Home সমাজ গৃহ হিংসা চিরকালই আন্তর্জাতিক মহামারি, লকডাউনে তার মাত্রা বেড়েছে মাত্র
0

গৃহ হিংসা চিরকালই আন্তর্জাতিক মহামারি, লকডাউনে তার মাত্রা বেড়েছে মাত্র

গৃহ হিংসা চিরকালই আন্তর্জাতিক মহামারি, লকডাউনে তার মাত্রা বেড়েছে মাত্র
0

Virasam.org ওয়েব পোর্টালে সম্প্রতি Domestic abuse has always been a global pandemic নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। আমরা তার বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করলাম। অনুবাদ করেছেন ইন্দ্রনীল দাস।

‘বাড়িতে থাকুন,নিরাপদে থাকুন’। হ্যাঁ, কোভিড ১৯- এর বিস্তার রুখতে এই সতর্কবার্তাই প্রচারিত হয়ে চলেছে।কিন্তু দিনভর বাড়ির ভিতর সকলে একত্রিত হয়ে থাকার ফল ঠিক কী কী হতে পারে? চাইল্ড হেল্পলাইন ‘১০৯৮’-এ দৈনিক ৯২ হাজারেরও বেশি মামলা গৃহীত হচ্ছে, একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছে উইমেনস হেল্পলাইনে গৃহীত মামলার সংখ্যাও। তথ্যসূত্র অনুযায়ী, লকডাউন চলাকালীন এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, শুধু তাই নয় সঙ্গে বেড়েছে ঘটনার নৃশংসতাও। লকডাউন পরিস্থিতিতে অপরাধী সর্বক্ষণ কাছে থাকার দরুণ বর্বরতার শিকার হওয়া সত্ত্বেও অত্যাচারিত ব্যক্তি অপরাধীর বিরুদ্ধে কোনোপ্রকার অভিযোগ দাখিল করতে গিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় তাদের না তো পালিয়ে বাঁচার উপায় রয়েছে না রয়েছে বন্ধু পরিজনের কাছ থেকে সাহায্যপ্রাপ্তির রাস্তা। তাই শিশু এবং নারী নির্যাতনের প্রকৃত সংখ্যাটা আরো অনেকটা বেশি হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বধূ নির্যাতনের ঘটনার ক্ষেত্রে, স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের পর বাপেরবাড়ি ফেরার রাস্তা না থাকায় তাদের এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে পড়ে থাকতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন: করোনায় গৃহ পরিচারিকাদের বেতন কাটছে মধ্যবিত্ত, সমাধান কৃষক আন্দোলনেই

একথা বলা যেতেই পারে, একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও আমরা যে পিতৃতান্ত্রিকতাকে অটুট রাখতে সক্ষম হয়েছি তারই ফল এই শিশু এবং নারী নির্যাতন। বেশ কয়েকটি দেশ যখন রোগীর শুশ্রূষায় রোবোটের ব্যবহার ইতিমধ্যেই শুরু করে ফেলেছে ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনতে, সেখানে আমরা এখনও সেই বহু পুরনো পিতৃতান্ত্রিকতার সাথে লড়াই-এই ব্যস্ত। পিতৃতন্ত্রের দৌলতে পরিবারের মহিলারা নিকৃষ্ট শ্রেণিরূপে গণ্য হয়। এরূপ আচরণের মূল বহু যুগ আগেই প্রোথিত হয়েছিল। কিন্ত প্রশ্ন হল,সভ্যতার অগ্রগতি এমন সমাজের এই অবস্থার রূপান্তর ঘটাতে ব্যর্থ হয়ে পড়ে কেন? নারী-পুরুষ সমসর্যাদার সমাজব্যবস্থা এখনো অধরা কেন?

এই উদারনৈতিক পুঁজিবাদের যুগে,আমাদের একথা ভুললে চলবে না যে, সংকটের উপর ভিত্তি করেই পুঁজিবাদ সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে, ঠিক যেমন বর্তমানে একদিকে জীবনদায়ী ওষুধ, ভেন্টিলেটরের আকাল তৈরি করে এবং অন্যদিকে অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে যুদ্ধ পরিস্থিতিকে সজীব করে রেখে এই পুঁজিবাদী সভ্যতা তার শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়ে চলেছে। একইভাবে এই পুঁজিবাদ টিকে থাকে পিতৃতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে, তাই পিতৃতান্ত্রিকতাকে দমন করার চেষ্টা কখনোই করা হয় না, শুধুমাত্র শান্ত করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।পুঁজিবাদ এবং পিতৃতন্ত্রের সম্মিলিত অভিসন্ধিই এত দীর্ঘসময়ব্যাপী এমন হীন ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

এই বিশ্ব মহামারির সময় সরকার ঘোষিত লকডাউনকে হাতিয়ার করে গৃহ নির্যাতন,ধর্ষণের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকা সত্ত্বেও সরকারি তরফে কোনোরকম পদক্ষেপ নেওয়া তো দূরের কথা, চাইল্ড হেল্পলাইন, ওইমেনস হেল্পলাইনকে জরুরি পরিষেবার আওতায় আনা হয়নি।

এমনকি, এরপরও তারা নির্দ্বিধায় তাদের উপর আস্থা রাখার কথা বলে চলেছে। আমজনতার প্রয়াসেই ‘অনলাইন সাপোর্ট গ্রুপস’ গড়ে তোলা হচ্ছে। তারাই ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে অত্যাচারিতের কাছে পৌঁছাচ্ছে এমনকি পুলিশ প্রশাসনকে এই ঘটনাগুলিতে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য করছে। এই মহামারি সরকারকে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকার সময় নয়, বরং বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশ্ন তোলাটাই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ অত্যাচারিত মানুষদের নীরব থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। যে একতা গড়ে তোলার কথা বারবার করে বলা হচ্ছে তা কখনোই করতালি দিয়ে বা মোমবাতি জ্বালিয়ে সম্ভব না, সেই একতা গড়তে হলে আমাদের প্রত্যেককে পরস্পরের সাথে যুক্ত হতে হবে এবং গলা টিপে বন্ধ করা প্রতিবাদী আওয়াজগুলোর বিস্তার ঘটাতে হবে।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *