পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: উমপুনের পর ২৫দিন কেটে গেছে। বিভিন্ন অসরকারি সংগঠন ও নাগরিক উদ্যোগগুলির ত্রাণ নিয়মিতই পৌঁছ যাচ্ছে সুন্দরবনের বিভিন্ন গ্রামে। কিন্তু এত বড়ো মাপের বিপর্যয়ে ক্ষয়ক্ষতি পূরণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা থাকার কথা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের।
স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্য সরকারের তরফে বিপর্যয়ের কিছুদিনের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর্থিক ত্রাণের ঘোষণা করা হয়েছে।ভাঙা বাড়িঘর, কৃষিজমি, পানের বরজ, মৎস্যজীবীদের ৭তিপূরণ বাবদ আর্থিক বরাদ্দ সরাসরি ৫লক্ষ সুন্দরবনবাসীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
সরকারি বরাদ্দের অর্থ যাতে গোটাটাই মানুষের হাতে পৌঁছয়, তার জন্য হাল আমলে দেশজুড়ে চালু হয়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার পদ্ধতি। কারণ সরকারি টাকা মাঝপথে গ্রামীণ ক্ষমতাবান অংশের হাতে(বিশেষত পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধি, শাসক দল)চলে যায়, এই অভিযোগ বহুদিনের। যার প্রাপ্য, তিনি পান কেবল অংশবিশেষ।
তবে ভারতের মতো পিছিয়ে থাকা দেশে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকলেই যে সরকারি বরাদ্দ টাকার সবটুকু নাগরিকরা পাবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। উমপুন তা প্রমাণ করছে নতুন করে।
উমপুনের ধাক্কায় সুন্দরবনের বাসন্তি ব্লকের ৮নং তিতকুমার গ্রামের প্রতিটি ঘরই ভেঙে গেছে। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই দর্জি শ্রমিক। লকডাউনের জেরে কারও হাতেই পয়সা নেই। ত্রিপল ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিলেও এতদিনেও পঞ্চায়েতের তরফে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সেখানকার মানুষ সম্প্রতি তৈরি করেছেন ‘সুন্দরবন সংগ্রামী গ্রাম কমিটি’। কমিটি পঞ্চায়েতের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করায়, অভিযোগ, পঞ্চায়েত বলে বাড়ি তৈরির জন্য রাজ্য সরকার যে ২০ হাজার টাকা দিচ্ছে, তার মধ্যে ১২ হাজার টাকা পঞ্চায়েতকে দিলে প্রত্যেক পরিবার ৮ হাজার টাকা করে পাবে। তবে তার জন্য ২০০টাকা মূল্যের একটি ফর্ম কিনে পূরণ করতে হবে।
সোমবার এই গ্রাম কমিটির উদ্যোগে ৬০ জনেরও বেশি গ্রামবাসী বাসন্তি ব্লক অফিসে অভিযোগ জানাতে যায়। তাদের সঙ্গে ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র ফ্রন্টের কয়েকজন সদস্য। দফতের বিডিও না থাকায় অন্য এক সরকারি আধিকারিকের কাছে অভিযোগপত্র জমা দেন গ্রামবাসী ও বিপ্লবী ছাত্র ফ্রন্টের সদস্যরা।
ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য পীযূষ দত্ত ও প্রিয়া়্ঞ্জনা দাসের বক্তব্য, ওই সরকারি আধিকারিক তাদের কাছে পঞ্চায়েতের দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ চান। এবং বলেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়া পঞ্চায়েতের কাজ কারণ সেখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন। বিতর্কের মাঝেই বিশাল বাহিনী নিয়ে দফতের আসেন এক পুলিশ কর্তা। ওই পুলিশ কর্তা লকডাউনের মধ্যে লোক জড়ো করার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করার হুমকি দেন। তাকে পঞ্চায়েতের দুর্নীতির কথা বলায়, তিনিও প্রমাণ চান। গ্রামবাসীরা তার কাছে সাহায্য চাইলে তিনি বলেন, তাদের সাহায্য করা তার কাজ নয়, তার কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক বাদানুবাদ চলার পর গ্রামবাসীরা ফিরে যান।
শেষ খবর, গ্রামবাসীদের এই আন্দোলন ও ব্লক অফিস অভিযানের পর কিছুটা লড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় পঞ্চায়েত।