Home রাজনীতি মাতৃত্বকালীন সুবিধাগুলো পাচ্ছ তো? মাওবাদী দমনে নিযুক্ত আট মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে খোলা চিঠি

মাতৃত্বকালীন সুবিধাগুলো পাচ্ছ তো? মাওবাদী দমনে নিযুক্ত আট মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে খোলা চিঠি

মাতৃত্বকালীন সুবিধাগুলো পাচ্ছ তো? মাওবাদী দমনে নিযুক্ত আট মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে খোলা চিঠি
1

বোন 

সুনয়না প্যাটেল, 

এই বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এএনআই, হিন্দুস্তান টাইমস সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তোমার কথা পড়লাম। সংবাদ সংস্থাগুলো লিখেছে আট মাসের সন্তান পেটে ধরে তুমি মাওবাদী দমনের ডিউটি করে যাচ্ছ। সংবাদ সংস্থাগুলো কাজের প্রতি তোমার এই নিষ্ঠাকে নারী দিবসে উদযাপন করেছে। কর্তৃপক্ষের চাপ ছাড়াই এই ঝুঁকি তুমি যদি স্বেচ্ছায় নিয়ে থাকো তবে আমি তোমার নিষ্ঠাকে সম্মান না জানিয়ে পারিনা। 

কিন্তু এর সাথে কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাই, যে প্রশ্ন কোনো নারী দিবস উদযাপনকারী সংবাদসংস্থা গুলো করেনি। কেন তুমি মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওনি? তুমি যাদের বিরুদ্ধে বন্দুক ধরেছো সেই কমিউনিষ্টরা দীর্ঘ দিন ধরে নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটির দাবি জানিয়ে এসেছে। মাতৃত্বকালীন ছুটি এখন আমাদের সমাজে যে কোনো ব্যবসায়িক সংস্থাতেও স্বাভাবিক ব্যাপার। যদিও এরকম অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায় যে ছুটির শেষে আর সে চাকরি ফেরৎ পায়নি। কিন্তু তুমি তো সরকারি চাকরি করো। ভারত সরকার কি এখন যে কোনো মুনাফাখোর বেসরকারি সংস্থার থেকেও বেশি অমানবিক হয়ে পড়েছে নিজের কর্মচারীদের প্রতি,বিশেষত যারা নাকি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিউটি করে যাচ্ছে? 

সংবাদ সংস্থাগুলো থেকেই জানলাম তোমাকে একে ফরটি সেভেনের এর ভার ছাড়াও  আরো ৮-১০ কিলো সামরিক সরঞ্জামের ওজন বহন করতে হচ্ছে। পরিচিত হোক বা অপরিচিত, আমাদের দেশের যে কোনো সাধারণ মানুষের এই সংবেদনশীলতা আছে যে সন্তানসম্ভবা মহিলার হাত থেকে ভারি ব্যাগ নিয়ে তারা নিজেরা বয়ে দেন। ভারতের নিরাপত্তাবাহিনীর কর্তারা কি ন্যূনতম সংবেদনশীলতাটাও হারিয়েছে? যখন রাষ্ট্রের তোমার প্রতি যত্ন নেওয়া এবং সুরক্ষা দেওয়ার পালা তখন তোমাকেই এই রাষ্ট্রকে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। কেমন রাষ্ট্রকে সুরক্ষা দিচ্ছো তুমি?   ভারত সরকার কি এমনই সুপার পাওয়ার?         

ক্ষমতাশালীদের বিরুদ্ধে শ্রমজীবী নারীদের লড়াই ইতিহাসে নারী দিবসের জন্ম দিয়েছে। তুমি যাদের বিরুদ্ধে বন্দুক ধরেছো তাদের নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারীদিবস পালনের সূচনা করেন। ৮ মাস গর্ভবতী অবস্থায় ভারি বোঝা নিয়ে কমিউনিষ্ট দমনে তোমার ডিউটি পালন করাকে কর্পোরেট মিডিয়া উদযাপন করছে। অথচ এই খবরটা আসলে কর্মস্থলে অমানবিকতার নিদর্শন হতে পারতো। কিন্তু ভারতের মিডিয়ার বড়ো অংশ আজ নির্লজ্জতার চরম সীমায় পৌঁছেছে বা হয়তো নির্বোধ আধা সেনা কর্তৃপক্ষ বা সরকার  মিডিয়া ডেকে এনে এই খবর করিয়েছে। তোমাকে দেখিয়ে নারী দিবস উদযাপন দেখে, সতী তকমা দিয়ে জ্যান্ত বিধবাকে পুড়িয়ে মারার সময় ঢাক ঢোল পিটিয়ে সতীর নামে জয়ধ্বনি দেওয়ার রেওয়াজের কথা মনে পড়লো।                               

আমাদের দেশে সেনা আধিকারিকরা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে মেয়েরা যুদ্ধ করতে পারেনা, তাই সেনা বাহিনীতে নারীদের সেবা মূলক কাজ করতে হবে। এমনকি কোর্টে তারা জানিয়েও দিয়েছে যে কোনো মহিলার কমান্ডে চলা পুরুষ সেনাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ছত্তীসগঢ়ে আছো যখন তখন নিশ্চই অভিজ্ঞতা থেকে  জানো যে মেয়েরা কেমন যুদ্ধ করতে পারে!  বিভিন্ন সংবাদ সংস্থায় বেডিয়েছে যে তুমি যে কমিউনিস্ট গেরিলাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছো তাদের মধ্যে ৪০-৬০% হলেন নারী। এই নারী কমিউনিস্টরা লড়াই করে ঘটুল প্রথা বন্ধ করেছে, বুকে কাপড় রাখার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে, জমিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী তুমি যে মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলে ডিউটি করছো সেখানে কিন্তু তোমার প্রতিপক্ষ কমিউনিস্ট বোনেরা বাল্য বিবাহের হার দেশের মধ্যে সবচেয়ে নীচে নামিয়ে আনতে পেরেছে। তারা সমান্তরাল জনাতানা সরকারে নারীদের ৫০% আসনের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। অন্য দিকে তুমি যেই সরকারকে রক্ষা করতে পেটে সন্তান নিয়ে ডিউটি করছো তারা ১৯৯২ সালে আঞ্চলিক প্রশাসনে ৩৩% আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করতে পারলেও, সংসদে নারীদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষনের বিলটি আজ পর্যন্ত পাস করাতে পারেনি। 

কমিউনিস্টরা দাবি করে তারা বর্তমান ভারত সরকারকে উচ্ছেদ করে এমন সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে যেখানে তোমার সন্তানের দ্বায়িত্ব নেবে সরকার, তোমার আর্থিক সংগতির উপর তোমার সন্তানের শিক্ষার অধিকার নির্ভর করবে না। যেখানে তোমার পেনশন প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা শেয়ার মার্কেটে জুয়া খেলার উপর ছেড়ে দেওয়া হবে না। অবসরের পরে সরকারি দেখভালের সুবিধা পাওয়া তোমার অধিকার হবে। কমিউনিস্টরা বলে তুমি মুনাফাখোর পুঁজিপতিদের হয়ে লড়ছো আর তারা দেশের জন্য লড়ছে। যদি এটা ধরে নেওয়া হয় দু তরফই একটাই দেশের জন্য লড়ছে তাহলে এটা স্পষ্ট যে একই দেশের দুটি ধারণা পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ছে। এবার বলো তুমি তোমার সন্তানকে কী রকম দেশ উপহার দিতে চাও? ভারতে বর্তমান আধা-সামন্ততান্ত্রিক আধা – ঔপনিবেশিক কাঠামো টিকে থাকুক বা ভারত সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হোক, যাই হোক না কেন তোমার সন্তানই আগামী ভারতের নাগরিক। তার সুস্বাস্থ্যের উপর দেশের সুস্বাস্থ্য নির্ভর করছে। নিজের ও সন্তানের যত্ন নিও। 

            -ভাই, সৌম্য মন্ডল   

                                                                                

Share Now:

Comment(1)

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *