পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: করোনা পরবর্তী দুনিয়ার প্রথম ভোট হয়ে গেল সার্বিয়ায়। ভোট হওয়ার কথা ছিল ২৬ এপ্রিল। কিন্তু করোনা মোকাবিলায় দেশে লকডাউন চলায় তা স্থগিত রাখা হয়। অতিমারির প্রকোপ কিছুটা কমতেই গত ১৯ জুন ভোট হয়ে গেল সে দেশে। যদিও এখনও সেখানে রোজই বেশ কিছু মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন।
আসলে সে দেশে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংকট এতটাই তীব্র যে শাসক জোটের তর সয়নি। লকডাউনের মধ্যেই তারা ঘোষণা করে দেয় প্রত্যেক দেশবাসীকে লকডাউনের ক্ষতি এড়াতে ১০০ ইউরো করে অনুদান দেওয়া হবে। সে দেশে বহু মানুষ মাসে ১০০ ইউরো বেতন পান না। অর্থাত টাকার অঙ্কটা যথেষ্ট। এই বিপুল পরিমাণ খরচ থেকেই বোঝা যায়, শাসক শ্রেণির হাতে কী বিশাল অঙ্কের টাকা রয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এটা ব্যাপক দুর্নীতির ফল।
বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, এটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট না হলেও সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুসিচ গোটা প্রচার মাধ্যমকে নিজের করায়ত্ত করে রেখেছেন, দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। দলীয় নির্বাচনের প্রচারেও চর্তুদিকে কেবল ভুসিচেরই ছবি। তাই বিরোধী জোট ‘অ্যালায়েন্স ফর সার্বিয়া’ নির্বাচন বয়কট করে। নগদ টাকা দেওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে বীতশ্রদ্ধ জনগণের মধ্যে ভোট নিয়ে কোনো উৎসাহ ছিল না। তারা একে প্রহসনই মনে করছিলেন। অবস্থা বেগতিক বুঝে সংসদে যাওয়ার জন্য কোনো দলের প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ মোট ভোটারের ৩ শতাংশ করে দেওয়া হয়, নির্বাচনের মাত্র ১ সপ্তাহ আগে। এতদিন এই সংখ্যাটা ছিল ৫ শতাংশ। আসলে প্রেসিডেন্ট ভুসিচ আশঙ্কা করেছিলেন, এটা না করলে খুব কম দলই সংসদে যেতে পারবে। ফলে সংসদের চেহারাটা মোটেও গণতান্ত্রিক দেখাবে না। আর সেটা না হলে সমূহ বিপদ। গত ৬ বছর ধরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে সার্বিয়াকে যুক্ত করার চেষ্টা করছেন ভুসিচ। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল শর্তগুলো পালিত না হলে ইইউ-তে ঢোকার ছাড়পত্র পাওয়া মুশকিল। তাই ভোটের দিনও ভুসিচের দল সার্বিয়ান প্রগ্রেসিভ পার্টির কর্মীরা ভোটারদের কাছে গিয়ে তাদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য চাপ দেন।
এ সবের ফলে প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে শাসক জোট। ২৫০টি আসনের মধ্যে ভুসিচের দল পেয়েছে ১৯০টি আসন, জোট সঙ্গী সোশালিস্ট পার্টি অফ সার্বিয়া পেয়েছে ৩২টি আসন। শাসক জোটের বাইরে ১৬টি আসন পেয়েছে বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিসত্তার দলগুলো। বলে রাখা ভাল, সার্বিয়ার শাসক ও বিরোধী জোট- দুটিতেই তথাকথিত ডানপন্থী ও বামপন্থীরা মিলেমিশে রয়েছে।
কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। সে দেশের নির্বাচন দফতর ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে দাবি করলেও, সব হিসেবেই দেখা যাচ্ছে, ভোটের পরিমাণ কোনোমতেই ৪৮ শতাংশ পেরোয়নি। বিরোধীদের দাবি, সেটা আরও কম। এই অবস্থায় ভোট গণনা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তা থামিয়ে দিয়েছে নির্বাচন দফতর। ২৩৪টি বুথে পুনর্নির্বাচনের ঘোষণা করেছে। সেগুলিতে যথেষ্ট ভোট পড়েনি বলে। যদিও বিরোধীদের মতে, এটা নেহাতই ভোট শতাংশ বাড়ানোর চেষ্টা। পাশাপাশি কয়েকটি ছোটো দলের ভোট বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করে তাদের সংসদের ঢোকার ছাড়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা। নইলে সংসদকে যথেষ্ট ‘বহুত্ববাদী’ দেখাচ্ছে না। তেমনটা না হলে একনায়ক ভুসিচের মান থাকে না। ইইউ-তে ঢুকতেও সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা। ১ জুলাই সেই পুনর্নিবাচন।
সব মিলিয়ে পুঁজিবাদী অর্থনীতির মন্দা এবং অতিমারির জেরে পৃথিবী জুড়ে যে রাজনৈতিক সংকট চূড়ান্ত আকার নিতে চলেছে, তার প্রাথমিক প্রমাণ হয়ে থাকছে সার্বিয়া।