লকডাউনে শ্রমজীবী মানুষকে রক্ষা করতে পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসককে দাবিপত্র মানবাধিকার সংগঠনগুলির
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আটকাতে লকডাউন পরিস্থিতিতে অসংখ্য সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ও ভবিষ্যতে হবেন, তার সমাধানের জন্য পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসককে সম্প্রতি একটি দাবিপত্র দিয়েছেন আসানসোল ও দুর্গাপুর অঞ্চলের কিছু মানবাধিকার ও শ্রমিক সংগঠন। দাবিপত্রটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে আমরা সেটি প্রকাশ করছি।
মহাশয়,
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আটকাতে বর্তমা্নের লকডাউন পরিস্থিতিতে অসংখ্য সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ও ভবিষ্যতে হবেন। আমাদের দেশের শ্রমিকদের মধ্যে তিন শতাংশেরও কম শ্রমিক সংগঠিত ক্ষেত্রের স্থায়ী শ্রমিক। ৪ শতাংশ সংগঠিত ক্ষেত্রের ঠিকা ও ক্যাজুয়াল শ্রমিক এবং বাকি ৯৩ শতাংশ দিনমজুর বা অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক। ২২ তারিখে জনতা কার্ফিউ ও তারপরের দিন থেকে আমাদের রাজ্য ও সারা দেশে হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণার ফলে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব বন্ধ হয়ে যায়। অপরিকল্পিত ভাবে অনেক দেরি করে লকডাউন ঘোষণা করায় বিপদে পড়েছেন ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা। আগে থেকে এই শ্রমিকদের ফেরানোর ব্যবস্থা না করায় এই শ্রমিকরা কোনোরকম স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া ভিড় বাসে ও ট্রেনে, কেউ হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন এবং অনেকেই ভিন রাজ্যে আটকে গেছেন।
তাছাড়া যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান খোলা আছে, সেখানে একজন দুধ কিনতে এসে কিভাবে পুলিশের লাঠিতে মারা যায় – এর জবাব কে দেবেন? আমরা পুলিশের লাঠিতে একজন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর তীব্র নিন্দা করছি।
সমস্যাটা হচ্ছে ভারতের অত্যন্ত খারাপ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ এড়িয়ে যেতে কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে সারা দেশে হঠাৎ করে অপরিকল্পিতভাবে লকডাউন ঘোষণা করেছে তার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্র স্তরে ন্যূনতম প্রস্তুতি নেই। আজ চারদিনের লকডাউনের দিন পর্যন্ত আমারা যারা এই দাবিপত্রের স্বাক্ষরকারী – তারা আমাদের এলাকায় কোন স্বাস্থ্য কর্মী বা সরকারি আধিকারিককে আসতে দেখিনি।
এই পরিস্থিতিতে সংক্ষেপে কিছু দাবি রাখছি।
১। অবিলম্বে প্রত্যেকটি মহকুমা স্তরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে করোনার উপসর্গে আক্রান্তদের চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করা হক।
২। করোনার উপসর্গে আক্রান্তদের বিনামূল্যে সরকারি ও বেসরকারি পরীক্ষাগারে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হক।
৩। অবিলম্বে সরকারকে প্রতিটি পরিবারের জন্য বিনামূল্যে স্যানিটাইজার, হ্যান্ডগ্লাভস, সাবানের ব্যবস্থা ও করোনার উপসর্গে আক্রান্তদের বাড়িতে উপযুক্ত মাস্ক পাঠাবার ব্যবস্থা করা হক।
৪। ব্রিটেনের মতো সমস্ত বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করার জন্য বিধানসভা থেকে কেন্দ্রে অবিলম্বে প্রস্তাব পাঠানো হক।
৫। বিদেশ থেকে আসা শ্রমিক ও অন্যান্যদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় জোর করে কোয়ারান্টাইন করা হক।
৬।চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মী ও জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষের জন্য উপযুক্ত মাস্ক ও পোশাকের ব্যবস্থা করতে হবে। সকল স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মী ও জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষের বেতন বাড়িয়ে দিতে হবে।
৭। অসংগঠিত শ্রমিকদের মধ্যে রেজিষ্টার্ড এবং রেজিষ্টার্ড নয় এমন সমস্ত শ্রমিকদের পরিবারকে মাসিক ১২ হাজার টাকা ও বিনামূল্যে রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮। বেসরকারি যে সমস্ত কারখানা বন্ধ সেই কারখানার শ্রমিকদের লকডাউনের সময় নির্ধারিত হারে বেতন দিতে হবে।
৯। প্রত্যেকটি সরকারি ও বেসরকারি কারখানার ঠিকা ও মরশুমি শ্রমিকদের লকডাইনের সময় মজুরি দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০। লকডাউন উঠে যাবার পর প্রত্যেক শ্রমিককে কাজে ফিরিয়ে নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কাউকে কাজ থেকে ছাঁটাই করা চলবে না।
১১। ইতিমধ্যেই বাজারে জিনিসপত্রের দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোথাও কোথাও অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে কোলাবাজারি বন্ধের সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হক।
১২। যে সমস্ত শ্রমিক হঠাৎ করে রেল ও বাস বন্ধ হওয়ায় বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়েছেন তাদের নিজেদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে না পারলে সেই রাজ্যে সরকারি সহায়তায় বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা ও কমিউনিটি কিচেনের ব্যবস্থা করা হক।
১৩। বিপিএল বা অন্ত্যোদয় যোজনা আওতাভুক্ত পরিবারে বিনামূল্যে জন পিছু ৫ কেজি চাল বা আটা, ১ কেজি চিনি ও ২ কেজি ডাল দেবার ব্যবস্থা করা হক।
১৪। প্রত্যেক পরিবারে (বিপিএল বা অন্ত্যোদয় যোজনার বাইরে যাদের সাধারণ কার্ড আছে তাদের) ২ টাকা কেজি দরে জন পিছু ৫ কেজি চাল বা আটা, ১ কেজি চিনি ও ১০ টাকা করে ২ কেজি ডাল দেবার ব্যবস্থা করা হক।
১৫। ইষ্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেডের ঠিকা সুরক্ষা কর্মী ও আন্ডারগ্রাউন্ড কোলিয়ারির ঠিকা শ্রমিক ও অন্যান্য ঠিকা শ্রমিক এবং বিএসএনএল এর ঠিকা কর্মীদের ৭-৮ মাসের বকেয়া মজুরি এখনো দেওয়া হয়নি। বকেয়া মাইনে অবিলম্বে মেটাবার ব্যবস্থা নিতে সংস্থাগুলোকে বাধ্য করা হোক।
১৬। প্রত্যেক ব্লক ও পঞ্চায়েত লেভেলে করানা সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য মনিটারিং রুম খোলার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৭। প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে আসা মানুষদের উপর পুলিশের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
১৮। কর্পোরেট ও ধনী ব্যাক্তিদের উপর করোনা ট্যাক্স বসিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা ফান্ড তৈরি করতে হবে।
অবিলম্বে উপরে দাবিগুলো যত্ন সহকারে পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
ধন্যবাদান্তে,
স্বাতী ঘোষ, জেনারেল সেক্রেটারি, আসানসোল সিভিল রাইটস অ্যাসোসিয়েশান
উমেশ দুষাদ, জেনারেল সেক্রেটারি, ইসিএল ঠিকা শ্রমিক অধিকার ইউনিয়ন
সুরেশ বাইন, গণ অধিকার মঞ্চ, দুর্গাপুর
সুদীপ্তা পাল, সেক্রেটারি, অধিকার
গৌতম মণ্ডল, অল ওয়েষ্টবেঙ্গল সেলস রিপ্রেসেন্টেটিভস ইউনিয়ন
এস. কে. মিশ্র, পিপল’স ফোরাম আসা্নসোল