পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: ১৮ জুন দেশের ৪১টি কয়লা খনি নিলাম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। নিলামের জন্য যে খনিগুলি নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তার অর্ধেকই ঝাড়খণ্ডে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত নীতিগত ভাবে মেনে নিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনও। বদলে তিনি রাজ্যের জন্য কিছু সুবিধা চেয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কয়লা খনিতে বাণিজ্যিক উৎপাদনের বিরুদ্ধে তীব্র গণ আন্দোলনের ডাক দিল ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন গণ সংগঠনের যৌথ মঞ্চ ঝাড়খণ্ড জনাধিকার মহাসভা।
“অবাক করা বিষয় হল, খনি নিলামের সিদ্ধান্তকে দেশকে আত্মনির্ভর করার উদ্যোগ বলে চালানো হলেও, এর ফলে খনির মালিকানা জমির মালিক ও গ্রামসভার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে কর্পোরেট লুণ্ঠনের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে”, এক বিবৃতিতে জানিয়েছে জনাধিকার মহাসভা।
ঝাড়খণ্ড সরকারও যে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে সহমত জানিয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় বলে জানিয়েছে ওই মঞ্চ।
খনি নিলামের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, এর ফলে ভারতের কয়লা ক্ষেত্রকে নিষেধাজ্ঞার শিকলমুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি হবে। অন্যদিকে মহাসভার বক্তব্য, এর ফলে দেশ ও বিদেশের খনি সংস্থাগুলি সাধারণ মানুষের জীবিকা কেড়ে নেবে ও পরিবেশ ধ্বংস করবে। ভারত সরকারের মালিকানাধীন সংস্থাগুলি ইতিমধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন খনিতে এই ঘটনাই ঘটিয়েছে।
মঞ্চের সদস্য ভারতভূষণ চৌধুরি বলেন, ‘সরকার নিলামের জন্য খনি নির্দিষ্ট করে দিয়ে থাকতেই পারে কিন্তু তা বাস্তবে কার্যকর হওয়া আলাদা ব্যাপার। আদিবাসীদের জীবন ও জীবিকা এর সঙ্গে জড়িত, তারা কিছুতেই এটা হতে দেবেন না”।
মহাসভা ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে জনগণকে সংগঠিত করছে বলে চৌধুরি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তার দাবি ছত্তীসগঢ়ের মতো ঝাড়খণ্ডেও গ্রাম সভাগুলি এ ব্যাপারে প্রস্তাব পাস করবে।
গত মঙ্গলবার ছত্তীসগঢ়ের হাসদেব আরন্দ অঞ্চলের ৯জন নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রধান প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে নিলামের বিরোধিতা করেছেন এবং ওই অঞ্চলে কয়লা তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করার আবেদন জানিয়েছেন।
ঝাড়খণ্ড জনাধিকার মহাসভা এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট মন্ত্রক, সরকারি কর্তা, মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে প্রতিনিধি পাঠাবে বলে স্থির করেছে।
তাদের দাবি গরিব মানুষ, প্রান্তিক মানুষ ও আদিবাসীদের আত্মনির্ভরতা সংক্রান্ত যে সব আইন আছে, খনি নিলামের সিদ্ধান্ত তার বিরোধী। একটি গ্রামের ক্ষেত্রে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে গ্রামসভার যে অধিকারের কথা পঞ্চায়েত আইন ও পঞ্চম তফসিলে রয়েছে, তাও এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না।
মহাসভার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জনগণের এই লড়াইয়ে রাজ্য সরকারের পাশে থাকা উচিত। কারণ এক্ষেত্রে খনি এলাকার মানুষ কী চাইছেন, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত।
“যদি জনগণ এবং গ্রামসভা খনি থেকে কয়লা নিষ্কাশন চান, তাহলে জমির মালিকদের সমবায় বা গ্রামসভাকে সরকারের উচিত অর্থ ও প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করা, যাতে তারা নিজেরাই খনি থেকে কয়লা নিষ্কাশন ও সেই সংক্রান্ত কাজগুলি করতে পারে”, বিবৃতিতে জানিয়েছে জনাধিকার মহাসভা।
অরণ্য ও অরণ্যজাত পণ্য উৎপাদন পরিচালনায় নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ ইতিমধ্যেই গ্রামসভাগুলি দিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। মহাসভার বক্তব্য, প্রাকৃতিক সম্পদে জনগণের অধিকার থাকা উচিত। কৃষিজমি ও অরণ্যের জমিকে কোনোমতেই খনির কাজে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা উচিত নয়।