Home খবর রয়েছে দ্বিমত, ভিনরাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের ঘরে ফেরানো নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি নবান্ন
0

রয়েছে দ্বিমত, ভিনরাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের ঘরে ফেরানো নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি নবান্ন

রয়েছে দ্বিমত, ভিনরাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের ঘরে ফেরানো নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি নবান্ন
0

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: লকডাউনের কারণে বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্তই নেয়নি পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

রাজ্য এবং দেশ জুড়ে কোরোনায় মৃত এবং আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় অন্য রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের এখনই পশ্চিমবঙ্গে ফেরানো আদৌ উচিত হবে কিনা তা নিয়ে সরকারের অভ্যন্তরে মত বিরোধের কারণেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্য রাজ্যে যাবার বিষয়েই কেবল সুস্পষ্ট নীতি তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। এজন্য অন লাইনে আবেদন করার জন্য লিঙ্কও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভিন রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের কীভাবে ঘরে ফেরানো হবে তা নিয়ে এখনও কোনো নীতি স্থির করা হয়নি।

লক ডাউনের ফলে এ রাজ্যের কয়েক লক্ষ শ্রমিক অন্যান্য রাজ্যে আটকে পড়েছেন। খাদ্য ও অর্থের অভাবে অনাহার, অর্ধাহারে থাকছেন। বিদেশ অথবা দেশের কোটা থেকে ধনী পরিবারের মানুষদের ঘরে ফেরাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি উদ্যোগ নিলেও গরিব শ্রমিকদের বিষয়ে প্রতিটি সরকার উদাসীন। এমনকি কপর্দকশূন্য মানুষগুলিকে টিকিট কেটে ট্রেনে উঠতে হবে বলেও ফরমান জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

জানা যাচ্ছে যে স্বাস্থ্য ভবন এবং নবান্নের এক শ্রেণির উচ্চ পদস্থ অফিসার সরকারকে জানিয়েছেন যে মহারাষ্ট্রের  মুম্বই সংলগ্ন এলাকা এবং দিল্লির এনসিআর এলাকায় করোনার প্রকোপ দেশের মধ্যে সর্বাধিক। ওই সব এলাকা থেকে শ্রমিকদের পশ্চিমবঙ্গে ফেরাতে হলে তাদের প্রত্যেককে করোনা টেস্ট করাতে হবে। সন্দেহভাজনদের কোয়ারানটাইনে রাখতে হবে। কিন্তু এই কাজ করতে গেলে যে বিশাল পরিকাঠামো প্রয়োজন তা এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নেই। তাই এখনই এই বিশাল সংখ্যক শ্রমিককে ঘরে ফেরানো ঠিক হবে না বলে এই অফিসাররা মত দিয়েছেন।

নবান্নের অফিসারদের আর একটি অংশ অবশ্য মনে করেন যে ভিন রাজ্যে আটকে পড়া শ্রমিকরা খাদ্য এবং অর্থের অভাবে চরম দুর্দশায় পড়েছেন। তাই তাদের এখনই ঘরে ফেরানো উচিত।

পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানো নিয়ে এখনই যে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি তা অবশ্য সরকার গোপন রাখতে চাইছে। ঘরে ফেরার আবেদন জানানোর জন্য যে হেল্প লাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেই ফোন যে কেউ ধরছেন না একথা সরকার জানে। সোমবার রাজ্যের মুখ্য সচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, শ্রমিকরা যদি ঘরে ফিরতে চান তবে তাদের সংশ্লিস্ট  রাজ্যের মুখ্য সচিব, জেলা শাসক অথবা পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করতে হবে। এই কাজ যে একজন সাধারণ শ্রমিকের পক্ষে করা কঠিন, তাও সরকার জানে। আসলে শ্রমিকদের যেন এখনই ঘরে ফেরাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকার সচেতন ভাবেই কালক্ষেপ করছে।

২০১১ সালের জন গণনার রিপোর্ট অনুযায়ী ৫.৮ লক্ষ মানুষ পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভিন রাজ্যে কাজ করতে যান। বেসরকারি মতে এই সংখ্যাটি প্রায় ১০ লক্ষ। যে পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলি থেকে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে যান তার মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।

এ রাজ্য থেকে সব চেয়ে বেশি শ্রমিক যান মহারাষ্ট্র (৪৫.৩%), দিল্লী (৩৪%), গুজরাত, হরিয়ানা, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় এবং কাশ্মীরে। সব চেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিক ভিন রাজ্যে কাজ খুঁজতে যান বর্ধমান, নদিয়া, হুগলি ও মুর্শিদাবাদ থেকে।

২০১৪-১৮ সালে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ৫১ টি ব্লকে ডিইসিএমএ’র করা একটি গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে যে প্রায় ৬৪ শতাংশ শ্রমিক ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ কৃষি থেকে তাদের যা রোজগার হয়, সংসার চালানোর জন্য তা যথেষ্ট নয়।  এবং তারা প্রায় সকলেই দেনার দায়ে জর্জরিত।

ডিইসিএমএ’র ভারতের শীর্ষ গবেষক এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুহিন ঘোষ জানিয়েছেন, অন্য রাজ্যে রোজগারের খোঁজে যাবার ফলে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু গ্রাম এখন পুরুষ শূন্য।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *