পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: দক্ষিণ ছত্তীসগঢ়ের গভীর জঙ্গলে যাতে করোনাভাইরাস ঢুকতে না পারে, তার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছেন আদিবাসীরা। এলাকাটি অনেকাংশে মাওবাদী প্রভাবিত। বাইরের লোকের গ্রামে ঢোকা আটকানোর জন্য বানানো হয়েছে অস্থায়ী চেকপোস্ট।
বদলে তারা বহিরাগতদের জন্য কোয়ারান্টাইনেরও বন্দোবস্ত করেছেন। গ্রামের যেসব মানুষ কাজের জন্য বাইরে গিয়েছিলেন, তারাই এখন বহিরাগত।
আদিবাসীদের সংগঠন ‘সর্ব আদিবাসী সমাজ’-এর উদ্যোগেই এই প্রক্রিয়া চলছে। সক্রিয় ভাবে সাহায্য করছে মাওবাদীরা। বস্তার ডিভিশনে ৩০ লক্ষ মানুষের বাস কিন্তু সেখানে এখনও একজনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি।
বছরের এই সময়টা হাজার হাজার মানুষ বস্তার ডিভিশনের জেলাগুলি থেকে হাজার হাজার মানুষ লঙ্কা তুলতে তেলেঙ্গনা বা অন্ধ্রপ্রদেশের সীমান্তে যান। কিন্তু লকডাউনের ফলে তাদের অনেকেই গ্রামে ফিরে এসেছেন। আদিবাসীরা কোনো গোলমাল না করে ফিরে আসা মানুষগুলোকে গ্রামের থেকে কিছুদূরে নিভৃতবাসে রেখেছেন। জঙ্গলে কলাগাছের নীচে, স্কুলে কিংবা অঙ্গনওয়াড়িতে গ্রামবাসীরা কুঁড়েঘর বানিয়ে ফিরে আসা গ্রামবাসী ও তাদের পরিবারকে রাখা হচ্ছে। কোয়ারান্টাইনের সময়গুলোয় তাদের খাবারের ব্যবস্থাও করছেন গ্রামবাসীরাই।
জঙ্গলের মধ্যে থাকা গ্রামগুলিতে বহিরাগতদের ঢুকতে না দেওয়ার জন্য চেকপোস্ট তৈরি করা হয়েছে। পুলিশ ক্যাম্পগুলি সবই বড়ো রাস্তার উপর। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা স্থানীয় গোন্ডি বা হালবি ভাষায় গ্রামবাসীদের সচেতন করতে পারেন।
পুলিশের পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে যে, মাওবাদীরা সাহায্য না করলে ওই গ্রামগুলিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা ঢুকতে পারতেন না। কারণ ওই সব গ্রামগুলিতে এমনি সময় পুলিশ ঢুকতে পারে না।
বিজেপির আদিবাসী নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ নন্দকুমার সাই এবং বস্তারের সাংবাদিক কমল শুক্লা ও মঙ্গল কুঞ্জম সকলেই মানছেন, “মাওবাদীদের নীরব সমর্থন ছাড়া এত সহজে কোয়ারান্টাইনের বন্দোবস্ত করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াত”।
বস্তার রেঞ্জের আইজি সুন্দররাজ পি অবশ্য সে কথা মানতে চাননি। তাঁর মতে, উৎসবের সময় যাতে অকারণে লোকে এ গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে না যায়, সেদিকে আদিবাসীরা বরাবরই নজর রাখে। সেই চিরকালীন অভ্যাসের জেরেই তারা কোয়ারান্টাইনের বন্দোবস্ত করছেন।সুন্দররাজের দাবি শহর ও গ্রামাঞ্চলে গাড়িঘোড়ার নিয়ন্ত্রণ বাহিনী করছে, আর জঙ্গলের মধ্যে তা করছেন আদিবাসীরা।
দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের অংশবিশেষ
ছবি সৌজন্য: দ্য হিন্দু