Home অর্থনীতি করোনা ভাইরাস সংকটে সরকারি আর্থিক সাহায্য, মুদ্রাস্ফীতি এবং কার্ল মার্কস

করোনা ভাইরাস সংকটে সরকারি আর্থিক সাহায্য, মুদ্রাস্ফীতি এবং কার্ল মার্কস

করোনা ভাইরাস সংকটে সরকারি আর্থিক সাহায্য, মুদ্রাস্ফীতি এবং কার্ল মার্কস
0

করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত লকডাউনের জেরে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বেশ কিছু আর্থিক সাহায্য ও ত্রাণের কথা ঘোষণা করেছে। যার একটা বড়ো অংশ যাবে শ্রমজীবী মানুষের কাছে। বাজারে তার কী প্রভাব পড়তে চলেছে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সে দেশের সরকার ২ লক্ষ কোটি ডলার আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছে। সেই প্রসঙ্গে ওকল্যান্ড সোশালিস্ট পত্রিকায় একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। দুই দেশে পুঁজিবাদের বিকাশের মধ্যে বিস্তর তফাত, তফাত শ্রমিক শ্রেণির অবস্থাতেও। কিন্তু রাজনৈতিক অর্থনীতির মূল সূত্রগুলো তাতে বদলে যায় না। আমাদের মনে হয়েছে, আমাদের পাঠকদের কাছেও লেখাটি জরুরি। লকডাউনে সরকারি নীতির প্রভাব আগামি দিনে কী হতে চলেছে, তা আমরা এই নিবন্ধ থেকে কিছুটা বুঝতে পারব।

করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত দুই লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক সাহায্য এবং মুদ্রাস্ফীতিতে তার প্রভাব প্রসঙ্গে আমি মুদ্রাস্ফীতি বিষয়টা নিয়ে ভাবার চেষ্টা করছিলাম।

এই অর্থনৈতিক সাহায্যের একটি বড়ো অংশ যাবে শ্রমিকদের কাছে, তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অথবা অন্তত ক্রয়ক্ষমতার দ্রুত পতনকে আটকানোর লক্ষ্যে। এতে কি মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে এবং এটা কি কার্ল মার্কসের দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করে?

কার্ল মার্কস

১৮৬০ সালের কার্ল মার্কস জন ওয়েটসন নামক একজনের সাথে বির্তকে নামেন, যার বিষয় ছিল, মজুরির বৃদ্ধি কি জিনিসের দামের বৃদ্ধি ঘটায়? এই বিতর্ক থেকেই মার্কস একটি ছোটো লেখা তৈরি করেন মজুরি-দাম-মুনাফা নামে। এটি একটি গুরুতপূর্ণ বিষয় কারণ যদি মজুরি বৃদ্ধির ফলে দামের বৃদ্ধি ঘটে তাহলে মজুরি বৃদ্ধির জন্য লড়াই করার কোন মানে থাকেনা- যেটা কিনা পুঁজিপতিদের এক অংশের যুক্তিও।

মার্কসের কথা অনুযায়ী শ্রমিকদের মজুরির বৃদ্ধি আসলে দামের বৃদ্ধি ঘটায় না। তিনি কারণ দেখিয়ে বলছেন, যদি শ্রমিকদের মজুরির বৃদ্ধি হয় তাহলে তারা অর্থাৎ শ্রমিকরা তাদের নিজেদের প্রয়োজনীয় যে সমস্ত জিনিস ক্রয় করে সেগুলোই আরো বেশি করে কিনবে। অন্যদিকে পুঁজিপতিদের মুনাফা কমবে ফলে তারা যে সব দ্রব্য ক্রয় করত তা কম পরিমাণে ক্রয় করবে। চাহিদা ও জোগানের সূত্র অনুযায়ী শ্রমিকদের জিনিসের দাম বৃদ্ধি হতে পারে একটা সময় অন্যদিকে পুঁজিপতিদের জিনিসের দাম কমবে। এর মানে হল শ্রমিকরা যে সমস্ত দ্রব্য কেনে তা উৎপাদন করা লাভজনক হয়ে উঠবে অর্থাৎ পুঁজির প্রবাহ সেই দিকেই হবে। সেই সমস্ত দ্রব্যের উৎপাদন বাড়বে এবং দামের পতন ঘটবে।

সুতরাং, মার্কস কি ভুল এই প্রশ্নে ? আমার মনে হয়না।

বর্তমান সময়ে অভিজ্ঞতা

বর্তমান বছরগুলিতে কি হয়েছে ভাবা যাক: বিপুল পরিমাণে মুনাফার বৃদ্ধি। ফলস্বরূপ, পুঁজিপতিদের ক্রয় করা প্রধান দ্রব্যগুলির দাম বেড়েছে যেমন স্টক প্রাইস এবং জমির দাম (রিয়েল এস্টেটের ফাটকা)। শ্রমিকদের কিছু জিনিসের দাম বেড়েছে বিশেষ করে ঘরের দাম। যা জমির দাম বৃদ্ধির প্রতিফলন, কিন্তু বাকি সমস্ত কিছুর দাম স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।

কিন্তু এক্ষেত্রে কী হবে?

অর্থনৈতিক সাহায্যের প্রভাব

শ্রমিকদের ক্রয়ক্ষমতা কমবেশি একই থাকবে। এর পতনের সম্ভবনা আছে কিন্তু তা উৎপাদনের পতনের সঙ্গে তুলনীয় হবে না। তার ফলে, শ্রমিকরা যে সমস্ত জিনিস কেনে তার চাহিদা বৃদ্ধি পাবে অথবা অন্তত উৎপাদনের পতনের মতো চাহিদার পতন হবে না। উৎপাদনের খুব বেশি বৃদ্ধি হবে না, বরং কিছুটা কমবে কারণ বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কাজ করতে পারবে না। এই মতামতে আমি পৌঁছেছি দুটি পূর্বশর্তের ভিত্তিতে। প্রথমত আমি ধরে নিয়েছি, শ্রমিকরা নিজেদের টাকা জমিয়ে রাখবে না এবং দ্বিতীয়ত, বড়ো সংখ্যার শ্রমিক কাজে ফিরতে পারবে না।

হয়ত এই সবই ভুল কিন্তু আমার নিজের কাছে এটাই অনেক বেশি যুক্তিপূর্ণ মনে হচ্ছে।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *