পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে দেশের তিনটি বাহিনীকে আলাদাই রাখা হয়েছে। সেনা বাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনী। গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলির যাতে কোনো ভূমিকা না থাকে, তা নিশ্চিত করতেই ছিল এই ব্যবস্থা। ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা, কার্যকারিতা নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও প্রতিবেশী দেশগুলির মতো সামরিক অভ্যূত্থান এদেশে কখনও হয়নি, হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দেয়নি। কারণ তিনটি বাহিনীর নেতৃত্ব আলাদা।
পরিস্থিতির বদল হল এবার। বস্তুত, ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের পর সামরিক বিষয়ক একটি কমিটি কেন্দ্রীয় সরকারকে সামগ্রিক ভাবে তিন বাহিনীর তরফে সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি আলাদা পদ তৈরির পরামর্শ দিয়েছিল। সেটি তখন মানা না হলেও গত স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এরকম একটি পদ তৈরির কথা ঘোষণা করেন।
২৪ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনে একটি সামরিক বিষয় সংক্রান্ত দফতর তৈরি করা হয়। সেই বিভাগের প্রধান হবেন ‘প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান’। তার একদিন পরেই সেনা প্রধান বিপিন রাওয়াত এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনে হিংসা নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সমালোচনা করেন। তখনই অনেকে মনে করেছিলেন প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান পদটি পাওয়ার জন্য কেন্দ্রের নির্দেশ পালন করছেন তিনি। তাই হল। রবিবার সামরিক বাহিনীর বিধি পালটে, তিন বাহিনীর প্রধানদের অবসরের বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করা হয়। তিন বাহনীর প্রধান অর্থাৎ ফোর স্টার পাওয়া কোনো অফিসারই এই পদে উঠতে পারবেন। এতদিন তিন বাহিনীর প্রধান পদে তিন বছর বা ৬২ বছর বয়স পর্যন্ত(যেটা আগে শেষ হবে) থাকা যেত। রাওয়াতের সেনা প্রধান পদ থেকে অবসর ৩১ ডিসেম্বর। তাঁর বয়স ৬১। ধরে নেওয়াই যায় আগামি চার বছর ‘প্রতিরক্ষা বাহনীর প্রধান’ পদে থাকবেন তিনি।
কিন্তু এই নতুন পদের কাজ কী?
বলা হচ্ছে, তিন বাহিনীর প্রধান এই ‘প্রতিরক্ষা বাহনীর প্রধান’-এর অধীনস্থ নন। তিনি হলেন ‘সমানদের মধ্যে প্রথম’। বাহনীগুলির প্রয়োজন সম্পর্কে সরকারকে পরামর্শ দেবেন তিনি। পরমাণু সংক্রান্ত বিষয়েও সামরিক পরামর্শদাতা হবেন তিনি। অস্ত্র কেনা, তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় ইত্যাদি নানা বিষয়ে তিনিই হবেন সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান ভূমিকায়। অর্থাৎ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণকে আরও কেন্দ্রীভূত করার লক্ষ্যেই তৈরি করা হয়েছে এই পদ। যা ফ্যাসিবাদের দিকে এগনোর আরও একটি চিহ্ন। কারণ বিকেন্দ্রীকৃত ক্ষমতা ফ্যাসিবাদ প্রয়োগে বাধা হিসেবে কাজ করে। নির্দিষ্ট একটি সাম্রাজ্যবাদের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতেও ক্ষমতার একটিই কেন্দ্র থাকা দরকার। বোঝাই যাচ্ছে ভারতীয় সংবিধান এবং প্রচলিত শাসন পদ্ধতিকে বর্তমান শাসকরা পর্যাপ্ত বলে মনে করছেন না। তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনার সঙ্গে বর্তমান ব্যবস্থাটি খাপ খাচ্ছে না।
যাই হোক, বিজেপির কথা অনুযায়ী চলে, নির্দেশ মেনে পেশাগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করে নিলেন বিপিন রাওয়াত।