাস। বাজার দখল ও অস্ত্র বিক্রির স্বার্থে এমন কোনো ঘৃণ্য কাজ নেই, যা তারা করেনি। জাপানে পরমাণু হামলা থেকে হালের ইরাক-ইরান-আফগানিস্তান-লিবিয়া সবেতেই তার নখদাঁত বেরিয়ে এসেছে। আর্থিক মন্দা ও কোভিডের জন্য আপাতত তারা কোণঠাসা। এই অবস্থায় অর্থের বিনিময়ে বন্ধু জোগাড়ের চেষ্টা না করে তারা অস্ত্রবিহীন রাজনীতির পথ নিচ্ছে। ‘গণতন্ত্র’-এর মুখোশকে কাজে লাগাতে চাইছে মার্কিন বহুজাতিকদের একাংশ। এই অংশটাই ডেমোক্র্যাটদের মদতদাতা।
অর্থাত বিডেনের এই গণতন্ত্রের ভেক মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থরক্ষারই নয়া কৌশল। মাও সেতুং বলেছিলেন, ‘এরা কখনওই সাধু হয়ে যাবে না’। এরা ততদিনই গণতান্ত্রিক আন্দোলন-মূল্যবোধের পক্ষে থাকবে, যতদিন সেগুলো তাদের কাজে লাগছে। এই সত্যকে ভুলে গিয়ে বিডেনের মানবিক মুখকে দেখলে দুনিয়ার সংগ্রামী জনগণকে নতুন করে প্রতারিত হতে হবে।