সম্প্রতি অসমের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারি বাম(সিপিআইএম)মহলে যথেষ্টই শোরগোল পড়ে গেছে। শোরগোল এর কারণ বিজেপি শাসিত আসামে সিএএ বিরোধী আন্দোলন করে গ্রেফতার হওয়া এক যুবকের সিজার লিস্টে রয়েছে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো। শোরগোল করার মতই বিষয়।
আরও পড়ুন: ‘উপসর্গহীন ব্যক্তিদের থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের নজির খুবই বিরল’: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
কিন্তু এই নিয়ে মুখ খোলার কি কোনো নৈতিক অধিকার সিপিএমের আছে? এক্ষেত্রে ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু ফ্যাসিস্ট বিজেপি এবং সামাজিক ফ্যাসিস্ট সিপিএমের মধ্যে কোনো ফারাক নেই। ৩৪বছরের ‘বাম’ শাসনের দীর্ঘ যাত্রাপথে কত জনের যে সিজার লিস্টে মার্ক্স-এর ক্যাপিটাল, লেনিনের ‘হোয়াট ইজ টু বি ডান’, ‘স্টেট অ্যান্ড রেভোলিউশন’, ‘ইমপেরিয়ালিজম, দ্য হায়েস্ট স্টেজ অফ ক্যাপিটালিজম’, মাও সে তুং-এর নির্বাচিত রচনাবলি পাওয়া গেছে- তা যদি হিসাব দিতে বসা যায় তাহলে একটা বই লেখা হয়ে যাবে। অল্প কয়েকটি নমুনা পেশ করা যাক।
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০০১
শিলিগুড়িতে গ্রেফতার হন ৬৫ জন। সিজার লিস্টে ছিল লেনিনের হোয়াট ইজ টু বি ডান, লেনিন, মাও, লিন পিয়াও-এর জীবনী, মার্কস-এঙ্গেলসের ছবি (শিলিগুড়ি পিএস কেস নং ৩৬৯/২০০১, ১৪/০৯/২০০১)
২০০১
মেদিনীপুরের শালবনিতে গ্রেফতার হন বিধুভূষণ মাহাতো, দীপা সরকার, কাকলি মাজি। কারণ তাঁদের কাছে পাওয়া গিয়েছিল ক্লিন্টন-বিরোধী প্রচারপত্র ও কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো (শালবনি পিএস কেস নং ৬৭/২০০১)
২৩-২৪ জুন, ২০০২
মাঝরাতে খড়গপুর কলেজের ইংরাজির অধ্যাপক অরূপ দাশগুপ্তর বাড়ি পুলিশ তল্লাশি করে, এবং তিনি যেসব বই রাখার জন্য অভিযুক্ত হন – জর্জ টমসনের ফ্রম মার্কস টু মাও, সরোজ দত্ত স্মৃতিরক্ষা কমিটির ‘শহীদ স্মরণে’ ও ‘বিপ্লবী যুগ’ (রেজিস্টার্ড পত্রিকা) অক্টোবর সংখ্যা (গোয়ালতোড় পিএস কেস নং ৬২/২০০২)
৪ জুলাই, ২০০২
মাঝরাতে গ্রেফতার হন পরাশর ভট্টাচার্য, কৌশিক গাঙ্গুলি ও টিঙ্কু ঘোষ। বইয়ের তালিকায় ছিল – ওয়ার্কার নামের একটি কমিউনিস্ট দলের মুখপত্র, দিনান্তের অন্বেষণ (রেজিস্টার্ড), মার্কসবাদী পাঠক্রম, আজব কাহিনি, বিপ্লবী যুগ (রেজিস্টার্ড), অল ইন্ডিয়া পিপলস রেসিস্টান্ট ফোরামের কিছু ইস্তেহার। পরাশর ভট্টাচার্যের বাড়ি থেকে বিছানার চাদরে বেঁধে পুলিশ লেনিন রচনাবলী নিয়ে গিয়েছিল, যার উল্লেখ সিজার লিস্টে ছিল না।
নিজেদের পাপের অতীতকে চাপা দেওয়ার হাজার চেষ্টা করলেও তা কি আর চাপা দেওয়া যায়? যায় না। বিজেপি করলে মুর্দাবাদ, আর নিজেরা করলে জিন্দাবাদ। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয় ২০০৭ সালের ১৪ মার্চকে। ওই দিন ভারতের দু জায়গায় গুলি চলে- আমাদের রাজ্যের নন্দীগ্রামে, এবং রাজস্থানে। নন্দীগ্রামের নৃশংস, নির্মম, বর্বর ঘটনাকে সিপিএম পলিটব্যুরো বলে এ রাজ্যে হাঙ্গামা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও ষড়যন্ত্র আর রাজস্থানে কৃষকদের উপর রাষ্ট্রীয় হামলা। এই দ্বিচারিতা স্ববিরোধিতা সিপিএমের মজ্জায় মজ্জায়। ইউএপিএ কালা কানুন নিয়ে সিপিএম বর্তমানে গলার শির ফুলিয়ে স্লোগান দিলেও এটা কি চাপা দেওয়া যাবে সিপিএমের আমলেই এই রাজ্যের ইউএপিএ-র প্রথম শহিদ হন রেজিস্টার্ড বাংলা পিপলস মার্চ পত্রিকার সম্পাদক স্বপন দাশগুপ্ত, যার সিজার লিস্টে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো না থাকলেও হৃদয় ও মস্তিষ্কে মার্ক্স এঙ্গেলস লেনিন স্ট্যালিন মাও তো ছিলেনই।
তথ্যসূত্র: সুমন্ত নারায়ণ