পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: কোভিড অতিমারি মোকাবিলার হাত ধরে গোটা দুনিয়াতেই শাসকরা নিজেদের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করছে। জনগণের ওপর নজরদারী বাড়াচ্ছে। দুনিয়ার বহু দেশ ইতিমধ্যেই পুলিশ রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে।
যেসব গরিব দেশে লকডাউনের পর্যায়ে রাষ্ট্র জনগণের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে পারছে না। সেখানে জনগণ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাতে আরও বাড়ছে পুলিশি নিপীড়ন। ভারও তার বাইরে নয়। লকডাউনের শুরুর পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গেও জনগণের ওপর পুলিশি অত্যাচারের বেশ কিছু নিদর্শন দেখা গেছে। অন্যদিকে কলকাতার বিভইন্ন মধ্যবিত্ত-উচ্চ মধ্যবিত্ত পাড়ায় পুলিশের গান গাওয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে। বোঝা গেছে পুলিশের লাঠি জনগণের কোন অংশের ওপর সক্রিয়তা দেখায়।
হাওড়ায় দুধ আনতে গিয়ে পুলিশের মার খেয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। যদিও পরে জানানো হয়েছে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সম্প্রতি হাওড়ার টিকিয়াপাড়ায় পুলিশের ওপর স্থানীয় মানুষের চড়াও হওয়ার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুরু করে বিজেপি।
লকডাউনের জেরে পুলিশের ডান্ডা পড়ছে ক্ষুধার্থ মানুষের শরীরে- এই মর্মে একটি ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন হাওড়ার সাঁতরাগাছি থানা এলাকার বাসিন্দা ছাত্র দেবদত্ত। সেই পোস্টে বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতিরও সমালোচনা করা হয়। বুধবার ওই পোস্টের জেরে সাঁতরাগাছি থানা থেকে দেবদত্তর বাবাকে ফোন করে থানায় যেতে বলা হয়। পরবর্তীতে থানা থেকে গাড়ি নিয়ে এসে দুজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওই পোস্টের কারণ জানতে চাওয়া সহ নানা ভাবে তাকে হেনস্থা করা হয় বলে দেবদত্তর অভিযোগ। ওই ছাত্র বিপ্লবী ছাত্র ফ্রন্ট নামে একটি নকশালপন্থী ছাত্র সংগঠনের সদস্য। সেই বিষয়েও তাকে নানা প্রশ্ন করা হয়। এরপর তাকে নিয়ে নিয়ে যআওয়া হয় টিকিয়াপাড়া থানায়। সেখানে গোয়েন্দা বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনারের উপস্থিতিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। দেবদত্তর অভিযোগ, পুলিশে তার ‘জীবন নষ্ট’ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদের পর দেবদত্তকে পুলিশ ছেড়ে দিলেও তার মোবাইলটি আটকে রাখে ও মোবাইলের সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে। এবং ৩০ এপ্রিল অর্থাত বৃহস্পতিবার সকাল সারে এগারোটায় আবার থানায় নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানানো হয়। যদিও তার বিরুদ্ধে এখনও কোনো মামলা রুজু করা হয়েছে কিনা স্পষ্ট নয়। লকডাউন ভারত তথা রাজ্যের মেহনতি মানুষের ওপর এক জটিল সমস্যা নামিয়ে এনেছে। একদিকে স্বাস্থ্য অন্যদিকে ক্ষুধা। নাগরিকের স্বাস্থ্যরক্ষার কথা বলে লকডাউন করলেও, রাষ্ট্র যে দৃঢ় ভাবে গোটা দেশে লকডাউন চালাতে পারছে না, তা দেখাই যাচ্ছে। কারণ লকডাউন ঠিকমতো চালাতে গেলে জনগণের যে দায়িত্ব তাকে নিতে হবে, সেটা নেওয়ার অবস্থায় সে নেই। পুঁজিপতিদের বেলআউট দিতে তার আগ্রহ বেশি। এই অবস্থায় অনেকসময়ই গরিব মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে। তার পেছনে লুকিয়ে থাকা কারণ যারা খোঁজার চেষ্টা করছে, রাষ্ট্র যে তাদের মুখ বন্ধ করে স্বস্তি পেতে চাইছে, দেবদত্তর ঘটনা তা প্রমাণ করছে বলেই মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
ছবি: প্রতীকী