Home জনস্বাস্থ্য ভারত কতটা ‘স্বাধীন গণতান্ত্রিক’ দেশ? ট্রাম্পের হুমকি সেই প্রশ্নটা নতুন করে তুলে দিল

ভারত কতটা ‘স্বাধীন গণতান্ত্রিক’ দেশ? ট্রাম্পের হুমকি সেই প্রশ্নটা নতুন করে তুলে দিল

ভারত কতটা ‘স্বাধীন গণতান্ত্রিক’ দেশ? ট্রাম্পের হুমকি সেই প্রশ্নটা নতুন করে তুলে দিল
0
অয়ন ব্যানার্জি

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সরবরাহ না করলে ভারতের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে আমেরিকা, দেশের লোক ওষুধ না পেয়ে করোনাতে মরে যাক,আমেরিকাতে ওষুধ পাঠাতেই হবে। প্রভুর ইচ্ছাতেই কর্ম। অতীতেও দেখা গেছে আমেরিকার থার্ড গ্রেড গম কিনতে বাধ্য হয়েছে ভারত সরকার। এরপরেও সেই সব ভোটবাজ বামেরা যারা বলে আসছে আমাদের দেশটা একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশ, তাদেরকে যদি কেউ সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল বলে,তাতে কোনো ভুল হয় না।  আমাদের দেশটা যে একটা আধা ঔপনিবেশিক আধা সামন্ততান্ত্রিক দেশ, এইসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে সেই সত্যই যেন বারবার প্রমাণ হচ্ছে। সারা দেশ জুড়ে সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার, স্বাধীন করার লড়াই চলছে। আর যে সমস্ত রাজনৈতিক দল (ডান-বাম নির্বিশেষে) দেশটাকে ‘স্বাধীন গণতান্ত্রিক’ বলছে তারা আসলে দেশের আপামর মেহনতি জনগণের কাছে এই রাষ্ট্র সম্পর্কে একটা মিথ্যা মোহ তৈরি করে আরো আরো করে দেশটাকে সাম্রাজ্যবাদীদের লুন্ঠনের মৃগয়াক্ষেত্র বানাতে চাইছে।

যার শুরু সেই ১৯৪৭ সাল থেকেই। ভারতের স্বাধীনতা আইন প্রতিটা ক্ষেত্রেই ছিল ব্রিটিশ ভারতের আইনের ধারাবাহিকতা। নেহেরু কেবল বিনিয়োগ হয়ে থাকা ব্রিটিশ পুঁজিকেই রক্ষা করবার ব্যবস্থা করেননি তার সাথে সাথে অন্যান্য বিদেশি পুঁজি বিশেষত মার্কিন পুঁজিকে ঢোকার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। কয়েকটি হিসেব দেখা যাক-

১৯৬৮ সালে বৃহৎ শিল্প,ব্যাঙ্ক, খনি, বাগিচা ও বড় ব্যবসাতে মোট যে পুঁজি খাটতো তার অর্ধেক বিদেশি পুঁজির দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রিত।

১৯৪৮ থেকে ১৯৬১- এই সময়কালে বিদেশিরা যতটা বিনিয়োগ করেছে তার তিন গুন তারা নিয়ে গেছে।

ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের আর একটা বৈশিষ্ট্য হলো দেশকে বাধ্যতামূলক ঋণের জালে জড়িয়ে দেওয়া। যেখানে ১৯৫১ সালে কোনো বৈদেশিক ঋণ ছিল না সেখানে ১৯৬১ সালে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০৭৩ কোটি টাকা আর পরবর্তী পাঁচ বছরে সেটা দ্বিগুনেরও বেশি হয়ে দাঁড়ায় ২৩৪১ কোটি টাকা।

এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের শাসকশ্রেণি ৮০-র দশক থেকে আরো বেশি করে আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার থেকে ঋণ নিতে  শুরু করে এবং সেই ঋণের শর্তে জড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯৮১ সালে ভারত আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার থেকে ৪০০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়। এরপর ১৯৯১ সালে ব্যালান্স অফ পেমেন্টের যে সংকট দেখা দেয় সেটা থেকে বাঁচতে দ্বিতীয় দফায় ভারত যখন ঋণ গ্রহণ করে তখন থেকে উদারিকরণ ও কাঠামোগত পুনর্বিন্যাসের আসল আক্রমণ শুরু হয়। বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের উপর যেটুকু পর্দা ছিল তাও তুলে দিয়ে যেসব আর্থিক নীতি গ্রহণ করা হয় তা হল-

 (১) সমস্ত দেশীয় শিল্পকে বিদেশি বিনিয়োগের আওতায় আনা।

(২) বিদেশি বিনিয়োগের মাত্রা ৪০% থেকে বাড়িয়ে ৫১%, কিছু ক্ষেত্রে ১০০% করা।

(৩) প্রতিরক্ষা, পারমাণবিক শক্তি, কয়লা, রেল সহ সরকারি ক্ষেত্র বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া।

(৪) বিদেশি বৃহৎ সংস্থার স্বার্থে  MRTP(MONOPOLIES &RESTRICTIVE TRADE PRACTICE ACT) আইন তুলে দেওয়া।

(৫) দেশীয় বা আমদানিকৃত কাঁচামাল ব্যবহার করার ব্যাপারে বিদেশি বহুজাতিক সংস্থাকে অবাধ স্বাধীনতা প্রদান ইত্যাদি ইত্যাদি।

এরই ধারাবাহিকতায় কুইনাইন প্রস্তুতকারী লাভজনক সরকারি সংস্থা বেঙ্গলকেমিকাল সহ সমস্ত সরকারি সংস্থাকে বেচে দেওয়া হচ্ছে এবং তাকে উন্নতি বলে চালানো হচ্ছে। যেমন এক সময় গোটা দেশ সহ পশ্চিমবাংলাতে উন্নয়নের নাম করে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে পরিবেশের তোয়াক্কা না করে সেজ প্রকল্প লাগু করার কথা ভাবা হয়েছিল। এটাকে উন্নতি বলে না, সোজা ভাষায়  এটাকে বলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ। গ্যাট চুক্তি, পারমাণবিক চুক্তি, লেজ প্রকল্প, Foeign exchange regulation act(FERA) রদ ইত্যাদি ইত্যাদি সবই হয়েছে সাম্রাজ্যবাদীদের অঙ্গুলিহেলনে। দিনের পর দিন স্বাস্থ্য, শিক্ষাকে বেসরকারিকরণ করা হয়েছে। নতুন পেটেন্ট আইনের ফলে বিদেশি কর্পোরেট পুঁজি দেশীয় একচেটিয়া পুঁজির সাথে জোট বেঁধে কৃষি বীজ ও ওষুধের গোটা বাজারকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। ট্রাম্পের হুঙ্কার এখান থেকেই। এইগুলোকে যদি পরাধীনতা না বলা যায় তাহলে নতুন করে পরাধীনতার সংজ্ঞা লিখতে হয়। সাম্রাজ্যবাদের জোয়াল মুক্ত নতুন ভারতের জন্য লড়াই করছেন বা করবেন, সমস্ত বৈদেশিক ঋণ এবং চুক্তি বাতিল করার এজেন্ডা তাদের কর্মসূচিতে রাখতেই হবে।  আজ সারা বিশ্ব যে করোনাতে আক্রান্ত তার জন্যও দায়ী এই পুঁজিবাদী- সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা।  উদ্বৃত্তের জন্য তার অপার লোভ পরিবেশ ধ্বংস করতে কোনো দ্বিধা করেনি। যদি এই রকম চলতে থাকে তাহলে আগামি দিনে আরো অনেক মহামারি আসতে চলেছে। শিশুর বাসযোগ্য এই পৃথিবী যদি গড়ে তুলতেই হয় তাহলে শুধু আবৃত্তি পাঠের মধ্যেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখলে আগামী প্রজন্মের শিশুরা আমাদের একটুও ক্ষমা করবে না।

তথ্যসূত্র

1.The Indian big bourgeoisie-suniti Kumar ghosh

2.the real state of indias economy- aspect of india economy

3. ভারতের কৃষি ব্যবস্থার হাল হকিকত- গুরুপ্রসাদ কর ও সুমন কল্যান মৌলিক

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *