করোনার হানায় নাগরিকদের মরতে দিচ্ছে আমেরিকা-ইংল্যান্ড, তবু ব্যবসায় এগোচ্ছে চিন
সৌম্য মন্ডল
করোনা আক্রান্ত দেশ হিসেবে চিন আর ইতালিকে ছাড়িয়ে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে আমেরিকা। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২৩ হাজার ছাড়িয়েছে। আমেরিকা-ইউরোপের কর্পোরেট মিডিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে, ভারতের ২৭ মার্চ জি নিউজ দুনিয়া জুড়ে মহামারির পেছনে চিনের চক্রান্ত আবিষ্কার করতে গিয়ে বলেছে- করোনা সংক্রমণের উৎস স্থল উহান শহর থেকে ১১০০ কিমি দুরত্বে চিনা শহর বেজিং-এ মাত্র ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে ,৮৩০ কিমি সাংহাইয়ে মাত্র ৫ জন মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে উহান থেকে ১২ হাজার কিমি দুর আমেরিকা, সারে ৮ হাজার কিমি দুর ইতালি, সারে ৫ হাজার কিমি দুরে ইরানে হাজার হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে। জি নিউজে অ্যাঙ্কর অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে প্রশ্ন তুলেছে -যে ভাইরাস আমেরিকা ইতালি পৌঁছে গেল, সেটা উহান থেকে বেজিং কেন পৌছালো না?
আরও পড়ুন: মহামারি সেখানেই পা ফেলে যেখানে দেশ-কাল-সমাজ আগে থেকেই জীর্ণ, বলছে ইতিহাস
চিনে প্রথম করোনা সংক্রমণের খবর নথিভুক্ত হয় এই বছর জানুয়ারি মাসের দশ তারিখ। আমেরিকায় প্রথম করোনা সংক্রমণের খবর নথিভুক্ত হয় ঠিক তার ১০ দিন পরে অর্থাৎ ২০ জানুয়ারি। রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৩ মার্চ করোনা মোকাবিলায় জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। ১৩ মার্চ আমেরিকায় করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দাড়িয়েছিলো ২,১৮৩ জন। কিন্তু করোনা মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ করেছিলেন ট্রাম্প? নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট ইত্যাদি সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে রাষ্ট্রপতি যে পরিকল্পনা করেছে তা হল ওষুধ কোম্পানিগুলো সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে কাজ করবে, ওয়ালমার্ট ইত্যাদি কর্পোরেট হাউস তাদের গাড়ি রাখার জায়গায় করোনা টেস্টের জন্য ছেড়ে দেবে আর একটা ওয়েবসাইট বানানো হবে যাতে করোনা সম্বন্ধে জনগণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। যদিও গুগুলে সার্চ করলে এখন যে কেউ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহ বহু ওয়েব সাইট থেকে করোনা সম্বন্ধে জেনে নিতে পারে। ২৪ মার্চ নিউইয়র্ক টাইমসের এডিটোরিয়াল বোর্ড প্রবন্ধ ছেপে দু সপ্তাহ লকডাউনের দাবি করেছে। ২৪ মার্চ অবধি আমেরিকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪,৮৫৬ জন!
অর্থনীতিবিদ মাইকেল রবার্ট ইউ.কে এবং আমেরিকার করোনা মোকাবিলা নিয়ে ১৫ই মার্চ লিখেছেন, “স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যাতে বিপুল চাপ না পড়ে, তার জন্য ইউনাইটেড কিংডমের সরকার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়েছে। করোনা উপসর্গযুক্ত রোগীদের তারা নিজেদের উদ্যোগে গৃহবন্দি হয়ে যেতে বলেছে এবং কমবয়সি ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারীদের সংক্রমণে বাধা দেয়নি। সরকারের ধারণা, এর ফলে গোটা সমাজের সার্বিক করোনা প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে উঠবে(হার্ড ইমিউনিটি)। এই নীতির অর্থ হল, দেশে সম্পূর্ণ লকডাউন করে অর্থনীতি(মুনাফা)-র ক্ষতি করার চেয়ে বয়স্ক এবং করোনা-আক্রান্ত রোগীদের মরতে দেওয়া ভালো। কারণ তারা তো এমনিতেও মরবে ওমনিতেও মরবে। আর আমেরিকার নীতি হল, স্রেফ কিছুই না করা। গণহারে পরীক্ষা নয়, কোনো স্বেচ্ছা গৃহবন্দিত্ব নয়, কোনো উৎসব-অনুষ্ঠান বাতিল করা নয়, শুধুমাত্র নাগরিকরা অসুস্থ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা এবং যাদের বাড়াবাড়ি হবে, তাদের চিকিৎসা করা।
এই নীতিকে আমরা ম্যালথাস-সম্মত প্রতিক্রিয়া বলতে পারি। ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিককার ধ্রুপদী অর্থনীতিবিদদের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল ছিলেন রেভারেন্ড থমাস ম্যালথাস। তার বক্তব্য ছিল, দুনিয়ায় ‘অনুৎপাদক’ গরিব মানুষ অনেক বেশি হয়ে গেছে, তাই অর্থনীতিকে আরও উৎপাদনশীল রাখার জন্য নিয়মিত প্লেগ এবং অন্যান্য রোগ হওয়া জরুরি ও অনিবার্য”।
আমেরিকায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রায় পুরোটাই বেসরকারি। ফলত এই মহামারির সময়ও স্বাভাবিক ভাবে চিকিৎসার উদ্দেশ্য রয়ে গিয়েছে মুনাফা। সংবাদ সংস্থা দ্য হিল জানাচ্ছে, করোনার চিকিৎসার জন্য টেস্ট বাদ দিয়ে শুধু ডাক্তার ১৪৯ ডলার ভিজিটের নীচে পাওয়া যাচ্ছে না। সংক্রমণ হয়েছে কিনা সেটা পরীক্ষা করানোর জন্যেই আরো ৩,২৭০ ডলার খরচ করতে হচ্ছে।
অস্ত্র ব্যবসা আমেরিকার অন্যতম প্রধান শিল্প। আমেরিকান অস্ত্র ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন দেশকে অস্ত্র বিক্রি করে শুধু তাই নয়, আমেরিকার ভিতরে খোলা বাজারেও বন্দুক বিক্রি হয়। অর্থাৎ আমাদের দেশে যেমন যে কেউ টাকা থাকলেই বাইক বা ফ্রিজ কিনতে পারে আমেরিকাতে তেমনি বন্দুক কিনতে পারে। ইরানি সংবাদ সংস্থা পার্স টুডে ২৭ মার্চ খবর করেছে “আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গত দুই সপ্তাহে অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে ৮০০ গুন। করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে দেশটিতে সামাজিক অস্থিরতা, লুঠপাট এবং হাঙ্গামা বাড়তে পারে আশংকা করে মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে অস্ত্র ক্রয়ের হিড়িক পড়ে গেছে।”
ইরানি সংবাদ সংস্থার খবরের সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে প্রথম সারির মার্কিন সংবাদ সংস্থাগুলোর কাছ থেকে।
১৬ মার্চ নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বন্দুকের দোকানিদের বয়ান থেকে দেখা যাচ্ছে, তারা বলছেন হঠাৎ করে এত বিক্রি বেড়ে যাওয়া আগে কখনো হয়নি। এমন মানুষরা বন্দুক কিনছেন যারা আগে কখনো বন্দুক কেনেনি। এক দোকানি জানিয়েছে তার দোকান থেকে সপ্তাহে গড়ে ৩০০টা বন্দুক বিক্রি হচ্ছে।
১৯ মার্চ সিএনএন এ একটি উত্তর সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে যার শিরোনাম ‘বন্দুক কেনা করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক হতে পারেনা’। একেই ২০০৮ সালের পর থেকে আমেরিকার অর্থনীতি গভীর সংকটের ডুবে আছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ক্রমাগত সুদের হার কমিয়ে যেতে হচ্ছে। এর উপর করোনা মহামারি নিসন্দেহে আরো গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে মার্কিন সমাজকে।
কিন্তু এই সময় চিন দেশে কী চলছে? ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(হু) এর তরফে ডাক্তার ব্রুস অ্যালওয়ার্ড দু সপ্তাহের জন্য চিনের করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে যান। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ডাক্তার ব্রুস অ্যালওয়ার্ড পোলিও, ইবোলা সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিকভাবে জরুরি স্বাস্থ্য বিপর্যয় মোকাবিলার কাজে ৩০ বছর ধরে নিযুক্ত আছেন। ৪ মার্চ তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। দেখাযাক ডাক্তার বাবু কী বলেন-
ডাক্তার বাবুর সাক্ষাৎকার থেকে জানা যাচ্ছে সমগ্র চিনে লক ডাউন হয়নি। মূলত উহান এবং তার আশেপাশের শহরগুলোতে লক ডাউন হয়েছে। সংক্রমণের স্তর অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনা চিকিৎসার সমস্ত খরচ সরকার বহন করছে। ৫০ শতাংশ চিকিৎসা অনলাইন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে ছোটোখাটো সমস্যায় কাউকে ডাক্তার দেখাতে বাইরে না বেরোতে হয়। ইনসুলিন, হার্টের ওষুধ সহ সব ধরনের ওষুধ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু করোনা মোকাবিলায় চিনা প্রশাসন যেমন নাগরিকদের বার বার হাত ধোয়া,মাস্ক ব্যবহারের মত সতর্কতা প্রচার করেছে তেমনি গাড়ি থামিয়ে প্রত্যেক স্টপেজে জ্বর মাপা চলছে। কারো যদি করোনার উপসর্গ পাওয়া যায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। সে এর আগে কোথায় গিয়েছিলো কার কার সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছিলো সব কিছু খতিয়ে জেনে নেওয়া হচ্ছে। তার পর রোগীর সিটি স্ক্যান করা হচ্ছে। সিটি স্ক্যানের কথা শুনে মার্কিন সাংবাদিক চমকে উঠলে ডাক্তারবাবু জানান মেশিন পিছু ৫ থেকে ১০ মিনিটের গড়ে ২০০ টি স্ক্যান হচ্ছে প্রতিদিন। করোনা মোকাবিলায় চিনা প্রশাসন ঝটপট বহু চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তুলেছে।
চিনে করোনার প্রভাব কমে আসার সরকারি তথ্য নিয়ে মার্কিন সাংবাদিক সন্দেহ প্রকাশ করলে ডাক্তারবাবু বলেন তারা যে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে গিয়েছিলেন সব জায়গায় সাধারণ মানুষ তাদের জানিয়েছে ৩ সপ্তাহ আগের মত পরিস্থিতি এখন আর নেই। ডাক্তারবাবু বলেছেন করোনার সংক্রমণের সর্বোচ্চ পরিস্থিতিতে প্রতিদিন গড়ে ৪৬,০০০ জনের করোনা পরীক্ষা করা হত, তিনি চিন থেকে ফিরে আসার সময় এই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছিলো ১৩,০০০। করোনা চিকিৎসার অনেক শয্যা ফাঁকা পড়েছিলো।
যদিও বিভিন্ন মার্কিন ও ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম বলছে চিন যে ভাবে কঠোর হয়ে করোনা মোকাবিলা করতে পারছে সেটা নাকি অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশের পক্ষে করা সম্ভব নয়। স্পষ্টতই এদের ইঙ্গিত ‘কমিউনিস্ট’ শাসিত চিনে দমনমূলক রাষ্ট্র যন্ত্রের দিকে। ভারত বা অন্য দেশের দক্ষিণপন্থী শক্তি নিজেদের দেশে জনগণের উপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে লঘু করে দেখাতে সব সময় বোঝাবার চেষ্টা করে চিনে আরো বেশি দমন হয়। এবার এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে করোনা মোকাবিলায় নিজেদের অপদার্থতা ঢাকতে। যদিও চিন ফেরত ডাক্তারবাবুর মতে চিনের মত মোকাবিলা পদ্ধতি অনুসরণ করা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন ক্ষিপ্রতা, টাকা, দূরদৃষ্টি এবং রাজনৈতিক উৎসাহ।
৭০-এর দশকের শেষের দিকেই চিনা কমিউনিস্ট পার্টিতে বিপ্লবীদের সরিয়ে পুঁজিবাদের পথিকরা ক্ষমতা দখল করে। চিন পরিণত হয় পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে। চিনা শাসকরা চিনা শ্রমিক নয় বরং পুঁজিপতিদেরই প্রতিনিধি। তবুও চিন পুরনো সমাজতান্ত্রিক আমলের সমস্ত কাঠামো পরিত্যাগ করেনি। তাই চিনা বুর্জোয়া শাসকরা খুব দ্রুত সমস্যার মোকাবিলা করতে পেরেছে। চিনে গণতান্ত্রিক বিপ্লব হয় ভারতের স্বাধীনতার দু’ বছর পর,১৯৪৯ সালে। ঔপনিবেশিক আমলে চিন ভারতের থেকেও পিছিয়েছিলো। কিন্তু ১৯৪৯ সালে মাও-এর নেতৃত্বে বিপ্লবের পরে ব্যাপক সমাজতান্ত্রিক গঠন কার্যের মধ্যে দিয়ে চিন দ্রুত উন্নতি লাভ করেছে। সেই সমাজতান্ত্রিক গঠনকার্যের সুবিধাগুলোকে ব্যবহার করেই চিন বর্তমানে পুঁজিবাদী সুপার পাওয়ার বা সাম্রাজ্যবাদে পরিণত হয়েছে। আমেরিকার চোখে চোখ রেখে কথা বলছে। অন্যদিকে ভারতীয় শাসকরা ১৯৪৭ সালের পরেও সাম্রাজ্যবাদী শোষণ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। ইউরোপ আমেরিকার স্বার্থ নিরপেক্ষ কোনো স্বাধীন জাতীয় নীতি বা বিদেশ নীতি গড়ে তুলতে পারেনি। চিকিৎসা, খাবারের সরবরাহের ব্যবস্থা ছাড়াই আচমকা দেশ ব্যাপী ২১ দিন লক ডাউনের ঘোষণা করেছে মোদি সরকার। কিন্তু জনগণের বাড়ির বাইরে বেরোবার কারণ মজুত থাকলে তো মানুষ বাইরে বেরোবেই। অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে দমনমূলক রাষ্ট্র হিসেবে কুখ্যাত চিন ওষুধ খাবার ইত্যাদি পরিষেবা প্রত্যকের বাড়ি সরবরাহ করে, সারা দেশে লকডাইন ছাড়াই করোনা মোকাবিলা করছে। অন্যদিকে গণতন্ত্রের ঠিকাদার আমেরিকার সরকার কোনো রকম কার্যকর ব্যবস্থাই নিতে পারেনি। মার্কিন নাগরিকরা বন্দুক কিনে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে দুনিয়ায় সর্ব বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত তার নাগরিকদের পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে সারা দেশ লকডাউন করে করোনা মোকাবিলা করছে। দিন মজুরদের অনাহারে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় চিকিৎসা কর্মীদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ছেঁড়া রেন কোট আর হাততালি। ঠিক এই সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সুরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে বা বানাতে খরচার বদলে ইজরায়েলের থেকে ১৬,৪৭৯ টি নেগেভ মেশিনগান কিনছে মোদি সরকার! আমেরিকার চাপে পরে চিনা টেলিকম সংস্থা হুয়েইকে বিভিন্ন দেশ পুরোপুরি নয়তো ৫ জি ক্ষেত্রে ঢুকতে দিচ্ছিলো না। হুয়েই এখন সেই সমস্ত দেশে লাখ লাখ মাস্ক ডোনেট করছে। এর আগে বিশ্বে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় দান ধ্যানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে ছিলো। ইউরেশিয়ান টাইমসের মতে আমেরিকা কে হঠিয়ে এবার সেই স্থানে চিন উঠে আসছে। বুর্জোয়ারা কোনো কিছুই এমনি এমনি করে না। সব কিছুর পেছনে থাকে মুনাফার ধান্দা। করোনা চিনকে আমেরিকার সাথে বাণিজ্য যুদ্ধে সুবিধা করে দিয়েছে সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই। চলতি দশকের শুরুর দিকেই চিন আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী সুপার পাওয়ার হিসেবে উঠে এসেছে। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশকে মহাজনি কায়দায় ঋণের জালে জড়িয়েছে। ভারত মহাসাগর সহ বিভিন্ন এলাকায় আমেরিকার সাথে সামরিক রেশারেশিও বেড়েছে। আমেরিকা চিনকে ঘিরতে ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি প্লানিং তৈরি করেছে। এই সময় করোনা সংকটকে কেন্দ্র করে উদ্ভট চিন বিরোধী প্রচারগুলো মার্কিন লবির চিনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের জন্য জনমত গঠনের প্রচেষ্টা কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। তা ছাড়া ভারতে চিনকে কমিউনিস্ট দেখিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বামপন্থী আন্দোলন দমন আরো বেশি জোরদার করার উদ্দেশ্যে আছে কিনা সেই বিষয়েও সন্দেহ আছে। করোনা পরিস্থিতিতে যখন সরকারের সব পদক্ষেপ মেনে নিতে বলা হচ্ছে, যখন একজন প্রতিবাদী নাগরিককে ‘রাজনীতি করছেন’ বলে তিরস্কার করা হচ্ছে, তখন এই একই করোনা পরিস্থিতিকে সামনে রেখে রাজনীতি অর্থনীতির রথী মহারথীদেরা কিন্তু তাদের কায়েমি স্বার্থান্বেষী রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন।