Home জনস্বাস্থ্য করোনাভাইরাসের সঙ্গে দুনিয়া জুড়ে ছড়াচ্ছে ফ্যাসিবাদের অতিমারি

করোনাভাইরাসের সঙ্গে দুনিয়া জুড়ে ছড়াচ্ছে ফ্যাসিবাদের অতিমারি

করোনাভাইরাসের সঙ্গে দুনিয়া জুড়ে ছড়াচ্ছে ফ্যাসিবাদের অতিমারি
0

এই পোর্টালে প্রকাশিত ‘Along with Corona, Pandemic of fascism spreading across the globe’ -নিবন্ধের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হল।

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের অতিমারির হাত ধরে ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিত ভাবে আরও একটি অতিমারি পৃথিবীকে গ্রাস করছে। কর্তৃত্ববাদ ও নয়া ফ্যাসিবাদ। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করার কথা যে সমস্ত আইন, রীতিনীতি ও প্রতিষ্ঠানের, করোনাকে প্রতিরোধের অজুহাতে পৃথিবীর সব অতি দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক নেতারা সেগুলিকে তালাবন্ধ করে দিচ্ছেন। পৃথিবীর ১৭৫টি দেশে বর্তমানে সম্পূর্ণ বা আংশিক লকডাউন চলছে। এই সুযোগে ক্ষমতালোভী অতি দক্ষিণপন্থী নেতারা এমন সব দানবীয় আইন তৈরি করছেন যাতে তারা যতদিন বাঁচবেন, ততদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেন। বিজেপির নেতৃত্বে ভারতও সেই পথেই হাঁটছে।   

ইংল্যান্ডে করোনা ভাইরাস আইন ২০২০ পাস হয়েছে। এই আইনের বলে ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ’ করার জন্য সরকার যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারে।  

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের বিচারবিভাগীয় দফতর, কংগ্রেসকে অনুরোধ করেছে যাতে যে কোনো ব্যক্তিকে যতদিন খুশি গ্রেফতার করে রাখার ক্ষমতা তারা প্রধান বিচারপতিদের দেয়।যারা গ্রেফতার হবে, তারা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য বিচারপ্রক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়ার কোনো সুযোগ পাবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচারবিভাগীয় দফতর চায়, অ্যাটর্নি জেনারেল রাজি থাকলে প্রধান বিচারপতিরা যাবতীয় বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিত রাখুন।

ইজরায়েলে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ১৯৩৯ সালে ব্রিটিশদের পাস করা জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত আইনটি সক্রিয় করেছেন। ওই আইন বহুদিন আগে তামাদি হয়ে গিয়েছিল। ওই আইনের বলে তিনি সংসদ বন্ধ করে দিয়ে অনন্তকালের জন্য সরকারের শাসন জারি করে দিয়েছেন। তিনি আদালতও আংশিক ভাবে বন্ধ করেছেন এবং দেশের নিরাপত্তা সংস্থা –শিন বেটকে দেশের প্রতিটি নাগরিকের ওপর নজদরদারির নির্দেশ দিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদির মতো তিনি নিয়মিত টেলিভিশন চ্যানেলে দেখা দিচ্ছেন এবং তিনিই এখন গোটা দেশের একমাত্র সরকারি মুখপাত্র।

হাঙ্গেরিতে প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরব্যান সারা জীবনের জন্য একনায়ক হয়ে গিয়েছেন। অরব্যান সংসদে একটি বিল পাস করেছেন, যার বলে তিনি অনির্দিষ্ট কালের জন্য দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। এখন তিনি আদেশ জারি করেই দেশ চালাবেন, সংসদে কোনো আলোচনার দরকার পড়বে না। সে দেশের সংবিধান অনুযায়ী সরকার সর্বাধিক ১৫ দিনের জন্য দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন, মেয়াদ বাড়াতে হলে সংসদের অনুমতি প্রয়োজন। সে সবের তোয়াক্কা না করেই অরব্যান এই বিল পাস করেছেন।

রাশিয়ায় ভ্লাদিমির পুতিন তিনি সারাজীবন প্রেসিডেন্ট থাকার জন্য, প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ তুলে দিয়েছেন। করোনার সুযোগে তার সরকার ‘মুখ চেনার প্রযুক্তি’ ব্যবহার করছে যাতে প্রতিটি রাশিয়ান নাগরিককে নজরদারির আওতায় রাখা যায়।

বলিভিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট জেনিন আনেজ ৩ মে-র জাতীয় নির্বাচন বাতিল করে দিয়েছেন। যদিও সে দেশে মাত্র ১৯ জনের করোনা হয়েছে।    

পেরুর প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনেরা সারা দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন এবং রাস্তা বন্ধ করে জনগণকে ঘরে আটকে রাখার জন্য সেনা নিয়োগ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কি একই পথে হাঁটছেন? করোনা অতিমারি ভারতে পা দেওয়ার আগেই সরকারের হাতে বিপুল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার জন্য বিজেপি বেশ কিছু নতুন আইন এনেছে ও অনেকগুলি আইনে সংশোধন করেছে। করোনা মোদিকে আরও বেশি করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার সুযোগ করে দিয়েছে।

চলতি লকডাউনের মধ্যে ভারত ইতিমধ্যেই পুলিশ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। পুলিশের লাঠি দিয়ে জনগণের চলাফেরা আটকানো হচ্ছে। যেহেতু কোনো জন সমাবেশ করা যাচ্ছে না তাই সরকারের যাবতীয় সমালোচনা সোশাল মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকছে। জমায়েত হওয়ার ও কথা বলার স্বাধীনতা ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। লকডাউনের জেরে দেশে ব্যাপক রক্তের স্বল্পতা থাকলেও দেশের কোনো কোনো জায়গায় রক্তদান শিবির করতেও আগে থেকে পুলিশের অনুমতি নিতে হচ্ছে।

কিন্তু এর চেয়েও খারাপ দিনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। অর্থনীতির গতিশীলতা কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আদায় ইতিমধ্যেই কমে গেছে, এর মধ্যে চলতি লকডাউন সরকারি কোষাগারকে অভূতপূর্ব সংকটে ফেলে দেবে। এই পরিস্থিতি মোদিকে দেশে আর্থিক জরুরি অবস্থা(সংবিধানের ৩৬০ নং অনুচ্ছেদ) জারি করার সুযোগ করে দেবে, যাকে হাতিয়ার করে কোপ বসানো হবে কর্মচারীদের বেতন ও ভাতায়। ৩৬০ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশের বা দেশের কোনো অংশের আর্থিক স্থিতি সংকটের মধ্যে আছে মনে করলে রাষ্ট্রপতি আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন।

ভারতের আর্থিক স্থিতি কি সত্যিই বিপদের মধ্যে রয়েছে? সরকারি তথ্য অনুযায়ী লকডাউন হওয়ার আগেই দেশের আয়কর সংগ্রহ ৩.৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল। পূর্বাভাস অনুয়ায়ী ২০২০-২১ অর্থবর্ষে আর্থিক ঘাটতি হতে চলেছে জিডিপি-র ৬২ শতাংশ। এপ্রিল ২০১৯ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২০-র মধ্যে ঘাটতির পরিমাণ ১০.৩৬ লক্ষ কোটি টাকা। এপ্রিল থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকারের রাজস্ব আদায় পরিমার্জিত লক্ষ্যের ৭৪.৫ শতাংশ।(তা সত্ত্বেও সরকার কর্পোরেটদের বিশাল করছাড় দিয়েছে)।দেশে লকডাউন হওয়ায় এবং ব্যবসাবাণিজ্য বিচ্ছিরি ভাবে থমকে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আদায় আরও কমবে।অর্থাত অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণার পূর্বশর্ত তৈরি হয়েই আসছিল।

মোদি সরকার সম্ভবত সেখানেই থামবে না। ভারতের ৪০ কোটি কর্মী বাহিনীর ৯৩ শতাংশ লকডাউনের ফলে এই মুহূর্তে উপার্জন করতে পারছেন না। ফলে দেশজুড়ে গণ আন্দোলনের ঢেউ ওঠার সমূহ সম্ভাবনা। সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিতে কাটছাঁট হবে ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে। ফ্যাসিবাদী হিন্দু রাষ্ট্র গঠন বিজেপির রাজনৈতিক লক্ষ্য। সে কথা মাথায় রাখলে ৩৫২ নং অনুচ্ছেদ বা জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ভারতীয় সংবিধানের ৩৫২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বৈদেশিক আক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার জন্য জাতীয় দরুরি অবস্থা জারি করা যায়।      

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *