করোনা অতিমারি জনিত এই দীর্ঘ লকডাউনের সময় যে কথাটি সোশাল মিডিয়ার সৌজন্যে ইতিউতি উড়ে বেড়াচ্ছে, তা হল করোনা ভাইরাস ধনী -দরিদ্র ভেদাভেদ করে না। এরকম এক সাম্যবাদী ভাইরাসের আগমনে যারা যারপরনাই পুলকিত হচ্ছেন তাদের জানানো যেতে পারে ভাইরাসটি ধনী-দরিদ্র না দেখে সংক্রমণ ঘটালেও করোনা মোকাবিলার উপায়, রাষ্ট্রের আচরণ, লকডাউনের ফলাফল ভারতের মতো তীব্র বৈষম্য মূলক সমাজে কোন সাম্যবাদী প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না বরং শ্রেণি অবস্থান মোতাবেক ফলাফল নির্ধারিত হচ্ছে। অন্য সব কথা বাদ থাক,যদি আমরা ৪ কোটি পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি ভারত রাষ্ট্রের ব্যবহার (কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার) কে `বন্দে ভারত `প্রকল্পের মাধ্যমে ডলার উপার্জনকারী অনাবাসী ভারতীয়দের (এক অর্থে এরাও পরিযায়ী) প্রতি ব্যবহারকে তুলনায় রাখি তাহলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এই পর্বে `নিউ নর্মাল `কথাটিও কর্পোরেট প্রচার মাধ্যমের দৌলতে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এর মোদ্দা অর্থ হল করোনা পরবর্তী সময়ে পৃথিবীটা আর আগের মতো থাকবে না।আমাদের জীবনযাপন, কাজের ধরন, খাওয়া দাওয়া, শিক্ষা প্রভৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। সেই নতুন ধরনটাকেই আমরা স্বাভাবিক বলে মেনে নেব। সেই নিউ নর্মালের একটা উপাদান হবে `ওয়ার্ক ফ্রম হোম`। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষ ঘরে বসে কাজ করবে। যদিও যে কাজের মেয়েটি আমার আপনার বাড়িতে কাজ করে, যে শ্রমিক পাথর বা কয়লা খাদানে উদয়াস্ত খেটে মরে বা যাদের ঘাম-রক্তে তৈরি হয় সুউচ্চ অট্টালিকা বা নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের যাবতীয় উপকরণ তাদের ওয়ার্ক ফ্রম হোম কী ভাবে হবে সে সম্পর্কে এই নতুন মন্ত্রের উদগাতারা এখনো কিছু বলতে পারছেন না।এই আলোচনার অনুষঙ্গেই আসছে `অনলাইন এডুকেশনের`কথা যা বর্তমান নিবন্ধের বিষয়বস্তু।
প্রথমেই যে কথাটি স্বীকার করে নেওয়া দরকার যে এই দীর্ঘ লকডাউন অন্যান্য সামাজিক ক্ষেত্রের মতো শিক্ষাকেও লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। বহু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা অসম্পূর্ণ রয়েছে, বেশ কিছু ক্লাসে পরীক্ষা শেষ না হবার কারণে সবাইকে পাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান শিক্ষাবর্ষে নির্ধারিত সময়ে সিলেবাস সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সরকারি স্কুলগুলিতে মিড ডে মিল বন্ধ ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপুষ্টির হার বেড়ে যাবার সম্ভাবনা প্রবল। প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই এক অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই সংকট থেকে মুক্তি পাবার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলো অনলাইন শিক্ষার পক্ষে সওয়াল করছেন। অনেক শিক্ষাবিদ আবার অনলাইন শিক্ষাই ভবিষ্যত বলে নিদান দিতে শুরু করেছেন। এই শিক্ষা পদ্ধতির মূল কথা হল যেহেতু শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছতে পারছে না তাই আধুনিক প্রযুক্তির কুশলী প্রয়োগে শিক্ষকেরা `ভার্চুয়াল ক্লাস রুম তৈরি করবেন এবং বাড়িতে বসে শিক্ষার্থীরা সেই ক্লাসে অংশগ্রহণ করবে। বিষয়টা শুধু ভাবনার স্তরে নেই, ইতিমধ্যেই তার কিছু প্রয়োগ ও প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। বেসরকারি স্কুলগুলোতে (যেখানে পড়াশোনার জন্য ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে একটা মোটা অঙ্কের টাকা ফি বাবদ নেওয়া হয়) শিক্ষার্থীরা রীতিমত ইউনিফর্ম পড়ে কম্পিউটারের সামনে বসে পড়েছে এবং জুম,স্কাইপ প্রভৃতি আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগে ঘণ্টা মেপে `পড়াশোনা` চলছে। সরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে বেশ কিছু রাজ্যসরকার টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ক্লাস করানোর ব্যবস্থা নিয়েছে। এছাড়া সরকার ও সরকার পোষিত স্কুলগুলোতে শিক্ষকেরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে ক্লাস করার চেষ্টা করছেন।
এই মুহূর্তে দেশে সরকারি সিদ্ধান্ত মতে `আনলক-১`পর্ব চলছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলোকে আস্তে আস্তে খুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে জুলাই মাসের শুরুর দিক থেকে ধাপে ধাপে পঠনপাঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে। কিন্তু এই ঘোষণার ফল হয়েছে সাংঘাতিক। দু লাখ অভিভাবকের স্বাক্ষর সম্বলিত (change. org,1st june,2020) একটি আবেদনপত্র মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে পৌঁছেছে যার বক্তব্য হল কোভিড সংক্রমণের সংখ্যা শূন্য না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয় খোলা যাবে না,খোলা হলে তা হবে আগুন নিয়ে খেলার সামিল। সন্তানের জীবন নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা স্বাভাবিক কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আবেদনের দ্বিতীয় অংশে যেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে এ বছর শিক্ষাবর্ষে র বাকি সময়টা অনলাইন ক্লাসই হোক। ১৪০ কোটির দেশে দু লাখ সংখ্যাটা বিরাট না হলেও এই স্বাক্ষরকারীদের শ্রেণি চরিত্র আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না। এরা সমাজের সেই উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি যারা উচ্চ ক্রয়ক্ষমতা সম্পন্ন, যে কোনো আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক আখ্যানের হোতা, জনমত সংগঠক। তাই লকডাউনের কারণে কোটি কোটি মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্ট সরকারকে ভাবাতে না পারলেও এই ক্ষমতাবান শ্রেণির রোষের প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী ঘোষণা করলেন ১৫ আগস্টের আগে স্কুল -কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কোন সম্ভাবনাই নেই।
অনেক ক্ষেত্রেই অভূতপূর্ব পরিস্থিতি অস্বাভাবিক সিদ্ধান্তের দাবি করে। কোনো সন্দেহ নেই যে করোনাজনিত লকডাউন ভারতে আজ সেই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সেক্ষেত্রে ভারতের মত গরিব ও তীব্র বৈষম্য মূলক দেশে সরকারের প্রথম দায়িত্ব হয় এমন সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যা সমাজের দুর্বলতম অংশকে সাহায্য করবে, অন্তত বিদ্যমান বৈষম্যকে আর বাড়তে দেবে না। শিক্ষা ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। তাই অনলাইন শিক্ষার আয়োজনে আমাদের দেখা দরকার এই ব্যবস্থা সকলের জন্য শিক্ষার আদর্শ (inclusive) কে রক্ষা করবে না কি একটা বড়ো অংশের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আঙিনা থেকে বার করে দেবে? এই ব্যবস্থা কি ধনী -দরিদ্র, সামাজিক শ্রেণি ও অঞ্চলগত বৈষম্যকে আরো তীব্র করবে না কি তা লকডাউন জনিত ক্ষতিকে যথাসম্ভব কমিয়ে সমস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে? অনলাইন শিক্ষা কি একটি আপৎকালীন ব্যবস্থা না কি অতিমারির সুযোগে নিউ নর্মালের নামে তা পাকাপাকি ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হবে? একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না যে ৯০-এর দশক থেকে যে সংস্কার কর্মসূচি চালু হয়েছে তার ফলে শিক্ষা আর দশটা পণ্যের মতো নেহাৎই এক বাণিজ্যিক পণ্য যা উপযুক্ত পয়সা দিয়ে খরিদ করা যায়। অনলাইন শিক্ষা কি সেই প্রক্রিয়াকে আরো তীব্র করবে?
অনলাইন শিক্ষা এক প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থা যেখানে দরকার ন্যূনতম পক্ষে একটি অ্যানড্রয়েড ফোন, নিরবচ্ছিন্ন দ্রুত গতির নেট সংযোগ এবং কম্পিউটার। ওয়াকিবহাল মহলের মতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে শিক্ষাদান বাস্তবে কার্যকর নয়। প্রথমে আমাদের কিছু তথ্যের দিকে নজর ফেরানো দরকার ,
#২০১৭-১৮মিশন অন্ত্যোদয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের ৪৭% মানুষ দৈনিক ১২ ঘন্টা করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারেন।
# ভারতের যে নবীন প্রজন্ম কম্পিউটার ব্যবহার করে তার মধ্যে মাত্র ৮% নেট ব্যবহার করে। # ভারতের প্রায় ২৬% মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন যেখানে ডেক্সটপ, ল্যাপটপ,ট্যাবলেট ব্যাবহারকারীর সংখ্যা মাত্র ১১%।
#জাতীয় নমুনা সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের ২৬% মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে কিন্তু ভারতের মোট জনসংখ্যার ৬৬% গ্রামে বাস করে, সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৫.১৫% মানুষ।
#অ্যানুয়াল স্ট্যাটাস অব এডুকেশন ২০১৮ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী সরকারি স্কুলের ছাত্র দের মধ্যে ২১.৩% বিদ্যালয়ে কম্পিউটার চালানোর সুযোগ পায়।
# মানুষকে ডিজিটাল সাক্ষর করার জন্য ২০১৪ সালে National Digital literary mission, Digital sakharata Abhiyan চালু হয়েছে কিন্তু ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত মাত্র ২ কোটি লোককে ডিজিটালি সাক্ষর করা হয়েছে যা ভারতের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১.৬৭%।
উপরিউক্ত তথ্যগুলি থেকে এ কথা পরিষ্কার যে এই ব্যয়বহুল প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা পদ্ধতি তারাই গ্রহণ করবে যাদের পকেটে পয়সা আছে। ন্যূনতম একটা স্মার্টফোন এবং ডেটা কেনার পয়সা না থাকলে শিক্ষার্থী এই ভার্চুয়াল শ্রেণিকক্ষে প্রবেশই করতে পারবে না। কোভিড সাধারণ মানুষের জীবনে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে, তারপর অভিভাবকরা দলে দলে বাজার গিয়ে তাদের সন্তানের জন্য স্মার্টফোন,ল্যপটপ কিনবেন- এ চিন্তা শুধু বাতুলতা নয়,একই সঙ্গে তা চরম প্রতিক্রিয়াশীল। বর্তমান পরিকাঠামোতে এই অনলাইন শিক্ষা চরম বৈষম্যের জন্ম দেবে। এখানে ধনীরা সুবিধা পাবে, আর শ্রমজীবী মানুষের (যাদের বেশিরভাগই অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল, মূলত দলিত, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী) সন্তানেরা মার খাবে। একইসঙ্গে এলাকাগত ও অঞ্চলগত বৈষম্য দেখা দেবে। গ্রামের তুলনায় শহর এগিয়ে থাকবে। আবার কাশ্মীর যেখানে ৪জি ইন্টারনেট পরিষেবা অধিকাংশ সময়ে বন্ধ রাখা হয় সেখানে তো সমস্ত ছাত্র ছাত্রীরাই বঞ্চিত হবে। গত দু মাসের অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে বেসরকারি স্কুলগুলোতে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির সংখ্যা ৯০% চেয়েও বেশি কিন্তু সরকার পোষিত স্কুলগুলোতে হোয়াটসঅ্যাপ নির্ভর অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ১০% বেশি নয়। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন যে সাধারণ সময়ে যখন স্কুল চলে তখন কি আমরা ক্লাসে পূর্ণ উপস্থিতি পাই! কিন্তু যারা এই প্রশ্নটা তুলছেন তারা দুটো বিষয়ের গুণগত পার্থক্যটা উপলব্ধি করতে পারছেন না। সাধারণ সময়ে স্কুলে অনুপস্থিতির দায় সেই শিক্ষার্থীর কিন্তু স্মার্ট ফোন বা ল্যাপটপ না থাকার কারণে অনলাইন ক্লাস করতে না পারার অর্থ সেই শিক্ষার্থীকে শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত ভাবে বাদ(exclusion) করে দিল।এই বঞ্চিত হওয়া শিক্ষার্থীকে শুধু পিছিয়ে দেবে না,তাকে হীনমন্যতার শিকার করে তুলবে। সম্প্রতি কেরলে দেবিকা নামের এক দরিদ্র, দলিত ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে কারণ স্মার্ট ফোন না থাকার কারণে সে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারেনি। তাই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষাই একমাত্র উপায় বলে মেনে নেওয়ার কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না।
এখানে আরেকটা কথাও আলোচনার মধ্যে আসা উচিত। তা হল যদি উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়েও তোলা যায়, তাহলেও কি শ্রেণিকক্ষ ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প হতে পারে ভার্চুয়াল ক্লাস রুম? নিউ নর্মাল মন্ত্রের উদগাতারা যতই ডিজিটাল শিক্ষাকে ভবিষ্যৎ বলে প্রচার করুন না কেন, গত দশ বছরে পৃথিবীর নানা উন্নত দেশগুলোতে অনলাইন শিক্ষার উপর বহু পরীক্ষা -নিরীক্ষার পর একথা মেনে নেওয়া হয়েছে শিক্ষার মূল মাধ্যম হিসেবে ক্লাসরুমের কোন বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়গুলি থেকে শুধু পুঁথিগত শিক্ষা পায় না,তার মধ্যে তৈরি হয় সামাজিক বোধ, সহমর্মিতা। এখনো পর্যন্ত অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ন্যায় ও সাম্যের বোধ শোনা যায়। ফলে দেখা যায় ভারতের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি শুধু মাত্র পঠন-পাঠনের কেন্দ্র নয়,বরং ঐতিহাসিক ভাবে গনতন্ত্র রক্ষায়,ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, নতুন সমাজের স্বপ্নকে বুনতে অগ্রনী ভূমিকা নিয়েছে। অনলাইন ক্লাস সেই সামাজিকতা, ন্যায়বোধ,সহমর্মিতা তথা সংঘবদ্ধতা বিরোধী এক ভাবনা।
কেউ কেউ বলছেন যে অনলাইন শিক্ষা এক আপৎকালীন ব্যবস্থা তাই এটা নিয়ে বিরোধিতা করা অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু আমাদের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা হল করোনা জনিত লকডাউনকে কাজে লাগিয়ে সরকার তার জনবিরোধী অ্যাজেন্ডাগুলিকে রূপায়ণের চেষ্টা করছে। শ্রম আইন সংশোধন বা পাইকারি হারে রাষ্ট্রীয় সম্পদগুলিকে কর্পোরেট হাঙরদের হাতে তুলে দেওয়ার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। অনলাইন শিক্ষা যে বড়ো মাত্রায় সরকার আগামী দিনে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে তার প্রমাণ মেলে ইউজিসি চেয়ারম্যানের কথায় ,” we are seeing at this time of covid–19 and even later when all of this over,to give a push to online education. It is important for improvement in the gross enrolment ratio”। সম্প্রতি নির্মলা সীতারামন যে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তার মধ্যে রয়েছে অনলাইন শিক্ষাকে জোরদার করার জন্য `one class one channel ` তৈরির প্রস্তাব। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক চ্যানলের জন্য একটা সিলেবাস তৈরি হবে যা ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে। এই ভাবনা শিক্ষাকে সংবিধানের যুগ্ম তালিকার অন্তর্ভুক্ত করার যুক্তিকে শুধু আঘাত করছে না,তা সংঘ পরিবারের `এক দেশ,এক শিক্ষা `পরিকল্পনার অনুসারী। অনলাইন শিক্ষাকে যারা এই কঠিন সময়ে একমাত্র উপায় ঠাউরেছেন,তাদের আরেকবার সামগ্রিকতার আলোকে বিষয়টিকে ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ রাখছি।
(লেখক স্কুলশিক্ষক)