সৌম্য মণ্ডল
গত ১৭ জানুয়ারি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হওয়া এনপিআর সংক্রান্ত বৈঠক প্রসঙ্গে প্রাক্তন সাংসদ ও সিপিআই(এম) নেতা মহঃ সেলিম জি ২৪ ঘন্টাকে বলেছিলেন “এনপিআরের বৈঠকে মমতা প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। কোন ফ্লাইটে ওই প্রতিনিধি দিল্লি গিয়েছেন তা বলে দিতে পারব। এখন যখন ধরা হয়েছে তখন বলছেন, ওরা সেনসাসের মিটিং করবে। অথচ অমিত শাহ বলেছেন সেনসাস, এনপিআর মার্জ করা হয়েছে। একই প্রসেস।… লোক পাঠিয়েও অস্বীকার করছেন মমতা। এনপিআর নিয়ে এটা তাঁর স্পষ্ট দ্বিচারিতা”।
১৭ তারিখ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হল যে এনপিআর সংক্রান্ত বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে সত্যি কোনো প্রতিনিধি হাজির হননি। সেলিমের ভুল হতেই পারে। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। তা ছাড়া মমতা ব্যানার্জি এনআরসি/ এনপিআর ঠেকাতে সত্যি কতটা আন্তরিক তা নিয়ে সন্দেহ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু মজার ব্যাপার (অথবা উদ্বেগের ব্যাপার) হল এই যে ওই বৈঠকে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি উপস্থিত হননি, বাকি সমস্ত রাজ্য সরকার প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। সেলিমের দল সিপিআই(এম) পরিচালিত কেরল সরকার কিন্তু তার প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। কংগ্রেস পরিচালিত সরকারগুলোও প্রতিনিধি পাঠিয়েছে! এনপিআর-এর জন্ম কিন্তু নাগরিকপঞ্জি তৈরির জন্যই হয়েছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতেও আছে এনপিআর হল এনআরসির প্রাথমিক পদক্ষেপ।
অন্যদিকে ‘বিশ্ব বাংলা সংবাদ’ নামে একটি ওয়েব পোর্টাল খবর করেছে “তৃণমূল ছাত্রদের ধরনায় আবার এলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার বিকেলে। তখন এক ছাত্রনেতা বক্তৃতা করছিলেন। মমতা বলেন,’আমি তোমাদের খবর নিতে এলাম। যে বক্তৃতা করছিলে করে যাও”। সেই শুনে ছাত্রনেতাটি বক্তৃতা চালাতে গিয়ে বলেন,’ এখন আমরা শ্লোগান দেব। আমি বলব কোনো কাগজ দেব না। আপনারা বলবেন দিচ্ছি না, দেব না।’ এটা শুনেই মমতা বারণ করেন। বক্তাকে ডেকে তিনি কিছু নির্দেশ দেন। তারপর এই ‘কাগজ দেব না’ শ্লোগানটি আর হয়নি। পরে বলা হয় ‘এনআরসি, সিএএ বাতিল করতে হবে।’
আগামী ১এপ্রিল থেকে শুরু হবে এনপিআর-এর কাজ। তাই গত বছরে সারা দেশ জুড়ে রাজ্য সরকারগুলো এনপিআর-এর প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল। পশ্চিমবঙ্গে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর বিক্ষোভও দেখিয়েছিলো এনপিআর প্রশিক্ষণ শিবিরের বাইরে। পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই (এম), কংগ্রেস বা তৃণমুল এনআরসি বা ক্যাবের বিরোধিতায় আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করলেও এনপিআরের কথা মুখে আনছিল না। এই নিয়ে মানবাধিকার কর্মী রণজিৎ সুর সহ অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন। অবশেষে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সিপিএম এনপিআর নিয়ে দু চারটে কথা বলতে শুরু করে। ক্যাব পাস হওয়ার পর গণবিক্ষোভের চাপে প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নোটিশ জারি করে এনপিআর সংক্রান্ত সমস্ত কাজকে স্থগিত করে, আগামী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত। একই পথে হেঁটে কয়েক দিন পরে কেরলের সিপিআইএম সরকারও এনপিআর প্রক্রিয়া স্থগিত করে। তাতে অনেকে আহ্লাদে আত্মহারা হলেন। কিন্তু এই প্রশ্ন তুললেন না যে এনআরসি বিরোধী যোদ্ধারা কেনই বা এনপিআর-এর প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন!
এরপর স্থগিতাদেশের এক মাস কাটতে না কাটতেই পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে এনপিআর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এমন সব প্রশাসনিক চিঠি ফাঁস হতে থাকে। এরপর বিব্রত রাজ্য সরকার এনপিআর সংক্রান্ত নোটিশ জারি করার জন্য তৃণমূল পরিচালিত কামারহাটি পৌরসভার পৌরপিতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু পৌরপিতা জানিয়েছেন জেলাশাসকের লিখিত নির্দেশ পেয়েই তিনি ওই কাজ করেছেন। এরকম একাধিক সরকারি আমলাদের চিঠি ফাঁস হয়েছে।তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা বা শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। এটাও জানা যায়নি কার নির্দেশে আমলারা এনপিআরের প্রস্তুতির নোটিশ পাঠিয়েছিলো! সন্দেহ হচ্ছিলো যে এরকম ঘটনা কেরলেও ঘটছে কিনা? অবশেষে কেরল সরকারের প্রতিনিধি এনপিআর সংক্রান্ত বৈঠকে দিল্লি পৌঁছেই গেলেন! কয়েকদিন আগে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি এনআরসি-সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রস্তাব নিল। কিন্তু এনপিআর রোখার কোনো উদ্যোগ তারা গ্রহণ করছে না। পঞ্জাব সরকার অবশ্য বলেছে, তাদের রাজ্যে পুরনো পদ্ধতিতেই জনগণনা হবে(অর্থাৎ বলতে চেয়েছে এনপিআরের নতুন প্রশ্নগুলো যুক্তত হবে না)।
কেরল, পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব সরকার ঘোষণা করেছে যে তাদের রাজ্যে সিএএ লাগু হবে না। কেরল সরকার বিধানসভায় সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ করিয়েছে। কংগ্রেসের পঞ্জাব সরকারও সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ করিয়েছে। কিন্তু এইসবের কোনো বাস্তব তাৎপর্য বর্তমান লেখকের বোধগম্য হয়নি। ভারতে রাজ্য সরকার নাগরিকত্ব দেয় না। ভারতে আমেরিকার মত দ্বি-নাগরিকত্বও নেই। নাগরিকত্ব একটাই হয়। সেটা কেন্দ্র সরকার প্রদান করে। সিএএ-র অধীনে কেউ নাগরিকত্বের আবেদন করলে রাজ্য সরকার তা কীভাবে আটকাবে, সেটা স্পষ্ট নয়।
এটা বুঝতে হবে যে এনআরসি ধর্ম ভাষা নির্বিশেষে মানুষের নাগরিকত্ব কাড়বে। আর এনআরসি এসেছে ২০০৩ সালের বিজেপি সরকারের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী অনুযায়ী। ২০০৩ সালে বাজপেয়ী সরকার নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫- তে ১৪এ নামে একটি ধারা যুক্ত করে যেখানে সারা ভারতে বাধ্যতামূলক ভাবে নাগরিকপঞ্জি গঠন এবং নাগরিকদের একটি অভিন্ন নাগরিক পরিচয়পত্র দেওয়ার কথা বলা আছে। তা ছাড়া এই নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী বিনা ভিসা পাসপোর্টে ভারতে প্রবেশ করেছে বা ভিসার মেয়াদ শেষের পরেও ভারতে রয়ে গেছে এমন সবাইকে ধর্ম নির্বিশেষে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর তকমা দেওয়া হয়েছে, শুধু তাই নয় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর সন্তানদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর তকমা দেওয়া হয় এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা যাতে কখনো ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতে না পারে তার ব্যবস্থা করা হয়।এই সংশোধনীটি কংগ্রেস, তৃণমুল সহ সমস্ত বিরোধীদের সমর্থনে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। সুতরাং সিএএ ২০১৯ যদি না পাস হত, তবুও এনআরসি হতে কোনো সমস্যা ছিল না। কংগ্রেস, সিপিআইএম, তৃণমুল ‘নো এনআরসি’ বলে চিৎকার করলেও ১৪এ ধারা বিলোপের দাবি কিন্তু কেউ করছে না। কেউ কিন্ত অভিবাসীদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী তকমা দিয়ে অপরাধী বানানোর সংশোধনীগুলোর বিলোপ চাইছে না, যা কিন্তু ইতিমধ্যে কোটি কোটি মানুষকে আইনের চোখে গত ১৬ বছর ধরে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বানিয়ে রেখেছে। ১৪এ বা এনআরসি-র মধ্যে দিয়ে কিন্তু এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের গণহারে চিহ্নিত করা হবে।
মজার বিষয় হলো সিপিআই(এম) সিএএ-র বিরুদ্ধে গলা ফাটালেও ২০১২ সালে দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে সিপিআই(এম) এর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-কে চিঠি লিখে নাগরিক আইনে সংশোধনী এনে বাংলাদেশের উৎপীড়িত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, যারা ভারতে এসেছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি জানান। চিঠিতে তিনি বলেন অর্থনৈতিক কারণে যারা আসছে আর নিপীড়নের কারণে যে সংখ্যালঘুরা আসছেন তাদের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে। যদিও তিনি সেই বিভাজন ধর্মীয় ভিত্তিতে করার কথা বলেননি। কারণ বহু অমুসলমানও অর্থনৈতিক কারণে সীমানা পেরিয়ে ভারতে এসে থাকেন।সুতরাং সিপিআইএম কে সিএএ-র একজন প্রস্তাবক বলা যেতে পারে। তবে এক মাত্র প্রস্তাবক অবশ্যই নয়।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ নিয়ে বিজেপি যে নতুন প্রচার পুস্তিকা বের করেছে তা অর্ধসত্যে পরিপূর্ণ । ‘কিছু বিবৃতি’ শীর্ষক পাতায় পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভারতে নাগরিকত্ব দেওয়ার সমর্থনে ১৯৫০ সালে নেহেরু এবং শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির বিবৃতি, ২০০৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজ্যসভায় মনমোহন সিং-এর বিবৃতি, ২০১২ সালে মনমোহন সিংকে পাঠানো প্রকাশ কারাতের চিঠির বিবৃতি, ২০১২ সালে তরুণ গগৈ-এর স্মারকলিপি, রাজস্থানের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত-এর বিবৃতি এবং ২০০৫ সালে সংসদে অনুপ্রবেশ সমস্যা সংক্রান্ত মমতা ব্যানার্জির বিবৃতির কথা উল্লেখ করেছে। কিন্তু এটা বিজেপি পরিষ্কার করেনি ১৯৫০-এর পর কী এমন হল যে হঠাৎ ২০০৩ থেকে নেতারা বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন? বিজেপি এটা চেপে গেল যে ২০০৩ সালের অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত অভিবাসীকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর তকমা দিয়ে অপরাধী বানিয়েছিল।বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে মূলত হিন্দুরাই তো ভারতে এসে স্থায়ী ভাবে থেকেছেন। ফলে ২০০৩-এর পর এরাই বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হন।
এটা স্পষ্ট ভাবে বুঝতে হবে যে এনআরসি যদি না হয় তবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ২০১৯-এর জন্য একজনও নাগরিকত্ব হারাবে না। এনআরসি যদি না হয় তবু সিএএ ২০১৯-এর কিছু যায় আসে না। এর আওতায় ২০০৩-এর আইনের ফলে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত কিছু নির্দিষ্ট মানুষ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাবার সুযোগ পাবে। পাঠক খেয়াল করুন নির্দিষ্ট কিছু ধর্মের মানুষ নয় নির্দিষ্ট কিছু মানুষের কথা বলছি যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর তকমা থেকে মুক্তি পেয়ে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাবার সুযোগ পাবে। নির্দিষ্ট ধর্ম বললে বোঝাবে ঐ ধর্মগুলোর সমস্ত মানুষ। কিন্তু ঘটনা আদৌ তা নয়। নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান, পাকিস্তান বা বাংলাদেশের যে নাগরিকেরা ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে বিনা ভিসায় ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন বা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ভারতে রয়ে গেছেন তাদের নাগরিকত্বের আবেদন জানাবার অধিকার দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে যৌথ সংসদীয় কমিটি সরকারের কাছে জানতে চায় কেউ ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার এটা সরকার বুঝবে কীভাবে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে যারা ভারতে ঢুকেই সরকারকে ধর্মীয় নিপীড়নের কথা জানিয়েছে তাদেরকেই সিএএ-র আওতায় নাগরিকত্ব পেতে আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে এই সংখ্যাটা ৩১,৩১৩ জন। এর মধ্যে ২৫,৪৪৭ জন হিন্দু, ৫৮০৭ জন শিখ, ক্রিস্টান ৫৫ জন, বৌদ্ধ ২ জন, পার্সি ২ জন।সুতরাং আদৌ এনআরসি-তে বাদ হতে চলা সমস্ত হিন্দু বা অমুসলমানকে সিএএ আবার নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিচ্ছে না। শুধু তাই নয় উল্লিখিত তিন দেশের যে সংখ্যালঘুরা বাস্তবিকই ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত হয়ে ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছে তাদের সবাইকেও সিএএ নাগরিকত্ব দিচ্ছে না।
এনআরসি-র সাথে সিএএ-র কোনো আবশ্যিক সম্পর্ক নেই। এই সম্পর্ক স্থাপন করেছে অমিত শাহ এবং বিজেপির প্রচার টিম। অমিত শাহ যখন বলেন “ক্রোনলজি বুঝুন, আগে সিএএ আসবে তার পর এনআরসি হবে”, তখন তিনি এটা বলেন ধর্মীয় বিভাজন আনার জন্য, এনআরসি বিরোধী আন্দোলন থেকে দেশের ৭৯% হিন্দু বা ৮৬% অমুসমানকে দূরে সরাবার জন্য। যাতে দেশের ভাষা ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে দরকষাকষির ক্ষমতাবিহীন সস্তা মজুর বানাবার কর্মসূচিটাকে হিন্দু মুসলমান সমস্যার মোড়ক দেওয়া যায়। যাতে এনআরসি বিরোধী আন্দোলনটাকে মুসলমানদের আন্দোলন বা তার সাথে কিছু গণতান্ত্রিক ব্যাক্তিবর্গের আন্দোলনে পরিণত করা যায়। যাতে হিন্দুদের কাছে দেশভাগ ও দাঙ্গার এক তরফা বিকৃত ইতিহাস প্রচার করে সমাজের সাম্প্রদায়িকীকরণ করা যায়। যাতে মূল খলনায়ক আদানি আম্বানি বা বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলোকে জনতার ঘৃণা থেকে বাঁচিয়ে হিন্দু মুসলমানকে একে অন্যের শত্রু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। দেখা যাচ্ছে সংসদীয় বিরোধী দলগুলো এই খেলায় সামিল। আর ভুল বুঝে প্রগতিশীল ব্যাক্তিরাও এই খেলায় সামিল হয়ে পড়েছে। দুই পক্ষের প্রচারে এটাই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যে সিএএ-র জন্য এনআরসি-তে দেশের সংখ্যাগুরু হিন্দুর কোনো ক্ষতি হবে না । তাই সারা দেশ জুড়ে এতগুলো বিজেপি বিরোধী সরকার অবলীলায় এনপিআর-এর বৈঠকে গিয়ে হাজির হলো। তাই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে সামগ্রিক ভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিজেপি ধাক্কা খাচ্ছে না। এনআরসি-এনপিআর এবং সিএএ নিয়ে সরকার এবং বিরোধী পক্ষের নির্লজ্জ মিথ্যাচার হাস্যকর জায়গায় নেমে এসেছে।
এখনও সময় আছে, এটা জোরের সাথে প্রতিষ্ঠা করতে হবে যে এনআরসি সব ধর্ম ভাষাভাষীর মানুষের নাগরিকত্ব কাড়বে, আর সিএএ আদতে কাউকে বাঁচাবে না। তাই ধর্ম ভাষা নির্বিশেষে সমস্ত ভারতবাসীকে আগামী ১ এপ্রিল থেকে এনপিআর ঠেকাতেই হবে অন্যের জন্যে তো বটেই, বিশেষত নিজের জন্য। না বুঝে ভুল প্রচার করে আন্দোলনের ক্ষতি করার বিলাসিতা এই মূহূর্তে বহন করা সম্ভব নয়। এনআরসি/এনপিআর দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনমরনের সমস্যা। অবিবেচক দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রচার,আন্দোলনকে ব্যর্থ করলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না।