Home খবর চাকরি অনিশ্চিত, সপ্তাহ পেরোলেও ক্লাস বয়কট করে আন্দোলনে অনড় রাজ্যের মৎস্য বিজ্ঞান পড়ুয়ারা

চাকরি অনিশ্চিত, সপ্তাহ পেরোলেও ক্লাস বয়কট করে আন্দোলনে অনড় রাজ্যের মৎস্য বিজ্ঞান পড়ুয়ারা

চাকরি অনিশ্চিত, সপ্তাহ পেরোলেও ক্লাস বয়কট করে আন্দোলনে অনড় রাজ্যের মৎস্য বিজ্ঞান পড়ুয়ারা
0

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র মৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ গত ১৭ তারিখ থেকে আন্দোলনের পথে , বন্ধ রয়েছে পঠনপাঠন , গবেষণা ও অনান্য কাজকর্ম । মৎস্য উৎপাদনে শীর্ষে থাকা  পশ্চিমবঙ্গকে পিছনে ফেলে দ্বিগুন এগিয়ে গেছে অন্ধ্র। ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল, এই ১৮ বছরে অন্ধ্রপ্রদেশে মাছের উৎপাদন ৫.৯০ লক্ষ টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪.৫০ লক্ষ টন পৌঁছে গেছে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মৎস্য উৎপাদন ১০.৬০ লক্ষ টন থেকে কোনো রকমে ১৭.৪০ লক্ষ টনে পৌঁছেছে। ওদিকে বিহার, উড়িষ্যা এবং ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলি মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির হারে পশ্চিমবঙ্গকে প্রায় টক্কর দিতে চলেছে। এই সংকটের প্রধান কারণ হলো মৎস্য দপ্তরের দুর্বল পরিকাঠামো।

আরও পড়ুন: এবার এনপিআর ও জনগণনাকে এক করে দিলেন অমিত, মিথ্যাভাষণের অনন্য নজির মোদিশার

বিষয়টি উপলব্ধি করেই ২০১৩ সালে এপ্রিল মাসে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ৬ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং তৎকালীন মুখ্যসচিবকে নিয়ে গঠিত হয় মৎস্য দপ্তর সম্পর্কিত ‘স্পেশাল টাস্কফোর্স অন ফিশারিজ ‘। চলতি বছরের জুলাই মাসে সেই কমিটি রিপোর্ট জমা করে এবং তাতে যে বিষয় গুলির উপর জোর দেওয়া হয় সেগুলি হল- ১. অতি সত্বর মৎস্য দফতরের পুনর্গঠন করা অর্থাৎ “Re-organisation and restructuring of the fisheries department”। ২. মৎস্য দফতরকে কৃষি দফতর এবং প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের সমতুল্য গঠন পরিকাঠামো প্রদান করা। ৩. “Right man in right job” অর্থাৎ যোগ্য স্থানে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োজিত করা।

বাংলার মৎস্য উৎপাদন সংকটে এবং তার নিরাময়ের জন্য টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ থাকা সত্বেও সব কিছুকে অবমাননা করে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্র-ছাত্রী তথা ৪ বছরের প্রফেশনাল বি.এফ.এসসি (Bachelor of Fisheries Science) স্নাতকদের ফিশারি এক্সটেনশন অফিসার (FEO) হিসাবে মৎস্য দফতরে প্রবেশের সুযোগ ৪০ শতাংশ কমিয়ে দিল দফতর নিজেই। যে স্নাতকেরাই একমাত্র পারে মৎস্য বিজ্ঞানের উন্নত প্রযুক্তিকে প্রান্তিক মৎস্য চাষিদের কাছে পৌঁছে দিতে। ফিশারি এক্সটেনশন অফিসারের সেই ৪০ শতাংশ পদ পদোন্নতি দিয়ে ভরিয়ে দেওয়ার নতুন নিয়ম তৈরি হল ২০১৫ সালে। এখন প্রশ্ন পদোন্নতি পাবে কারা, যার উত্তর হলো বৃত্তিমূলক (ভোকেশনাল) শিক্ষায় শিক্ষিত নিম্নপদস্থ ফিশারিজ ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট (FFA) রা। একজন প্যারামেডিকেলের স্নাতক মেডিক্যাল অফিসার হলে যেমন শুনতে লাগবে এখানে এই পদোন্নতির বিষয়টি ঠিক তেমনই। প্রতিবাদে সোচ্চার হয় পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞানের পড়ুয়ারা। দীর্ঘ আন্দোলন করেও মন্ত্রী মহোদয়ের কিছু শুষ্ক আশ্বাস ছাড়া বিশেষ কোন ফল মেলেনি তাদের। অবশেষে ২০১৭ সালে সেই হাস্যকর পদোন্নতিটি দিয়েই ছাড়ল দফতর এবং  ৪০ জন পেলেন সেই সুযোগ। মুখ্যমন্ত্রীর তৈরি করা  ‘স্পেশাল টাস্কফোর্স অন ফিশারিজ’-এর  সুপারিশ কার্যকর করা হল না।

আবারও পথে নামতে হয় মৎস্য বিজ্ঞানের পড়ুয়াদের; চলে দীর্ঘ ২২ দিনের বৃহত্তর অনশন আন্দোলন। অবশেষে মৎস্য মন্ত্রীর লিখিত আশ্বাস মোতাবেক আন্দোলন প্রত্যাহার করে পড়ুয়ারা এবং ওই বছরেই শুরু হয় মৎস্য দফতরের পুনর্গঠনেরর কাজ। কিন্তু আজও তা অসম্পন্ন। দফতরের অগণিত শূন্যপদ এবং পরিকাঠামোগত দুর্বলতা সংকটে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গের মৎস্য উৎপাদন এবং প্রফেশনাল বি.এফ.এস.সি (Bachelor of Fisheries Science) স্নাতকদের ভবিষ্যৎ-কে। তাই এবার সরাসরি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আবারও পথে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞানের পড়ুয়ারা। অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে অনুষদের পঠনপাঠন, গবেষণা এবং প্রশাসনিক কাজকর্ম। মৎস্য দফতরের পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করে বিজ্ঞপ্তি জারি না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *