Home রাজনীতি এবার এনপিআর ও জনগণনাকে এক করে দিলেন অমিত, মিথ্যাভাষণের অনন্য নজির মোদিশার

এবার এনপিআর ও জনগণনাকে এক করে দিলেন অমিত, মিথ্যাভাষণের অনন্য নজির মোদিশার

এবার এনপিআর ও জনগণনাকে এক করে দিলেন অমিত, মিথ্যাভাষণের অনন্য নজির মোদিশার
0

সৌম্য মণ্ডল

টানা তিন দিন ধরে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আবোলতাবোল বিবৃতির এক অনন্য নজির গড়লেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাষ্ট্র নায়কদের মিথ্যা ভাষণ কোনো নতুন বিষয় নয়। তবে এই বারে বোধ হয় মোদি অমিত দুনিয়াতে নতুন রেকর্ড গড়লেন। 

আরও পড়ুন: গণ আন্দোলনের চাপে এনপিআর স্থগিত রেখে মুখ্যমন্ত্রী মেনে নিলেন সেটাই এনআরসি-র প্রথম ধাপ

রবিবার প্রধানমন্ত্রী মোদী দিল্লির একটি সমাবেশে বলেছিলেন, “এনআরসি দেশব্যাপী মোটেই হচ্ছে না। আমি ভারতের ১৩০ কোটি নাগরিককে বলতে চাই যে আমার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০১৪ সাল থেকে এনআরসি নিয়ে কোথাও কোনো আলোচনা হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পরেই এই মহড়াটি অসমে হয়েছিল”। 

ঘটনা হল  অটলবিহারি বাজপেয়ীর বিজেপি সরকার  নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০০৩ নিয়ে আসে। এই বিলে ১৪এ নামে  ‘নাগরিকত্ব আইন  ১৯৫৫’ য়  একটি নতুন  ধারা যুক্ত করা হয়। যেখানে বলা হয় সারা দেশে বাধ্যতামূলক ভাবে  নাগরিকপঞ্জি গঠন করা হবে এবং নাগরিকদের পরিচয় পত্র প্রদান করা হবে।  এই বিলটি শরিক তৃণমূল, বিরোধী কংগ্রেস সহ সমস্ত সাংসদদের ভোটে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়ে আইনে পরিণত হয়। অসমে এনআরসি করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পিছনে এই ১৪এ ধারার ভিত্তি ছিলো।    

দীর্ঘ দিন ধরে বিদেশি অনুপ্রবেশকারী বিতাড়নের ধুয়ো তুলে আসছেন বিজেপি নেতারা। এলাকা বিশেষে ভোট ধরতে কখনও ‘ঘটি’ দের কাছে ‘বাঙাল’ বিতাড়নের হুংকার ছেড়েছেন, কখনো হিন্দুদের কাছে মুসলমান বিতাড়নের হুংকার ছেড়েছেন।  বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে প্রচারে এসে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এনআরসি করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বিতাড়নের হুমকি দিয়ে গেছেন। এর পর অমিত শাহ বার বার সারা দেশে এনআরসি করার হুমকি দিয়েছেন এই কয়দিন আগে পর্যন্ত। এমনকি রাজ্যসভাতেও বলেছেন। অথচ  বেমালুম বলে দিলেন “মিথ্যা কথা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। টিভি সাক্ষাৎকারে কিছু নেতা বলেছেন, যে ভারত জুড়ে এনআরসি করা হবে। তবে আমি বলতে চাই আপনারা কেন এমন কিছুতে নিজের মানসিক শক্তি নষ্ট করছেন, যেটার আসলে কোনো অস্তিত্ব নেই”। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার টাইমস নাও, কুইন্ট সহ একাধিক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এনপিআর আর জনগণনাকে এক বিষয় হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার ৩১ জুলাই ২০১৯ তারিখে গেজেট নোটিফিকেশন জারি করে জানিয়েছে ২০০৩ এর রুল অনুযায়ী  আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৩০  সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  অসম বাদে সারা দেশ জুড়ে এনপিআর হবে।

আবার ২৮ মার্চ ২০১৯-এ গেজেট নোটিফিকেশনে কেন্দ্র সরকার জানিয়েছে সেন্সাস আইন ১৯৪৮ অনুযায়ী ১ মার্চ ২০২১ সাল থেকে সেন্সাস বা জনগণনা শুরু হবে। 

অমিত শাহ দাবি করেছেন এনপিআর নাহলে সরকারি প্রকল্পগুলো রচনা করা সম্ভব নয়। অথচ আমরা দেখেছি ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে  ২০১০ সালে প্রথম এনপিআরের আগে পর্যন্ত ভারত সরকার বহু প্রকল্প চালু করেছে যার জন্য এনপিআরের প্রয়োজন হয়নি।  

অমিত শাহ বলেছেন এনপিআর-এর কোনো তথ্য এনআরসি- তে ব্যবহার করা হবে না এবং এনপিআরের সঙ্গে এনআরসির কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ সরকার তথ্য সংগ্রহ করে বগলদাবা করে বসে থাকবে কিন্তু সেটা কাজে লাগাবে না। এবং আমাদের নাকি এটা বিশ্বাস করতে হবে।   

কেন্দ্রীয় সরকারের ৩১ জুলাই ২০১৯ তারিখের গেজেট নোটিফিকেশনে বা এনপিআর সংক্রান্ত সরকারি ওয়েব সাইটগুলোতে  স্পষ্ট ভাবে লেখা আছে নাগরিক পঞ্জি এবং নাগরিক পরিচয় পত্র প্রস্তত করার জন্যই এনপিআর কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে! তাছাড়া ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেন রিজিজু রাজ্যসভায় স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন এ কথা।

    

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ সাধারণত যে স্বভাবসিদ্ধ জমিদারি ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভঙ্গিতে বিবৃতি দিয়ে থাকেন তার থেকে ১৮০ ডিগ্রি পাল্টি খেয়ে এবার শিশুসুলভ মিথ্যা বলতে শুরু করেছেন। এর কৃতিত্ব অবশ্যই সারা ভারতে বিক্ষোভরত জনতার। কিন্তু এই সব আবোলতাবোল মিথ্যার পিছনে গভীর অভিসন্ধিও কাজ করছে। আসলে নাগরিকপঞ্জি প্রস্তুত করার জন্য এনপিআর করতে হবে। আর এনপিআরের তথ্য জনগণের কাছে গিয়ে সংগ্রহ করতে হবে। জনগণ যদি তথ্য না দেন তবে এনপিআর করা সম্ভব নয়। তাছাড়া সারাদেশে  এনপিআর কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য পর্যাপ্ত কর্মচারী কেন্দ্রের নেই, তাই রাজ্য সরকারের উপর নির্ভর করতে হবে। এই দিকে মমতা ব্যানার্জি লাগাতার এনআরসি-র্ বিরুদ্ধে গলা ফাটালেও রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের  এনপিআরের যে  প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন তা গণবিক্ষোভের চাপে মাত্র কয়েকদিন আগে সরকারি নোটিশ জারি করে আপাতত স্থগিত করতে বাধ্য হন (যদিও পুরোপুরি বন্ধ করার কথা বলা হয়নি)।  এর পর কেরলের মুখ্যমন্ত্রীও এনপিআর স্থগিত বলে ঘোষণা করলেন। এর পর হয়তো অন্যান্য অ-বিজেপি রাজ্যগুলোও এনপিআরr স্থগিত করার কথা ঘোষণা করবে। ফলত  ভুল বুঝিয়ে কোনো ভাবে এনপিআর কর্মসূচি সফল করাই এখন  কেন্দ্রের লক্ষ্য। একবার এনপিআর সফল হলে তখন আর কিছু করার থাকবে না।  দিল্লিতে ঠান্ডা ঘরে বসেই মানুষকে বেনাগরিক  করা যাবে। 

একদিকে দেশে এনআরসি বিরোধী  গণ বিক্ষোভের চাপ অন্য দিকে দেশি বিদেশি বৃহৎ পুজিপতিদের সস্তা শ্রমিক সংগ্রহের স্বার্থে এনআরসি কর্মসূচি রূপায়ণের চাপ। এই দুই চাপে পড়ে সুর নরম করে নির্লজ্জ মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে নিজেদের হাসির খোরাকে পরিণত করেছে দোর্দণ্ডপ্রতাপ মোদি-অমিত জুটি। ব্যাপারটা উপভোগ করা যেতেই পারে কিন্তু মাথায় রাখতে হবে এনআরসি ঠেকাতে আগামী ১ এপ্রিল থেকে এনপিআর-কে রুখতেই হবে।                                                                               

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *