২০১৫ সালে এক মার্কিন গবেষণাগারে তৈরি হয়েছিল করোনাভাইরাস
এই পোর্টালে প্রকাশিত Coronavirus was created in an American Lab in 2015 নিবন্ধের বাংলা অনুবাদ।
স্বপন রায়
প্রায় ৬ বছর আগে, ২০১৫ সালে আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অখ্যাত বিজ্ঞানী, রালফ বারিক গবেষণাগারে একটি ভাইরাস সৃষ্টি করেন। ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর, বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ‘নেচার মেডিসিন’-এ প্রকাশিত তার গবেষণাপত্রে বারিক জানান, তার তৈরি ভাইরাসে SHC014 করোনাভাইরাসের সারফেস প্রোটিন রয়েছে এবং গবেষণাগারের পরীক্ষার সময় ইঁদুরের মানুষের মতোই অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম(শ্বাসনালির সমস্যা)দেখা দিয়েছে। গবেষণাগারে তৈরি এই শঙ্কর প্রজাতির ভাইরাসটি মানবশরীরের বায়ূবহনকারী কোশগুলিকে সংক্রমিত করতে পারে বলে বারিক জানান।
৬ বছর পর করোনা ভাইরাস এখন হত্যার নেশায় মজেছে। গোটা দুনিয়ায় ইতিমধ্যে ১ লক্ষ ১০ হাজার মানুষ নিহত, ১৮ লক্ষ মানুষ সংক্রমিত। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রএই নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার পেরিয়েছে। ভারতে গত কয়েকদিনে রোজই প্রায় এক হাজার করে সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে, নিহতের সংখ্যা ৩০০-র কাছাকাছি। মৃতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। অর্থনীতি ধ্বংস হওয়ার মুখে। চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বহু মানুষ যে করোনায় মারা যাবেন তা নয়, তারা মরবেন খিদের জ্বালায়।
আরও পড়ুন: করোনার ঝাড় খেয়ে জনগণের দাবি
সতর্কবাণী উপেক্ষিত
বারিক এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসটি তৈরি করার কয়েকমাস আগে, এই ভয়ঙ্কর ভাইরাস নিয়ে গবেষণার ঝুঁকি ও উপকার নিয়ে আলোচনা করতে একদল বিজ্ঞানী আমেরিকার ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ মিলিত হন। এই গবেষণার বেশিরভাগ খরচই বহন করছিল মার্কিন সামরিক বাহিনী। ওই বৈঠকে প্রবল বিতর্ক হয়। এরকম একটি ভয়ঙ্কর ভাইরাস দুর্ঘটনাক্রমে গবেষণাগার থেকে বেরিয়ে গিয়ে দুনিয়া জুড়ে অতিমারি তৈরি করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মারতে পারে বলে বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করেন। ইনফ্লুয়েঞ্জা, মার্স, সার্স নিয়ে চলতে থাকা ১৮টি গবেষণা প্রকল্প মার্কিন সরকার বন্ধ করে দেয়।
করোনাভাইরাস নিয়ে বারিকের গবেষণা অবশ্য চলতে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় প্রতিষ্ঠান, যেহেতু সরকারের স্থগিতাদেশের আগেই করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে, তাই বারিকের গবেষণা নতুন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়বে না।
বারিক বলেন, তার গবেষণা প্রতিষেধক ও ওষুধ নিয়ে চর্চার জন্য প্রয়োজনীয়। বারিকের গবেষণাপত্র যেখানে প্রকাশিত হয়েছিল, সেই নেচার পত্রিকা মনে করেছিল, গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী SHC014 সারফেস প্রোটিন মানব কোশকে নিষ্ক্রিয় ও সংক্রমিত করতে পারে- কোনো মধ্যবর্তী প্রাণী ছাড়াই বাদুর থেকে সরাসরি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের ভাইরোলজিস্ট সাইমন ওয়েইন-হবসন নেচারকে বলেন, “যদি এই (নতুন)ভাইরাস গবেষণাগার থেকে বেরিয়ে, তাহলে কী বিশাল কাণ্ড হতে পারে, তা কেউ চিন্তা করতে পারবে না”।
জৈব অস্ত্র
করোনাভাইরাস একটি জৈব অস্ত্র। মার্কিন গোয়েন্দা-বিভাগ বিশেষজ্ঞ গ্রেগ রুবিনি বলেন, “নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্বাবিদ্যালয়ের বিএসএল-৩ গবেষণাগারে জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে জৈব অস্ত্র হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। ভাইরাসটি নর্থ ক্যারোলিনা থেকে চিন, ইতালি ও আমেরিকায় ছড়িয়েছে”।
যেখান থেকে অতিমারি শুরু হল, সেই চিনে এটা কীভাবে পৌঁছল, তা নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জৈব অস্ত্র সন্ত্রাস-বিরোধী আইন, ১৯৮৯-এর খসড়া বানিয়েছিলেন ফ্রান্সিস বয়েল। তাঁর মতে করোনাভাইরাস অবশ্যই জিন প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি জৈব অস্ত্র। চিনা বিজ্ঞানীরা এটা চুরি করে উহানের বিএসএল-৪ গবেষণাগারে নিয়ে গিয়েছেন। বয়েলের বক্তব্য, এটি সেখান থেকেই দুর্ঘটনাক্রমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিমসন রোগসংক্রমণ
মার্কিন সরকার কি জানত যে করোনাভাইরাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণ করবে? মার্কিন সরকার তাদের দেশকে সম্ভাব্য অতিমারির জন্য প্রস্তুত করতে মোট তিনবার অনুশীলন করেছে- তার মধ্যে শেষটি ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত। তার কোড ছিল ‘ক্রিমসন রোগসংক্রমণ’। ট্রাম্প প্রশাসনের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা দফতর ১২টি প্রদেশের স্কুল ও অফিস বন্ধ করে দেয় এবং ওষুধ ও যন্ত্রপাতির ভাণ্ডার কী অবস্থায় আছে, তার হিসেব কষে।
ওই অনুশীলনগুলির খসড়া রিপোর্টে, যা কিনা ‘প্রকাশযোগ্য নয়’, অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে বারবার তৈরি হওয়া ‘বিভ্রান্তি’র স্পষ্ট বিবরণী লিপিবদ্ধ রয়েছে। অনুশীলন চলাকালীন বিভিন্ন সরকারি বিভাগগুলির মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধে, এর দায়িত্বে কে আছে, তা নিয়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরুতে করোনাভাইরাসকে কোনো গুরুত্ব দিতেই রাজি ছিলেন না, পরে তিনি মত বদলান এবং বলেন, তিনি আগে থেকেই জানতেন যে একটা অতিমারি আসছে। ট্রাম্পের ডিগবাজি এবং বারবার অনুশীলন সত্ত্বেও মার্কিন প্রশাসনের অতিমারি রুখতে ব্যর্থতার ব্যাখ্যা এখনও মেলেনি।
ধনকুবেররা জানত
২০১৫ সালে ধনকুবের বিল গেটস একটি বিশ্বব্যাপী মহামারির জন্য সতর্ক করেছিলেন এবং বলেছিলেন কোনো দেশ এর জন্য প্রস্তুত নয়। গেটস বলেছিলেন বিশ্বব্যাপী এই বিপর্যয় পরমাণু যুদ্ধের হাত ধরে আসবে না, আসবে অতিমারি হয়ে।
২০১৮ সালের শেষে গেটস আবার নতুন মহামারি নিয়ে তাঁর শঙ্কা ব্যক্ত করেন এবং এর উৎস হিসেবে চিনের নামও করেন। তিনি বলেন ‘চিনা ভাইরাস’ দুনিয়া জুড়ে তিন কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ মারবে।
গেটস যে জনসংখ্যা কমানোর পক্ষপাতি, তা দুনিয়া জানে। বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ব্রিটিশ পারব্রাইট ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষক। ওই প্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালে জীবন্ত করোনাভাইরাসের পেটেন্টের জন্য আবেদন করে, ২০১৮ সালে তা অনুমোদন পায়।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বাজারের পতন হওয়ার আগে মার্কিন সেনেটর রিচার্ড বার এবং কেলি লোয়েফলার প্রচুর শেয়ার বিক্রি করে দেন। দুজনেই সেনেটের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কমিটির সদস্য। রিচার্ড বার সেনেটের গোয়েন্দা বিভাগ সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান। সেনেটর লোয়েফলারের স্বামী জেফরি স্প্রেচের নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান।
সমস্ত সরকারি জৈব অস্ত্র সহ নতুন অস্ত্র নিয়ে গবেষণার জন্য তাদের সামরিক বাহিনীকে অর্থ বরাদ্দ করে। ক্ষমতাবানদের সকল যুদ্ধই বড়ো কর্পোরেট এবং বহুজাতিক সংস্থাগুলির মুনাফার থলি ভরিয়ে তোলে এবং গরিব মানুষ তার বলি হয়।করোনাভাইরাস মানুষ মারছে এবং জীবনকে ধ্বংস করছে। আর কতদিন এটা চলবে?